চলতি বছরজুড়ে জ্বালানির দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্থরগতির কারণে আগামী বছরে এর দাম বেশ খানিকটা কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
সংস্থাটি বলছে, চলতি ২০২২ সাল শেষে জ্বালানির দাম শেষ পর্যন্ত ৬০ শতাংশ বাড়বে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে করোনা মহামারির কারণে চলমান লকডাউনের প্রভাবে জ্বালানির চাহিদা কমায় ২০২৩ সালে এর দাম ১১ শতাংশ কমে আসবে।
বিশ্বব্যাংকের সবশেষ ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক’ প্রতিবেদনে এ পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটনভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থাটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর এই বছরে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির পরে ২০২৩ সালে জ্বালানির দাম ১১ শতাংশ হ্রাস পাবে। মন্দার আশঙ্কায় ধীর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি এবং চীনে কোভিড বিধিনিষেধের কারণে এই দাম আরও কমতে পারে।
প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে ব্রেন্ট ক্রুড জ্বালানি তেলের গড় দাম প্রতি ব্যারেল ৯২ ডলার অনুমান করা হয়েছে। ২০২৪ সালে তা আরও কমে প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারে নেমে আসতে পারে। কিন্তু এই দর গত পাঁচ বছরের গড় ৬০ ডলার থেকে অনেক বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার তেল এবং গ্যাস পণ্যের উপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল রপ্তানি প্রতিদিন ২ মিলিয়ন ব্যারেল কম হতে পারে, যা ৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে।
প্রতিবেদনে বিশ্ব্যাপী আমেরিকান মুদা ডলারের অস্বাভাবিক উত্থানের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে, ‘শক্তিশালী ডলার এবং বেশিরভাগ উন্নয়নশীল অর্থনীতির মুদ্রার সঙ্কুচিত মূল্য খাদ্য ও জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিশ্বের ২০ কোটি মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’
বিশ্বব্যাংকের প্রসপেক্টস গ্রুপের ডিরেক্টর এবং ইএফআই চিফ ইকোনমিস্ট আয়হান কোস বলেছেন, ‘উচ্চ পণ্যের দাম এবং ক্রমাগত মুদ্রার অবমূল্যায়নে অনেক দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয় ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে শক্তিশালীহতেত থাকে আমেরিকান মুদ্রা ডলার; দুর্বল হতে থাকে সব দেশের স্থানীয় মুদ্রার মান।
‘মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে তেল আমদানিকারী উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোকে তেল কিনতে প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করতে হয়েছে। একই কারণে গমের পেছনে ৯০ শতাংশ অর্থ বেশি খরচ করতে হয়েছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০২২ সালের প্রথম তিন ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি গড়ে ২০ শতাংশ বেড়েছে। লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা, সাবসাহারান আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়াসহ অন্যান্য অঞ্চলে খাদ্যের গড় মূল্য মূল্যস্ফীতি ১২ থেকে ১৫ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লা উভয়ের দামই ২০২২ সালের রেকর্ড উচ্চ থেকে ২০২৩ সালে হ্রাস পাবে বলে অনুমান করা হয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়ান কয়লা এবং আমেরিকান প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমবে না; উল্টো বাড়তে পারে। একই অবস্থা হতে পারে ইউরোপীয় প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে।’