প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মোর্চা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) সম্মেলন।
২০২৩ সালের ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় হতে যাওয়া এই সম্মেলনে মোর্চাটির এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটি এবং ইউরোপিয়ান রিজিওনাল কমিটি অংশ নেবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘আইওএসকো মিটিংয়ে আমরা প্রপোজ করেছিলাম। গতকাল আমাদের জানিয়েছে, এ রকম একটা সম্ভাবনা আছে। তারা ফেব্রুয়ারি মাসে করতে চায়। আমরা সম্মতি দিয়ে দিয়েছি।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএসইসি বাংলাদেশকে যেভাবে ব্র্যান্ডিং করেছে, এই সম্মেলন তারই সুফল বলে দাবি করেন অধ্যাপক শিবলী।
তিনি বলেন, ‘বিএসইসির বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে ব্র্যান্ডিংয়ের কারণেই এই সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং যে হচ্ছে এটা তার প্রমাণ। এ থেকে বোঝা যায়, তারা বাংলাদেশকে এ রকম একটা সম্মেলনের আয়োজন করার মতো প্রস্তুত বা ভালো দেশ মনে করছে। বিগত সময়ে কখনও এমন হয়েছে? এটা তো হতোই না।
‘আমরা আমাদের কথাবার্তা, প্রেজেন্টশন, কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং, এ ছাড়া বক্তৃতার মধ্যে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেছি। কুয়াকাটা, সুন্দরবন সম্পর্কে বলেছি। ওরা এখন বাংলাদেশ দেখতে চায়। এটা কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং ছাড়া সম্ভব হতো না।’
পাঁচ দিনব্যাপী ওই সম্মেলনে কী কর্মসূচি থাকবে তা এখনও চূড়ান্ত নয়। এ ব্যাপারে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। ওরা করবে সবকিছু। আমরা শুধু জায়গাটা দেব, ভেন্যু কোনটা হবে সেটা ঠিক করে দেব।’
এই সম্মেলনের ফলে দেশের মর্যাদা আরও বাড়বে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারে বাংলাদেশের সুনাম ও ভাবমূর্তি আরও বাড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
আইওএসকো কী?
ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনস বা আইওএসকো প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮১ সালে। এর প্রধান কার্যালয় স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে।
সংস্থাটির প্রধান কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, ক্যাপাসিটি বাড়ানো, আন্তর্জাতিক মান প্রণয়ন, মনিটরিং ইত্যাদি।
সংস্থাটির চারটি আঞ্চলিক কমিটি রয়েছে। এগুলো হলো আফ্রিকা/মিডিল-ইস্ট রিজিওনাল কমিটি, এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটি, ইউরোপিয়ান রিজিওনাল কমিটি ও ইন্টার-আমেরিকান রিজিওনাল কমিটি।
এর মধ্যে এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটি বা এপিআরসির সদস্য বাংলাদেশ। এ ছাড়াও ভারত, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের ২১টি দেশ এই আঞ্চলিক কমিটির সদস্য।
অর্ডিনারি, অ্যাসোসিয়েট ও অ্যাফিলিয়েট– এই তিন ক্যাটাগরিতে সংস্থাটির সদস্যপদ দেয়া হয়। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ২৩৩।
বাংলাদেশের অর্জন
২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর আইওএসকোর মানদণ্ডের ভিত্তিতে দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ‘বি’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়। এ জন্য এমওইউ স্বাক্ষরকারী হওয়ার জন্য বিএসইসির আবেদন অনুমোদন করেছে আইওএসসিও।
এতে দেশের পুঁজিবাজার অনন্য এক উচ্চতায় পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিকভাবে এনফোর্সমেন্টের সহযোগিতা পাওয়া ও দেয়া, আইওএসকোর বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় পদে নিয়োগ ও নির্বাচনের সুযোগ লাভ এবং আইওএসকোর নীতিনির্ধারণী কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির যোগ্যতা অর্জন করে বিএসইসি।
বর্তমান কমিশনের ভূমিকা
চলতি বছরের ২৪ জুলাই ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ের মাধ্যমে চীনকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রাবাইয়াত-উল ইসলাম আইওএসকোর এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল কমিটির (এপিআরসি) ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। তিনি ২০২৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এ ধরনের অর্জন প্রথম।
চলতি মাসেই মরক্কোয় অনুষ্ঠিত আইওএসকোর বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) যোগ দিয়ে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সভায় আইওএসসিওর সঙ্গে বিএসইসির মাল্টিল্যাটারাল মেমোর্যান্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং ফর সুপারভাইসরি কো-অপারেশন (এপিআরসি সুপারভাইসরি এমএমওইউ) শীর্ষক সমঝোতা হয়।
বহুপাক্ষিক সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সভায় বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম ঢাকায় আইওএসকোর আঞ্চলিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব করেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রাথমিকভাবে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত এলো।