বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ডিএসইতে লেনদেনে বারবার সমস্যা কেন

  •    
  • ২৪ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৫১

আইটি বিশেষজ্ঞ ডিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে জানান, এটা কোনোভাবেই হতে পারে না যে, হুট করে এভাবে সার্ভার ডাউন হয়ে যাবে। এখানে অন্য কিছু আছে। এটা সফটওয়্যারজনিত কোনো কারণে হয়নি। মনে হয় হয়েছে হার্ডওয়্যারজনিত কারণে। কারণ সফটওয়্যারের কারণে হলে আরও আগে সমস্যা সমাধান করা যেত।

বাংলাদেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে বা ডিএসইর লেনদেনে সোমবার যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সেটি এর আগেও দেখা গেছে বারবার। গত এক দশকে অন্তত ১০ বার বিভিন্নভাবে লেনদেন বিঘ্ন ঘটেছে, এর মধ্যে ২০২১ সালে ঘটেছে একাধিকবার।

সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খোদ ডিএসই চেয়ারম্যান বলতে পারেননি কী কারণে লেনদেনে সমস্যা হলো। এ ঘটনায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বর্তমানে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় সকাল সাড়ে ৯টায়। নিয়ম অনুযায়ী লেনদেন শুরু হওয়ার আগে ৫ মিনিট প্রি অর্ডার দেয়া যায়। আর লেনদেন শেষ হয় ১ টা ৫০ মিনিটে। এর পরে আরও ১০ মিনিট সমাপনী দরে লেনদেন করা যায়।

সোমবার সকালে সাড়ে ৯টায় লেনদেন শুরু হয়। ১০টা ৫৮ মিনিটে এসে হঠাৎ করেই লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। লেনদেনের নির্ধারিত সময় ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত লেনদেন শুরুই করা যায়নি। পরে ২টা ১০ থেকে আড়াইটা পর্যন্ত চলে লেনদেন।

কেন হলো, ডিএসইর কেউ জানে না

ব্রোকারেজ হাউস শার্প সিকিউরটিজের কর্মকর্তা আব্দুল বারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দেখলাম হঠাৎ করে আমাদের সার্ভারের সঙ্গে ডিএসই সার্ভারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল। ঠিক এমন না যে আমাদের সিস্টেম হ্যাং করেছে।’

ডিএসইর পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়েছিল কারিগরি ত্রুটির কারণে লেনদেন বন্ধ আছে। কিন্তু কোনো কারণ বলা হয়নি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি গ্লোবাল সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, ‘এতক্ষণ কীভাবে লেনদেন বন্ধ থাকল আমি বুঝতে পারছি না। আমাদের কিছু জানানো হয়নি। বারবার ফোন করেও আমরা কোনো উত্তর পাইনি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, লেনদেন সাসপেন্ড হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। যদি সেটা হতো ব্রোকারেজ হাউসগুলো অনেক বড় বিপদে পড়ে যেত।‘

এ বিষয়ে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। বলেন, ‘প্রেস রিলিজ দিয়ে জানিয়ে দেব।’

তবে পরে যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়, তাতে বিপর্যয়ের এ কারণ নিয়ে কিছুই লেখা হয়নি।

ডিএসইর প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) জিয়াউল করিমকে বারবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে এসএমএস করে জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

কারিগরি ত্রুটিতে সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সকাল ১০টা ৫৮ থেকে লেনদেন বন্ধ ছিল। লেনদেনের নির্ধারিত সময় পার হওয়ার ২০ মিনিট পর বেলা ২টা ১০ মিনিটে পরে লেনদেন শুরু হয়

শফিকুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ম্যাচিং ইঞ্জিনে মনে হয় সমস্যা হয়েছে। সে জন্য লেনদেন বন্ধ।’

ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালককে রিপোর্ট করতে বলেছি। রিপোর্ট পেলে বলতে পারব কী সমস্যা।’

ডিএসইর মহাব্যবস্থাপক (আইসিটি) তারিকুল ইসলাম এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘এটা তো টেকনিক্যাল বিষয়, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না ঠিক কী কারণে সমস্যা হয়েছিল। এটা পর্যালোচনা করে বের করে জানানো হবে।’

তিনি বলেন, ‘একটা মোবাইল বা কম্পিউটার হ্যাং হয়ে যায় তখন রিস্টার্ট দিলেই তো ঠিক হয়ে যায়। তাই বলে কি আইডেন্টিফাই করা যায় যে কেন সফটওয়্যার হ্যাং হয়েছিল? এটাও কিছুটা তেমন।’

সমস্যা হার্ডওয়্যারে?

২০২১ সালের ১৮ জুলাইও এভাবে কয়েক ঘণ্টা লেনদেন বন্ধ ছিল। তখন দোষ চাপানো হয় ওএমএস সফটওয়্যারের ওপর। পরে সেই সমস্যা সমাধান করা হয়।

আইটি বিশেষজ্ঞ ডিএসইর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া নিউজবাংলাকে জানান, এটা কোনোভাবেই হতে পারে না যে, হুট করে এভাবে সার্ভার ডাউন হয়ে যাবে। এখানে অন্য কিছু আছে। এটা সফটওয়্যারজনিত কোনো কারণে হয়নি। মনে হয় হয়েছে হার্ডওয়্যারজনিত কারণে। কারণ সফটওয়্যারের কারণে হলে আরও আগে সমস্যা সমাধান করা যেত।

এমন ধারণা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, এমন তো না যে হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, তাই সাইট হ্যাং করে যাবে। এমন গতানুগতিক লেনদেন প্রতিদিনই হচ্ছে। এতে করে আকস্মিক সার্ভার এতক্ষণ বন্ধ থাকবে একটা চিন্তার বিষয়। এখানে সঠিক তদন্ত দরকার। ডিএসই অনেক পুরোনো হার্ডওয়্যার চালাচ্ছে। ২০ কোটি টাকায় ১২০টি ডেল সার্ভার কিনেও চালাচ্ছে না। পুরোনো হার্ডওয়্যারের কারণে এই সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।

ডিএসইর এ সমস্যার বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম সব সময় বলে এসছেন যে ডিএসইতে আইটিতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।

তদন্ত কমিটি গঠন

ডিএসইর এই রাখঢাকের মধ্যে লেনদেন বিপর্যয়ের কারণ তদন্তে কমিটি গঠন করেছে বিএসইসি।

সংস্থাটির পরিচালক আবুল হাসানকে টিম লিডার ও সহকারী পরিচালক দস্তগীর হোসেনকে সদস্যসচিব করে পাঁচজনের একটি দলকে দেয়া হয়েছে দায়িত্ব।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন বিএসইসির উপপরিচালক ওয়ারিসুল হাসান রিফাত, সিসিবিএলের মহাব্যবস্থাপক ও সিটিও ইমাম হোসেন এবং সিডিবিএলের মহাব্যবস্থাপক মইনুল হক।

বিএসইসির অর্ডারে বলা হয়েছে, ‘ডিএসইর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিরতিহীনভাবে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা ব্যাহত হয়েছে, যা সিকিউরিটিজ মার্কেটের জন্য অপ্রত্যাশিত।’

এ বিভাগের আরো খবর