বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রিজার্ভ থেকে ডলার পাবে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো

  •    
  • ৩১ অক্টোবর, ২০২২ ২৩:৪৩

বৈঠকে হোয়াইট কলার ওয়েজ আর্নার অর্থাৎ বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের পেশায় কর্মরত প্রবাসীদের ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সে ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা দাম দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। এত দিন তারা রেমিট্যান্স পাঠালে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা পেতেন।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে রিজার্ভ থেকে ডলার সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলোকে নিজেদের উদ্যোগেই ডলার সংগ্রহ করে পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে বলেছে দেশের ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি।

এত দিন ব্যাংকগুলো ঋণপত্র বা এলসি খোলার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার সহায়তা নিত।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বৈঠকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে এ কথা সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে সভায় উপস্থিত একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন।

এছাড়া বৈঠকে হোয়াইট কলার ওয়েজ আর্নার অর্থাৎ বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের পেশায় কর্মরত প্রবাসীদের (চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ব্যাংকার, নার্সসহ উচ্চ আয়ের পেশাজীবী) ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠানো রেমিট্যান্সে ডলারপ্রতি ১০৭ টাকা দাম দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। এত দিন তারা রেমিট্যান্স পাঠালে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা পেতেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বৈঠকটি ছিল ব্যাংকারদের সঙ্গে। আলোচনা সম্পর্কে কিছু বলতে হলে তাদের সঙ্গে কথা বলে পরদিন জানাতে হবে।’

সভায় উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের এলসি মূল্য পরিশোধের জন্য ডলার সহায়তা চাওয়া হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। রিজার্ভের অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।

পরে ব্যাংকাররা কারেন্সি সোয়াপের মাধ্যমে রিজার্ভ থেকে ডলার নেয়ার প্রস্তাব করেন। ব্যাংকগুলো বলেছে, তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকা জমা রেখে ডলার নিতে চায়। এতে বাজারে ডলার সংকট কিছুটা হলেও কাটবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রস্তাবও নাকচ করে দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে রিজার্ভ থেকে ডলার সাপোর্ট পাওয়ার কোনো আশা নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কোনো ডলার দিতে পারবে না। ব্যাংকগুলো নিজেরাই নিজেদের এলসি মূল্য পরিশোধের জন্য ডলারের ব্যবস্থা করবে।’

তিনি মনে করেন, ব্যাংকগুলো এ অবস্থা সামলে নিতে পারবে। আগামী দুই মাস ডলারের ওপর চাপ থাকতে পারে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।

এ প্রসঙ্গে এবিবি চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারি ব্যাংকগুলোকে আগের মতো রিজার্ভ থেকে ডলার দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত সার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের জন্য ডলার সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এসব এলসির বড় অংশই সরকারি ব্যাংকগুলোতে খোলা হয় বলে মূলত এই সহায়তা এসব ব্যাংকই পাচ্ছে। এটি চলমান থাকবে।

এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের এক্সচেঞ্জ হাউস বিদেশে খোলার জন্য সহজ করে দিয়েছে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য মার্কেটিং ইফোর্ট যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর আরোপ করা ফি করে দেয়া যায় কিনা, সেটা নিয়েও আলাপ হয়েছে।’

দেশের বাইরে থাকা চিকিৎসক, প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন ভালো পেশায় কর্মরতরা এক্সচেঞ্জ হাউসের পরিবর্তে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর কারণে ডলারের বিনিময়মূল্য কম পেতেন। রপ্তানি বিলের বিনিময়মূল্যের মতো ডলারে ৯৯ টাকা ৫০ পয়সা পেতেন তারা। অন্যদিকে এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে যারা টাকা পাঠান তারা ডলারের বিনিময়মূল্য পান ১০৭ টাকা। এখন থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সের ডলারের জন্য তারা অন্যদের মতো সমান বিনিময়মূল্য পাবেন বলে জানান এবিবি চেয়ারম্যান।

সেলিম আর এফ হোসেন মনে করেন, জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডলার পেমেন্টের কিছুটা চাপ থাকতে পারে। এরপর থেকে এটি কমে যাবে। তাই ডলারের রেট এখনই বদলানোর কোনো চিন্তা নেই।

তিনি বলেন, ‘দেশে রেমিট্যান্স আসা বাড়াতে হবে। সেজন্য প্রবাসীদের সচেতন করতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়াতে সভায় বিভিন্ন প্রডাক্টের কনসেপ্ট নিয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রবাসীদের জন্য পেনশনের মতো কোনো ফান্ডও তৈরি করা যায় কি না, এটা নিয়েও আমরা ভাবছি।’

রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বিলে ডলারের বিনিময়মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে কোনো কথা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা আছে ধীরে ধীরে আমরা এই দুটি রেটের ব্যবধান কমিয়ে নিয়ে আসব। যখন রেট দুটি প্রথমবার ঘোষণা করা হয়েছিল, সে তুলনায় কিন্তু এখন এই দুটি রেটের ব্যবধান কমে এসেছে। এই ব্যবধান তো আর এক ধাক্কায় কমিয়ে ফেলা যায় না, ধাপে ধাপে কমাতে হবে। আগামী ৩ থেকে ৬ মাসের মধ্যে এই দুটি রেটই এক রকম করে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগুচ্ছি।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল ও কাজী ছাইদুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকগুলোর পক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরের মধ্যে সোমবার হঠাৎ করেই এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এ বিভাগের আরো খবর