ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অব ইন্ডিয়া (এমসিএক্স) পরিদর্শনে গেছে চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য পণ্য ক্লিয়ারিং, সেটেলমেন্ট, ট্রেডিং, গুদামজাতকরণ ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনই এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য।
প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন সিএসইর পরিচালক এমদাদুল ইসলাম, আইটি প্রধান মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, ট্রেক মার্কেটিং অ্যান্ড সার্ভিসেস প্রধান মর্তুজা আলম, বিজনেস প্রমোশনের প্রধান মোহাম্মদ মনিরুল হক এবং ডিজিএম ফয়সাল হুদা।
মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সফর শুরু হয়েছে। আগামী শনিবার পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবেন।
সময় তারা পণ্য বিনিময়কে আরও বিকাশের জন্য প্রমিত ডেলিভারি সিস্টেম প্রক্রিয়া বোঝার জন্য প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ‘বুলিয়ন ভল্ট’ (ভল্ট পরিষেবা প্রদানকারী) পরিদর্শন করবে।
এর পরে তারা মিউচুয়াল ফান্ড, ইটিএফ এবং অন্যান্য পণ্যের ওপর আলোচনার জন্য মেটাল ওয়্যারহাউস বা বিনিময়ের নিয়ম মেনে গুদামজাতকরণ প্রক্রিয়ার ডেমো দেখবেন।
নিয়ন্ত্রক পরিকাঠামো যেমন সিডিএসএল কমোডিটি রিপোজিটরি লিমিটেডের কার্যক্রমও দেখবেন তারা। এ ছাড়াও টেস্টিং ল্যাব বা তুলা অ্যাসেইং প্রসেসের ডেমো পর্যবেক্ষণ করবেন সিএসইর প্রতিনিধিরা।
এই সফরের মধ্য দিয়ে ডেমো লাইভ ট্রেডিং অন ট্রেড ওয়ার্কস্টেশনের অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন প্রতিনিধিরা। গুদামজাতকরণ বা কৃষি গুদামের প্রক্রিয়ার ওপর প্রেজেন্টেশন দেখবেন তারা। এ ছাড়াও ওয়্যাররিংহাউজ বা কৃষিপণ্য গুদামজাতকরণ ও বিতরণের জন্য পণ্য রসিদ তথ্য সিস্টেমের ডেমো (কমআরআইএস) সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেবেন।
গত ১১ অক্টোবর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বিষয়ে খসড়া বিধিমালা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করেন সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।
কৃষিপণ্য, গবাদিপশু, মাছ, বনজ সম্পদ, খনিজ ও জ্বালানি পণ্যসহ উৎপাদিত যেকোনো পণ্য কেনাবেচা বা লেনদেনের উদ্দেশে যে এক্সচেঞ্জ বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে, সেটিই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ অনুযায়ী, উল্লেখিত পণ্যসামগ্রী কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বেচাকেনা হবে।
এই পদ্ধতিতে কেনাবেচাটা হয় কাগুজে বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে। মূল পণ্যটি কোনো গুদামে বা মাঠে থাকে। সেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি বা হস্তান্তর হয়।
ধরা যাক, কমোডিটি এক্সচেঞ্জে আলু কেনাবেচা হলো। সরাসরি কৃষক বা হিমাগারের মালিক, যার মালিকানায় পণ্যটি রয়েছে তিনি এই আলু বিক্রি করতে পারবেন। আর কমোডিটি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যে কেউ এই আলু কিনতে পারবেন।
আইনের মাধ্যমে এই আলু কেনাবেচার চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য নির্ধারিত একটি সময় বেঁধে দেয়া হবে। ওই সময় ক্রয়াদেশটি যার হাতে থাকবে, তাকে বিক্রিত ওই আলু বুঝিয়ে দেয়া হবে।
সিএসই জানিয়েছে, ইন্টারেক্টিভ প্রতিক্রিয়ায় সিএসই ও ভারতের মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জ অফ ইন্ডিয়ার (এমসিএক্স) কোর টিমের মধ্যে একাধিক ব্রেনস্টর্মিং সেশন এবং সিএসই, বিএসইসি ও অন্য প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সাম্প্রতিক অনসাইট ভিজিটের ওপর ভিত্তি করে সামঞ্জস্যপূর্ণ পণ্য ডেরিভেটিভস সেগমেন্ট সংক্রান্ত প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার খসড়া বিধিমালা তৈরি করা হয়েছে।
কমোডিটি এক্সচেঞ্জ তৈরি এবং বিকাশের জন্য খসড়া বিধিমালাটি (দুটি ধাপে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে) কমিশনের কাছে পর্যালোচনা এবং প্রতিক্রিয়ার জন্য জমা দেয়া হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে সিএসইর পর্ষদ সভার সিদ্ধান্তের পর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরুর জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন চেয়ে চিঠি দেয়া হয়। পাশাপাশি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের প্রয়োজনীয়, সম্ভাবনা নিয়ে একটি ধারণাপত্রও কমিশনে জমা দেয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি ৩০ অক্টোবর শর্ত সাপেক্ষে প্রাথমিক সম্মতি দেয়া হয়।
ওই সময় কমোডিটি এক্সচেঞ্জের বিষয়ে সিএসই যে ধারণাপত্রটি জমা দেয় তাতে বলা হয়, ২০০৭ সালের ১৬ এপ্রিল সরকারের পক্ষ থেকে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু পরে এ উদ্যোগ গতি হারায়। ফলে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি আলোচনা থেকে হারিয়ে যায়।
কিন্তু সিএসই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বেশ আগ্রহী। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের আগস্টে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি দেয় সিএসইর তৎকালীন সভাপতি।
অর্থ মন্ত্রণালয় ওই চিঠি বিএসইসিতে পাঠায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে। এরপর বিএসইসি ও সিএসইর মধ্য এ নিয়ে বেশ কয়েক দফা চিঠি চালাচালি চললেও একপর্যায়ে বিষয়টি আলোচনার টেবিলের বাইরে চলে যায়।
এরপর গত বছরে সিএসইর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে এক বৈঠকে বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সংস্থাটি উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে ধারণাপত্র তৈরি ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের উদ্যোগ গ্রহণের কথা বলেন।
তারই অংশ হিসেবে গত আগস্টে সিএসইর পর্ষদে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও এ জন্য অনুমোদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য অভ্যন্তরীণ একটি কমিটিও গঠন করা হয়।
এরপর কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারতে মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জের (এমসিএক্স) সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে সিএসই। এমনকি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে এমসিএক্সকে পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়। এ অবস্থায় পরামর্শক নিয়োগের আগে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের প্রয়োজনীয় দেখা দেয়। সে জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দয়ে বিএসইসি। এ জন্য যেসব শর্ত দেয়া হয় তার মধ্যে ছিল- কমোডিটি পণ্যের মান নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ, পণ্যাগার বা ওয়্যারহাউস প্রতিষ্ঠা ও তার জন্য নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার কাঠামোগত চূড়ান্ত প্রস্তাব তৈরি করা।