বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ইউরোপের বাজারে তালিকাভুক্ত করতে আলোচনা এগিয়েছে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম।
শিবলী নিউজবাংলাকে বলেছেন, ‘ইউরোপের কোম্পানিগুলো এখন খারাপ করছে। বিনিয়োগকারীদের ভালো মুনাফা দিতে পারছে না। তারা চাচ্ছে বাংলাদেশে ভালো করা কোম্পানিগুলো যেন ইউরোপের পুঁজিবাজারে এসে তালিকাভুক্ত হয়। আর এই ডুয়েল লিস্টিং নিয়ে আমাদের আলোচনা অনেকটুকু এগিয়ে গেছে। আমাদের ভালো কোম্পানিগুলো তাদের বাজারেও তালিকাভুক্ত হবে। আর তাদের ভালো কোম্পানিগুলো আমাদের বাজারে তালিকাভুক্ত হবে।’
ডুয়েল লিস্টিং মানে হচ্ছে একটি শেয়ার দুটো স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত হওয়া। ডুয়েল লিস্টিং এক দেশেই দুটো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হওয়াকে যেমন বোঝায়। আবার একটি কোম্পানি পৃথিবীর দুটি আলাদা দেশের স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হলেও তাকে ডুয়েল লিস্টিং বলা হয়।
ডুয়েল লিস্টিং হলে কোম্পানির মূলধন সংগ্রহের সুবিধা বাড়ে। চাইলে দুটি দেশ থেকে টাকা সংগ্রহ করা যায়। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর শেয়ারে তারল্য বেড়ে যায়। একটি কোম্পানি দুটি দেশে তালিকাভুক্ত হলে কোম্পানিটির সুনাম বাড়ে।
বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর দুই দেশে তালিকাভুক্তি খুব দরকারি। বিশেষ করে দেশের ভালো কোম্পানিগুলো যদি আমেরিকান স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হতে পারে, তাহলে বেশি ভালো হয়।
তিনি মনে করেন, বিদেশিরা যে পদ্ধতিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে সেটা বিনিয়োগকারীদের জন্য যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, আবার বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের জন্যও ঝূঁকিপূর্ণ। কারণ যখন ডলারের বিপরীতে টাকার মান যখন কমে যায়, তখন বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের মূল্য কমে যায়। তাই টাকার দাম কমতে থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দেশের পূজিবাজারে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বের হয়ে যায়। যদি কোম্পানিগুলো দেশের বাইরে তালিকাভুক্ত থাকত, তাহলে বিনিয়োগকারীরা এই ঝুঁকির মধ্যে পড়ত না।
মিজানুর বলেন, ‘দুই দেশে তালিকাভুক্ত হলে বাংলাদেশি এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার আগের চেয়ে বেশি সময় ধরে লেনদেন হওয়ার সুযোগ পাবে। এ ছাড়া দেশি কোম্পানিগুলো যদি দেশের বাইরে যায়, তারা কম খরচে মূলধন পাবে, তাদের স্বচ্ছতা বাড়বে। কোম্পানিগুলোকে সেই সুযোগ দিলে দেশের কোনো ক্ষতি হবে না।
‘এখন কিন্তু অনেক দেশি কোম্পানি বাইরে থেকে ঋণ নিচ্ছে। যারা ঋণ নিচ্ছে তাদের কিন্তু বিনিময়হারের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। এর চেয়ে তাদের যদি ডুয়েল লিস্টিংয়ের সুবিধা দেয়া হয়, তাহলে তারা কম ঝুঁকিতে টাকা সংগ্রহ করতে পারত।’
বিএসইসি চেয়ারম্যান বর্তমানে গ্রিসে অবস্থান করছেন। সোমবার তিনি দেশটির পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন।
১৭ থেকে ২০ অক্টোবর ২০২২ মরক্কোর মারাকেশে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসকো) ৪৭তম বার্ষিক সভায় অংশ নেন তিনি। দেশে ফেরার পথে গ্রিসের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের সঙ্গে দেখা করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশ ও গ্রিসের পুঁজিবাজারের মধ্যে ‘ডুয়েল লিস্টং’ এবং ‘ক্রসবর্ডার ট্রানজেকশন’ নিয়ে আলোচনা হয়। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের যেসব উচ্চ মূলধনি কোম্পানি আছে, তাদের জন্য গ্রিসের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। অন্যদিকে গ্রিসের বড় বড় কোম্পানির বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
বৈঠকে এই দুই দেশের পুঁজিবাজারে পারস্পরিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি, আইনকানুন প্রণয়ন, পুঁজিবাজারে কর্মরত লোকবলের দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ, পুঁজিবাজারে নতুন পণ্য এবং সেবা প্রণয়ন নিয়েও আলোচনা হয়। দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের বিষয়েও কথা হয়।