উৎপাদনে ফেরার পর বন্ধ থাকা চার বছরের চেয়ে বেশি লোকসান দেয়া পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিভিও পেট্রোকেমিক্যালসের লোকসান বেড়েছে এবং তারা এবার লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ এক বছর আগে উৎপাদন শুরুর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শেয়ারদরে হুলুস্থুল হয়েছিল।
গত ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে শনিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটি ২০২১ সালের জুলাই থেকৈ গত জুন পর্যন্ত শেয়ার প্রতি লোকসান দিয়েছে ২ টাকা ৬৩ পয়সা। আগের বছর এই লোকসান ছিল ২ টাকা ৪৯ পয়সা। তবু তারা ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করে। এই শেয়ার সমন্বয়ের পর পুনর্মূল্যানকৃত লোকসান দাঁড়ায় ২ টাকা ২৭ পয়সা।
২০১৭ সাল থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন চার বছর বন্ধ ছিল। তবে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি, যা গত বছর উৎপাদনে ফেরার ঘোষণার পর আরও বাড়ে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা আসে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গে ন্যাপথা ক্রয় ও বিক্রয়ের চুক্তি করেছে সিভিও। চুক্তি অনুযায়ী ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে কাঁচামাল হিসেবে ন্যাপথা সংগ্রহ করবে। এটি পরিশোধনের মাধ্যমে উন্নতমানের সলভেন্ট উৎপাদন করবে।
এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে কোম্পানিটির শেয়ারদরে উল্লম্ফন হয়। ২০২০ সালে করোনার প্রাদুর্ভাবের সময় দেয়া ফ্লোর প্রাইস তুলে দেয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ারদর ১১৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে ৮২ টাকায় নেমে আসে। কিন্তু এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে এক পর্যায়ে তা ২৭২ টাকায় উঠে যায়।
কিন্তু পরে দেখা যায় কোম্পানিটি প্রতি প্রান্তিকে লোকসান দিচ্ছে। প্রথম প্রান্তিকে শেয়ার প্রতি ৫৭ পয়সা, দ্বিতীয় প্রান্তিকে ৬৪ পয়সা এবং তৃতীয় প্রান্তিকে ৫৯ পয়সা মিলিয়ে তিন প্রান্তিকে লোকসান দাঁড়ায় ১ টাকা ৭৫ পয়সা।
তবে চতুর্থ প্রান্তিকে ভালো ব্যবসার গুঞ্জনে দ্বিতীয়বার ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর শেয়ারদর বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন মূল্য ১৬৩ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে ১৮০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। পরে অবশ্য দর কমে আবার ফ্লোরে চলে আসে।
কোম্পানিটির গত চার বছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উৎপাদন বন্ধ থাকা অবস্থায় তাদের আর্থিক পরিস্থিতি উৎপাদনে ফেরার পরের তুলনায় ভালেঅ ছিল। ২০১৮ সালে শেয়ার প্রতি ২৬ পয়সা, পরের বছল ১২ পয়সা আয় করে।
২০২০ সালে শেয়ার প্রতি ৫১ পয়সা লোকসান দেয় কোম্পনিটি। পরের বছর লোকসান বেড়ে হয় প্রায় পাঁচ গুণ।
টানা তৃতীয় বছর লোকসান দেয়ার পর কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদও কমে গেছে। গত জুন শেষে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ৭ টাকা ৭৪ পয়সা সম্পদ দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগে শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ ছিল ১০ টাকা ৫০ পয়সা।
কোম্পানিটির লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ হয়েছে আগামী ২৪ নভেম্বর। আর এই লভ্যাংশ চূড়ান্ত করতে বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে আগামী ২৬ ডিসেম্বর।
গত এক বছরের কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৫৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে ২৪৩ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত উঠানামা করেছে।