বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রিং শাইন কিনতে চায় কুইন সাউথের সহযোগী প্রতিষ্ঠান

  •    
  • ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৫৭

বেপজা বলেছে বর্তমানে রিং শাইনের দায় ৬০০ কোটি টাকা। তবে কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে কম। আবার এই কোম্পানিকে কিনে নিয়ে চালু করতে আরও ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংক তার পাওনার বিষয়ে ছাড় দিতে প্রস্তুত হলেও বেপজা তার পাওনার ৩০ শতাংশ এখনই পেতে চায়। রিং শাইন কিনতে আগ্রহী ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল এই মুহূর্তে কিছু টাকা দিয়ে বাকি টাকা ৫ বছরের কিস্তিতে দিতে চায়।

বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত রুগ্ন কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইলকে কিনে নিতে চাচ্ছে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল, যেটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কুইন সাউথ টেক্সটাইলের সহযোগী প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু বাংলাদেশ রপ্তানি প্রকৃয়াজাতকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেপজা এই প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রিং শাইন বেপজায় অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা হস্তান্তারের ক্ষেত্রে তারা যে অর্থ চাইছে তা ওয়াইজ স্টারের কাছে যুক্তিযুক্ত হচ্ছে না। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাহায্য চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে তারা।

গত ৯ অক্টোবর কুইন সাউথ টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেমি ইয়াং বিএসইসিতে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, তারা রিং শাইন টেক্সটাইলকে কিনে নিতে চাচ্ছেন। কিন্তু বেপজার দেনা পাওয়ার ইস্যু বিষয়টি কঠিন করে তুলেছে।

বেপজা বলেছে বর্তমানে রিং শাইনের দায় ৬০০ কোটি টাকা। তবে কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ এর চেয়ে কম। আবার এই কোম্পানিকে কিনে নিয়ে চালু করতে আরও ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

রিং শাইনের ৬০০ কোটি টাকা দেনার মধ্যে পাওনার তালিকায় আছে বেপজা, ব্যাংক, কাস্টমস ও অন্যান্যরা।

জেমি ইয়াং বলছেন ব্যাংকের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। ব্যাংক তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, কিছু সুদ ছাড়ও দিচ্ছে। বাকি ঋণ ধীরে ধীরে ফেরত নেবে বলে জানিয়েছে।

এনবিআর যে টাকা পায় সে বিষয়ে বৈঠক হচ্ছে সেখানেও অগ্রগতি আছে।

কিন্তু বাধ সেধেছে বেপজা। তারা তাদের মোট পাওনার নূন্যতম ৩০ শতাংশ দুই মাসের মধ্যে চেয়েছে। এছাড়া প্রতি মাসে ২ শতাংশ সারচার্জ ধরছে, যার পরিমাণ মাসে প্রায় দেড় লাখ ডলার।

কিন্তু জেমি ইয়াং বলছেন, বেপজার পাওনার কিছু টাকা তারা দিতে পারবেন, আর পুরো টাকা ফেরত দিতে পারবেন ৫ বছরের কিস্তিতে।

নিউজবাংলাকে জেমি ইয়াং বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে এই মুহূর্তে কোনো কমেন্ট করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কোনো অগ্রগতি হলে আমরা জানাব।’

বিএসইসির কাছে চিঠি পাঠানোর পর অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম কিছু বলতে চাননি। তিনি কমিশনার চেয়ারম্যান শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। তবে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।

তালিকাভুক্তির পরই প্রতারণার অভিযোগ

২০১৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার সময় প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওর মাধ্যমে তোলা টাকায় যন্ত্রপাতি ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিওর খরচ মেটানোর কথা ছিল। তবে সেই টাকা তারা ব্যবহার করার আগেই হস্তক্ষেপ করে বিএসইসি।

কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করার আগেই ২০১৯ সালের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে। লভ্যাংশ ঘোষণার পরবর্তী লেনদেনে সার্কিট ব্রেকার থাকবে কি থাকবে না এমন অবস্থায় কোম্পানিটি নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। ১২ ডিসেম্বর কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করে।

পরের বছরের জন্য কোম্পানিটি ১ শতাংশ করে নগদ ও বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করে কিন্তু বার্ষিক সাধারণ সভা আর হয়নি।

যদিও কোম্পানিটি বিশেষ সাধারণ সভার তারিখ ঘোষণা করে যার উদ্দেশ্য ছিল প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও থেকে তোলা টাকার ব্যবহারের খাত পরিবর্তন।

তখন অভিযোগ উঠে, কোম্পানিটির বিদেশি পরিচালকেরা আইপিওর মাধ্যমে তোলা টাকা নিয়ে নিজ দেশে চলে গেছেন। তবে সেটা সত্য প্রমাণ হয়নি। আর বিএসইসির অনুরোধে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানির ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা তাদের টাকা ফিরে পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে। বিএসইসি গত বছরের ২৭ জানুয়ারি কোম্পানিটির বোর্ড পুনর্গঠন করে আগের পরিচালকদেরকে বাদ দিয়ে দেয়।

নতুন বোর্ডের অধীনে কোম্পানিটি এরই মধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে।

যেভাবে বিপাকে

ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ডিইপিজেড) তাইওয়ানের মালিকানাধীন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান রিং সাইন একটি শক্তিশালী কোম্পানি হিসেবেই পরিচিত ছিল। এর শ্রমিকসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি ছিল।

১৯৯৬ সালে ডিইপিজেডে তাইওয়ানের নাগরিক মি সাও সোয়েটার কারখানাটি চালু করেন। ব্যবসায়িক সাফল্যে একে একে তিনি গড়ে তোলেন অ্যাভাস গার্ড লিমিটেড, সাইন ফ্যাশন লিমিটেড ও ইন্টার লগ লিমিটেড। এসব কারখানায় শ্রমিক ছিল আরও অন্তত সাত হাজার।

সমস্যার শুরু পাঁচ বছর আগে। বার্ধক্যজনিত কারণে মি সাও মারা গেলে তার ছেলে মি উইং থিং ও মেয়ে অ্যাঞ্জেলা কারখানাটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। কিন্তু শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ও কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তারা পেরে ওঠেননি।

মালিকদের অভিযোগ, শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে আমদানি করা সুতাসহ নানা উপকরণ পাচার করে দিচ্ছিলেন শ্রমিক ফেডারেশন নেতা ও কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

মি সাওয়ের মতো তার সন্তানরা ব্যবসা অতটা ভালো বুঝতেন না। আর এই সুযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি অংশ বেপরোয়া হয়ে ওঠে বলেও তথ্য আছে। একপর্যায়ে মি সাওয়ের দুই সন্তান কাউকে না বলে বাংলাদেশ থেকে চলে যান।

২৭ কোটি শেয়ার বাতিলের উদ্যোগ

রিং সাইনকে উৎপাদনে নিয়ে আসার চেষ্টার পাশাপাশি আইপিওতে আসার আগে টাকা ছাড়া প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু নিয়ে যে অনিয়ম হয়েছিল সেটিরও সুরাহার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আইপিওতে আসার আগে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। উদ্যোক্তা বা পরিচালক ও ৭৩ জন সাধারণ শেয়ারধারীর কাছে ২৭৫ কোটি ১০ লাখ টাকার প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে এই পরিশোধিত মূলধন ২৮৫ কোটি ৫ লাখ টাকা করা হয়। এর বিপরীতে কোনো টাকা পরিশোধ করা হয়নি।

রিংসাইনের বোর্ড পুনর্গঠনের পর তদন্ত করে এই বিষয়টি উদঘাটন করে বিএসইসি। এর পরে এসব শেয়ার বাতিলের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। তবে এরপর এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হলো, সে বিষয়ে আর কিছু জানানো হয়নি।

রিং শাইনের পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি ৩১ লাখ টাকা; রিজার্ভের পরিমাণ ২০৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, বাজার মূলধন ৪৯০ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে রিং শাইনের শেয়ারদর ছিল ৯ টাকা ৮০ পয়সা।

গত এক বছরে শেয়ারদর ৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২ টাকা ৪০ পয়সা পর্যন্ত উঠানামা করেছে।

এ কোম্পানির ৫০ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার ৪৩ টি শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে ২১ দশমিক ৩২ শতাংশ আছে পরিচালকদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ শেয়ার, বিদেশিদের হাতে রয়েছে ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

২৭ কোটি ৫১ লাখ শেয়ার বাতিল হলে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন হবে ২২৫ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। শেয়ার সংখ্যা হবে ২২ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৪৩টি।

এ বিভাগের আরো খবর