আগস্টের শুরু থেকে শেয়ারদর তরতর করে বেড়ে যাওয়া নিয়ে তুমুল আলোচনায় আসা ওরিয়ন গ্রুপের চারটি কোম্পানির প্রতিটিই টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দর হারিয়েছে। কোম্পানি চারটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে গত ছয় মাসে ১২ গুণের বেশি বেড়ে যাওয়া ওরিয়ন ইনফিউশন। আর সবচেয়ে কম বেড়েছে যেটি, সেই বিকন ফার্মা দর হারিয়েছে সবচেয়ে কম।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইর সাধারণ সূচক ১২ পয়েন্ট কমার পেছনে প্রধান ভূমিকায় ছিল ওরিয়ন গ্রুপ, প্রধানত যে গ্রুপের শেয়ারদর ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে গত আড়াই মাসে সূচকের উত্থান হয়েছিল।
ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ার সময় বিনিয়োগকারীরা আর্থিকভাবে লাভবান হলেও এবার তারা মুদ্রার অপর পিঠটি দেখছেন। যখন দর বাড়ছিল, সে সময় লেনদেন ছিল বেশি, এখন দর যখন কমছে, তখন লেনদেনও গেছে কমে।
বেশি দরে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কিনে আটকা পড়ে যাওয়াও এখন লেনদেন কমার একটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে।
ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘যেসব স্টক লিড দিচ্ছিল, সেগুলো দুর্বল হচ্ছে। যার প্রতিফলন বাজারে, টার্নওভারে দেখা যাচ্ছে।’
ওরিয়ন ইনফিউশন
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫.৭১ শতাংশ দর হারিয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন, যে কোম্পানির শেয়ারদর ২৮ জুলাই ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা থেকে চলতি সপ্তাহে এক হাজার টাকা ছুঁয়ে যায়।
আগের দিন দর ছিল ৯১৩ টাকা, ৫২ টাকা ১০ পয়সা হারিয়ে দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৮৬০ টাকা ৯০ পয়সা। এক পর্যায়ে নেমে এসেছিল ৮৪৪ টাকা ৬০ পয়সায়।
এই কোম্পানিটির দরপতনে সূচক কমল ২.৯৫ পয়েন্ট।
গত ছয় মাসেরও কম সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ১২ গুণেরও বেশি বেড়ে এক হাজার টাকা ছুঁয়ে পড়ে নামতে শুরু করেছে। গত মে-জুন মাসেও দর ছিল ৮০ টাকার নিচে, রোববার দর এক হাজার টাকা ছুঁয়ে কমে।
গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা। এভারে অস্বাভাবিক হার দর বৃদ্ধির নেপথ্যে কী, তা খুঁজে বের করতে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে, এই দর বৃদ্ধির নেপথ্যে কোনো কারসাজি আছে কি না।
সর্বোচ্চ দরে যারা কিনেছেন, তাদের এখন শেয়ার প্রতি প্রায় ১৪০ টাকা লোকসান হয়ে আছে।
ওরিয়ন ফার্মা
এই গ্রুপের সবচেয়ে বড় মূলধনি কোম্পানি ওরিয়ন ফার্মার দর কমেছে ৫.২০ শতাংশ।
আগের দিন দর ছিল ১২৬ টাকা ৯০ পয়সা। ৬ টাকা ৬০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ১২০ টাকা ৩০ পয়সা। এই পতনে ডিএসইএক্স সূচক কমেছে ৪.২৯ পয়েন্ট।
গত ২৮ জুলাই দ্বিতীয়বারের মতো পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির দর ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা। সম্প্রতি সর্বোচ্চ দর উঠে ১৫৬ টাকা ৫০ পয়সায়। এই দরে যারা কিনেছেন, তাদের প্রায় ৩৬ টাকা লোকসান তৈরি হয়েছে।
কোহিনূর কেমিক্যালস
কোহিনূর কেমিক্যালসের দর কমেছে ৪.৬৯ শতাংশ। আগের দিন দর ছিল ৬০৩ টাকা ৪০ পয়সা। ২৮ টাকা ৩০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭৫ টাকা ১০ পয়সা।
গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৩৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। সম্প্রতি উঠে যায় ৭৫৭ টাকা ৪০ পয়সায়। এই দরে যারা কিনেছেন, তাদের এখন শেয়ার প্রতি ১৮০ টাকা হারিয়ে গেছে।
এই কোম্পানিটির দরপতনে সূচক কমেছে ২.০১ পয়েন্ট।
বিকন ফার্মা
গ্রুপের অপর কোম্পানি বিকন ফার্মার দর কমেছে ২.৪৬ শতাংশ বা ৮ টাকা ২০ পয়সা। আগের দিন দর ছিল ৩৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। দিন শেষে দাঁড়িয়েছে ৩২৫ টাকা ৪০ পয়সা।
এই কোম্পানিটির দরপতনে সূচক পড়েছে ৫.২৭ পয়েন্ট।
ফ্লোর প্রাইস দেয়ার দিন কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২৪০ টাকা ৬০ পয়সা। বাড়তে বাড়তে তা সম্প্রতি উঠে যায় ৩৯৩ টাকা পর্যন্ত।
গত তিন বছর ধরেই কোম্পানিটির শেয়ারদর ব্যাপকহারে লাফাচ্ছে। তিন বছর আগেও ২০ টাকার ঘরে লেনদেন হচ্ছিল শেয়ারদর। শেয়ারদর এভাবে লাফাতে থাকলেও কোম্পানির ব্যাপক আর্থিক উন্নতি হয়েছে, এমন প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।