রাজধানীতে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশিতে চিনি কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। বিক্রেতাদের গৎবাঁধা উত্তর, বেশি দামে কেনা তাই বিক্রিও বেশিতে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে শুক্রবার প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। আর প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়।
অথচ ২২ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ৮৪ টাকা এবং প্যাকেটজাতের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকরের কথা থাকলেও মানা হয়নি।
এরপর চলতি মাসের শুরুতে রিফাইনার্সরা প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে রেখেছেন ট্যারিফ কমিশনে। তবে এটাও মানা হচ্ছে না।
বাজারদর
কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে এসেছেন জাহিদ। তিনি বলেন, ‘অল্প একটু চিনি নেব বলে এসেছিলাম। খোলা চিনি ৯৫ টাকা নিল। যা অবস্থা তাতে চিনি খাওয়া বাদ দিতে হবে।’
এদিকে সব মুদি দোকানেও মিলছে না চিনি। অল্প কিছু দোকানে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ দোকানেই নেই প্যাকেটজাত চিনি।
এর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, বেশি দামে চিনি কিনে বিক্রি করলে ম্যাজিস্ট্রেট এসে জরিমানা করে। কিন্তু কোম্পানি থেকে বেশি দামে বিক্রি করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা মিজানুর রহমান খোলা চিনি বিক্রি করছেন ৯৫ টাকায়। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের থেকে যা ১১ টাকা বেশি।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কী করব আমরা? আমরা কিনছিই ৯২ থেকে ৯৩ টাকায়। এরপর খুচরা বিক্রি করতে গেলে তো কিছু ঘাটতি যায়।’
তার অভিযোগ, প্যাকেটজাত চিনিও পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলাররা বেশি মুনাফার জন্য প্যাকেট খুলে খোলাভাবে চিনি বিক্রি করছে।
মতিঝিলের মুদি দোকানি রিফাতেরও একই অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘আমরা চিনি কিনতে গেলে পাচ্ছি না। বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। আমরা বেশি করে চাইলেও পাচ্ছি না। বেশি দামে কিনে এনে বেশিতে বিক্রি করলেও দোষ।
ক্ষোভের সঙ্গে এই দোকানি বলেন, ‘বাজারে অনেকেই চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আমিও দেব ভাবছি।’
এ বিষয়ে আমিন ব্রাদার্সের ডিলার আমিনুল জানান, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকটের কারণে পণ্যের উৎপাদন কম বলে জানাচ্ছে কোম্পানি। এ কারণে কোম্পানি পণ্য চাহিদা মতো দিতে পারছে না। অর্ডার করলে ৭-৮ দিন পরে আসছে এক ট্রাক পণ্য যেটা আগে একদিনেই মিলত। এই কারণে তারা খুচরা বা পাইকারি দোকানগুলোতে বেঁধে দেয়া দামে পণ্য দিতে পারছেন না।
এদিকে বাজারে নির্ধারিত দামের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে সয়াবিন তেল। পাঁচ কেজির বোতল কেনা যাচ্ছে নির্ধারিত দামের চেয়ে আরও কমে। কারওয়ান বাজারে শুক্রবার প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৮ টাকায়। আর ২ লিটারের বোতল ৩৬০ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৮৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
৩ অক্টোবর বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৭৮ টাকা দাম নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। আগে এই তেল বিক্রি হচ্ছিল ১৯২ টাকায়। ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৯৪৫ টাকা থেকে ৬৫ টাকা কমিয়ে করা হয় ৮৮০ টাকা।
আর খোলা সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১৭ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা করা হয়।
তবে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কারওয়ান বাজারে দুই ধরনের দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৫০ ও ৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ ও ৫০ টাকা। তবে অন্য বাজারে পেঁয়াজের দাম আরও বেশি ছিল। মতিঝিল রেলওয়ে কলোনি বাজারে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ টাকা। ছোট বাজারগুলোতে ৫৫ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে না। গত সপ্তাহেও এর দাম ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
ব্রয়লারের দাম ঠিক থাকলেও বেড়েছে অন্যগুলোরআগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে পাকিস্তানি কক ও লাল লেয়ার মুরগির দাম। কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, এর আগে তা বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকায়।
কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে পাকিস্তানি কক ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হয়েছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায়। এটি ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে গত সপ্তাহে।
তবে ঠিক আছে ব্রয়লার মুরগির দাম। এটি কেজিতে ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা, গরুর মাংস বিক্রি ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
কমছে সবজির দামগত সপ্তাহের চেয়ে কোনো সবজির দাম বাড়েনি, বরং কমেছে দুই-একটির। বিক্রেতা রবিউল আউয়াল জানান, গতকালের চেয়ে আজ কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে করলা ও সিম। প্রতি কেজি সিম বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি করলা, ঝিঙে, ধুন্দল, চিচিঙ্গা, ঢ়েঁড়স, পটল, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়াও টমেটো ১২০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।