বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওয়েস্টার্ন মেরিন ঠকিয়েছে আইসিবিকেও

  •    
  • ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ১১:৫৫

পর পর দুই বছর নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের তা দেয়নি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। আইসিবির চারটি পোর্টফোলিও থেকে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তাতে তাদের লভ্যাংশ বাবদ ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯১৪ টাকা ৬০ পয়সা পাওনা হয়েছে। এই টাকা না পেয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করার পর ওয়েস্টার্ন মেরিন প্রথমে টাকা দেবে জানালেও পরে বলেছে, ব্যাংক হিসাবে টাকা নেই। এটি দেয়া যাবে না।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ কোম্পানি ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অফ বাংলাদেশ বা আইসিবিকেও ঠকিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড।

২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরে ১ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা আর বিনিয়োগকারীদের মাঝে বিতরণ করেনি কোম্পানিটি। আইসিবিকেও দেয়া হয়নি সেই লভ্যাংশ।

কয়েক দফা চেষ্টার পর লভ্যাংশ না পেয়ে ২৩ অক্টোবর ওয়েস্টার্ন মেরিনের কোম্পানি সচিবকে চিঠি দিয়েছে আইসিবি। বিষয়টি জানানো হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকেও।

কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশ অনুমোদনের জন্য বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম ছিল ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী এজিএমের ৩০ দিনের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পরিশোধ করেনি কোম্পানি। তার আগের বছরেও একই কাণ্ড করেছে কোম্পানি।

আইসিবির চিঠিতে থেকে জানা গেছে, সংস্থাটির চারটি পোর্টফোলিও থেকে যে বিনিয়োগ করা হয়েছে, তাতে ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছ থেকে লভ্যাংশ বাবদ মোট ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯১৪ টাকা ৬০ পয়সা পাওনা হয়েছে।

২০ শতাংশ বা ২ লাখ ৮৬ হাজার ৬২৩ টাকা ৬২ পয়সা উৎসে কর বাদ দিয়ে আইসিবির পাওনা দাঁড়ায় ১২ লাখ ৯৮ হাজার ২৯০ টাকা ৯৮ পয়সা।

এর বাইরে আইসিবির প্রধান কার্যালয়ের বিনিয়োগ হিসাবধারীদের বিনিয়োগ হিসাবে ধারণকৃত শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ বাবদ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা ৪০ পয়সা পাওয়া যাবে বলে জানায় সংস্থাটি।

আইসিবির চিঠিতে বলা হয়, লভ্যাংশ পাওনার বিষয়টি জানিয়ে চলতি বছরের ২১ আগস্ট ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কোম্পানি সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়। টেলিফোনেও অনেকবার যোগাযোগ করা হয়।

কোম্পানি সচিব প্রতিবারই লভ্যাংশ বাবদ প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করবেন বলে আশ্বস্ত করলেও পরে আর করেননি। ১৮ সেপ্টেম্বরে আরও একটি চিঠি পাঠানো হয়। সেদিন মোবাইল নম্বরে কল দিলেও রিসিভ করেননি কোম্পানি সচিব।

এই অবস্থায় ২৮ সেপ্টেম্বরে কোম্পানির ঠিকানায় আইসিবির চট্টগ্রাম শাখা থেকে একজন প্রতিনিধি পাঠানো হয়। ওই প্রতিনিধিকে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা নেই, তাই ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আপনারা প্রয়োজনে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে জানাতে পারেন।’

এমন পরিস্থিতিতে লভ্যাংশ বাবদ প্রাপ্য অর্থ জরুরি ভিত্তিতে পরিশোধ করার জন্য পুনরায় অনুরোধ জানিয়ে আইসিবি বলে, অন্যথায় বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এই অভিযোগ নিয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ওয়েবসাইট ও ডিএসইতে দেয়া নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি জানতে আইসিবির সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের দাপ্তরিক নম্বরে ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে জানা নেই। কমিশনার স্যার বা এসআরএমআইসি ডিপার্টমেন্ট বলতে পারবে হয়তো।’

কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের নম্বরে ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। আর এসআরএমআইসি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানের নম্বরে ফোন করলে তা বারবার ব্যস্ত দেখায়।

আগের বছর একই চিত্র

২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ৩ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ নগদ ও বাকি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার। অর্থাৎ প্রতি ২০০ শেয়ারের বিপরীতে পাঁচটি বোনাস শেয়ার ও ১০ পয়সা নগদ বিতরণ করা হয়।

ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর এজিএমে সেই লভ্যাংশ অনুমোদনও হয়। কিন্তু সে বছরও লভ্যাংশ বিতরণ করে কোনো প্রতিবেদন দেয়া হয়নি।

পরিচালনা পর্ষদ লভ্যাংশ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর দিন শেয়ারদর ছিল ১১ টাকা ৫০ পয়সা। পরের বছর ৫ আগস্ট দর বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ টাকা।

কোম্পানিটি ২০২১ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর এখন পর্যন্ত কোনো প্রান্তিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি। অথচ এরই মধ্যে আরও একটি অর্থবছর শেষ হয়ে গেছে। জুনে যেসব কোম্পানির অর্থবছর শেষ হয়, সেগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কোম্পানি তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে লভ্যাংশও ঘোষণা করেছে, হাতে গোনা এক-দুটি বাদ দিয়ে বাকিগুলো মার্চে সমাপ্ত তৃতীয় প্রান্তিকের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কয়েক মাস আগেই।

গত মাসে বিএসইসিতে পাঠানো ডিএসইর চিঠিতে বলা হয়, ডিএসইর ২০১৫ সালের রেগুলেশনস অনুযায়ী তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসিতে লভ্যাংশ প্রদান সংক্রান্ত প্রতিবেদন সাত দিনের মধ্যে কমিশন নির্ধারিত ফরম্যাটে জমা দিতে হবে।

এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই কোম্পানিকে কমিশনের অনুমোদনক্রমে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে স্থানান্তর করার বিধান রয়েছে। কিন্তু ওয়েস্টার্ন মেরিন দুই বছর ধরে ডিভিডেন্ড কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা না দেয়ার পরও তাদের ‘ক্যাটাগরি’ সমন্বয় হয়নি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়েস্টার্ন শিপইয়ার্ডের অনুমোদিত মূলধন ৬০০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৩৫ কোটি ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এর বিপরীতে রিজার্ভ রয়েছে ২৬১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ২৩ কোটি ৫২ লাখ ৩ হাজার ৭৬৯টি। এর মধ্যে ৩০ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও বাকি ৫৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর