পুঁজিবাজারে খাদ্য খাতে তালিকাভুক্ত জেমিনি সি ফুডের শেয়ার নিয়ে কারসাজি হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রকিবুর রহমান ও সহকারী পরিচালক ফয়সাল ইসলাম।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি মঙ্গলবার এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে তদন্ত কমিটিকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেছে।
বিএসইসির এই নির্দেশনা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং জেমিনির কাছে পাঠানো হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সম্প্রতি জেমিনি সি ফুডের শেয়ারে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। তাই এর পেছনের করাণ খুঁজে বের করতেই তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
বিএসইসি বলেছে, জেমিনি সি ফুডের নিরীক্ষিত ও অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন খতিয়ে দেখতে হবে। এই কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কোনো কারসাজি হয়েছে কিনা তা-ও দেখবে কমিটি। এছাড়া কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্কিত কেউ এই শেয়ার লেনদেন করে লাভবান হয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
এই কোম্পানি নিয়ে অন্য কোনো ধরনের প্রতারণামূলক কিছু হয়েছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।
জেমিনি সি ফুডের শেয়ার মাত্র ১১ কার্যদিবসে ৪৯ শতাংশ বেড়েছিল। চলতি মাসের ২ তারিখে এই শেয়ারের দাম ছিল ৩৯৮ টাকা ১০ পয়সা। ১৯ তারিখে হয় ৫৯৩ টাকা ৪০ পয়সা। ১১ দিনের লেনদেনে ১৯৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ৪৯ শতাংশ বাড়ে শেয়ারটির দাম।
আবার চলতি মাসের ২ তারিখ থেকে হঠাৎ বাড়তে থাকে লেনদেন। ২ তারিখে লেনদেন ছিল ৬০ হাজার ২৪৯টি। ১৯ তারিখে লেনদেন হয় ৩ লাখ ১৭ হাজার ১৮৭টি। ২০ তারিখে লেনদেন হয় ৬ লাখ ২৭ হাজার ৬২৬টি শেয়ার। আর ২০ তারিখে শেয়ারটির দাম কমে যায় ৮৪ টাকার মতো। সবশেষ মঙ্গলবার জেমিনি সি ফুডের শেয়ারের সমাপনী দাম ছিল ৪৫৭ টাকা ৮০ পয়সা।
এভাবে হঠাৎ করে শেয়ারের লেনদেন বেশ বেড়ে যাওয়া, দাম বৃদ্ধি আবার ধপাস করে দাম ও লেনদেন কমে যাওয়া নিয়ে সন্দেহ হয়েছে বিএসইসির। আর এসবের পেছনে কোনো কারসাজি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ কোম্পানির শেয়ার বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ‘বি’ ক্যাটাগরিতে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে জেমিনি সি ফুড ১৬ লাখ টাকা মুনাফা করে; লভ্যাংশ দেয় প্রতি ১০০ শেয়ারে ১০টি নতুন শেয়ার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লোকসান হয় ৪ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কোনো লভ্যাংশ ছিল না। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে মুনাফা হয় ৩৪ লাখ টাকা। লভ্যাংশ দেয়া হয় প্রতি শেয়ারে ৫০ পয়সা।
পুঁজিবাজারে এ কোম্পানির ৪৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩১২টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ রয়েছে পরিচালকদের হাতে।
বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ, বিদেশিদের হাতে আছে দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।
জেমিনি সি ফুড লিমিটেডের বর্তমান বাজার মূলধন ২১৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।