চেক নগদায়ন করার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়বে বলে স্টক ব্রোকাররা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, সত্যি সত্যি তার নমুনা দেখা গেল পুঁজিবাজারে।
কিছুদিন আগেও যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসইতে নিয়মিত দুই হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হতে থাকলেও টেনেটুনে এক হাজার কোটির টাকা পার করল।
১১ অক্টোবর স্টক ব্রোকারদের প্রতি জারি করা বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়, চেকের টাকা নগদায়নের আগে তা দিয়ে শেয়ার কেনা যাবে না। নির্দেশনাটি আপাতদৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও সেটি পুঁজিবাজারে বড় চাপ তৈরি করেছে।
পরের দিনই লেনদেন এক হাজার কোটি টাকার নিচে নেমে এসে হয় ৯৯৪ কোটি ১১ লাখ ৬২ হাজার টাকায়। এর পরের তিন কর্মদিবসে তা আবার হাজার কোটি টাকার ঘর ছাড়ালেও বাজারে গতি ফেরেনি। স্বল্প মূলধনি কিছু কোম্পানির উত্থান ছাড়া পুঁজিবাজার অনেকটাই নিষ্প্রাণ। শক্তিশালী মৌলভিত্তির কোম্পানির ক্রেতা নেই। বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইসে গড়াগড়ি খাচ্ছে অর্ধেকের বেশি কোম্পানি।
একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল লেনদেন এর চেয়ে কমে যাবে। তবে শেষ মুহূর্তে কিছুটা ক্রয়চাপে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কিছুটা বাড়ে। হাতবদল হয় ১ হাজার ৫ কোটি ৯৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। এটি গত ৪৩ কর্মদিবসের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন।
গত ১৪ আগস্ট ৬৪৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার টাকার পর গত ১২ অক্টোবরই এর চেয়ে কম লেনদেন হয়েছিল।
এর মধ্যে স্টক ব্রোকারদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ডিবিএর পক্ষ থেকে ডিএসই ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, চেক নিয়ে নির্দেশনা না পাল্টালে পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়বে।
চিঠিটি কয়েকদিন আগে দেয়া হলেও বিষয়টি জানাজানি হয় সোমবার পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষে। আর মঙ্গলবার বাজারের চিত্রে এটা স্পষ্ট যে, বাজারে চাপ আরও বেড়েছে।
চলতি সপ্তাহের দুটি কর্মদিবসে রোববার ১৫ এবং সোমবার ৬৫ পয়েন্ট পতনের স্মৃতি নিয়ে এদিন প্রথম দুই ঘণ্টায় সূচক ৪৭ পয়েন্ট কমে যাওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা আরও বাড়ে। তবে বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ১২ পয়েন্ট হারিয়ে শেষ হয় লেনদেন। এ নিয়ে তিন দিনেই পুঁজিবাজারে সূচক কমল ৯২ পয়েন্ট।
দিন শেষে ডিএসইএক্সের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪০০ পয়েন্টে, যা গত ৩৬ কর্মদিবসের মধ্যে সর্বনিম্ন।
গত ২৫ আগস্ট এর চেয়ে কম ৬ হাজার ৩৫৫ পয়েন্টে ছিল ডিএসইএক্স।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
দিন শেষে ৪৯টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ১০০টির দর আর ২২০টি কোম্পানি হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দরে, যেগুলোর সিংহভাগই হাতবদল হয়েছে আগের দিনের দরে।
এদিন তুমুল আলোচিত ওরিয়ন গ্রুপের চারটি কোম্পানি আবার দর হারিয়েছে। গত ২৮ জুলাই ফ্লোর প্রাইস দেয়ার পর থেকে লাফাতে থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওরিয়র ইনফিউশন ৫.৭১ শতাংশ (৫২ টাকা ১০ পয়সা), ওরিয়ন ফার্মার দর ৫.২০ শতাংশ (৬ টাকা ৬০ পয়সা, কোহিনূর কেমিক্যালসের দর ৪.৬৯ শতাংশ (২৮ টাকা ১০ পয়সা) এবং বিকন ফার্মার দর ২.৪৬ শতাংশ (৮ টাকা ২০ পয়সা) কমেছে।
এই চার কোম্পানির কারণেই সূচক কমেছে ১৪.৫২ পয়েন্ট।
ভালো লভ্যাংশের আশায় তরতর করে বাড়ছিল যেসব কোম্পানি, সেগুলোর মধ্যে যেগুলোর ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের আশাহত করেছে, সেগুলোর একটির দর কমেছে সবচেয়ে বেশি। লভ্যাংশ ঘোষণার পর অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছে, এমন কোম্পানিও আছে এই তালিকায়।
এদিন সূচক যতটা কমেছে, তার চেয়ে বেশি কমিয়েছে কেবল ওরিয়ন গ্রুপের চার কোম্পানি
সব বৃদ্ধির শীর্ষেও ছিল ভালো লভ্যাংশ ঘোষণা করা একটি কোম্পানি। শীর্ষ দশের মধ্যে একটি নতুন লেনদেন শুরু করেছে, বাকি নয়টির সবগুলোই স্বল্প মূলধনি।
লেনদেনে যে ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি মাসের পর মাস দেখা যাচ্ছে, সেটি আবার প্রকাশ পেল। মোট লেনদেনের ৪২ শতাংশ কেবল ১০টি কোম্পানিতে।
এই ১০টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৪২২ কোটি টাকার বেশি। আর অনাগ্রহের ২০০ কোম্পানিতে ১১ কোটি ৯০ লাখ এবং ২৫০টি কোম্পানিতে হাতবদল হয়েছে ৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
এই আড়াইশ কোম্পানির লেনদেনের চেয়ে শীর্ষে থাকা ওরিয়ন ফার্মার লেনদেন ছিল বেশি। এই কোম্পানিটির ৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
চেক ইস্যুতে কী বলছেন সংশ্লিষ্টরা
ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘চেক নগদায়ন না হলে শেয়ার না কেনার নির্দেশনায় বাজারে চাপ পড়েছে বলে মনে করি না। দুইটা জিনিসই হয়তো একই সঙ্গে হয়েছে। বাজার উইক ছিল, সেই সময়ই এই নির্দেশনা এসেছে। তাই এমনটা মনে করা হচ্ছে। যেহেতু ফান্ড মুভ হচ্ছে না। যেসব স্টক লিড দিচ্ছিল, সেগুলো দুর্বল হচ্ছে। যার প্রতিফলন বাজারে, টার্নওভারে দেখা যাচ্ছে।’
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সায়েদুর রহমান বলেন, ‘বিএসইসির ওপর চাপ বাড়ানোর প্রশ্নটা আমাদের কাছে একেবারেই অবান্তর। চেক নগদায়নের জন্য যদি বসে থাকি তাহলে বিনিয়োগকারী ডিমোরালাইজড হবে। কারণ, চেক দিলে সেটা নগদায়ন হতে ২৪ ঘণ্টা বা কখনও সেটা ৩৬ ঘণ্টাও লেগে যেতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘ধরা যাক, বিনিয়োগকারী সকালে বাসা থেকে রওনা দিয়েছেন। কোনো কারণে তিনি ১০টার মধ্যে পৌঁছাতে পারলেন না। তার জন্য তো ব্যাংকের ক্লিয়ারিং হাউজ বসে থাকবে না। আজকে হাউজ ধরতে পারল না, তাহলে আগামীকাল ধরবেন। পরের দিন বিকাল ৪টায় ব্রোকার জানতে পারবেন পাস হয়েছে কি-না। মার্কেট তো শেষ হয় ২টায়। তাহলে শেয়ার কিনতে পারবেন তারও একদিন পর। তাহলে বিনিয়োগকারী কী করবেন?
‘আরেকটা পার্ট হলো- ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স, লিজিং, এরা কিন্তু ব্রোকারেজ হাউজে টাকা রাখে না। সারাদিন ট্রেড করে বিকালে চেক বা পে অর্ডার নিয়ে যায়। তারা কী করবে? এই প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টা আমরা জানিয়েছি। এটা চাপ প্রয়োগ বা বিরোধিতা করা নয়। এখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিষয়টা চিন্তা করে যেটা ভালো মনে করবে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এ বিষয় জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র বলেন, ‘কমিশনার স্যার অথবা এসআরআই ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ বিষয় আমার নো কমেন্টস।’
বিএসইসির কমিশনার ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শেখ শামসুদ্দিনের মোবাইল নম্বরে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সূচকে প্রভাব যাদের
সবচেয়ে বেশি ৫ দশমিক ২৭ পয়েন্ট সূচক কমেছে বিকন ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ২ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ২৯ পয়েন্ট কমেছে ওরিয়ন ফার্মার কারণে। শেয়ার প্রতি দাম কমেছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।
ওরিয়ন ইনফিউশনের দর ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ২ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট।
এ ছাড়াও বসুন্ধরা পেপার, কোহিনূর কেমিক্যাল, বেক্সিমকো লিমিটেড, পেনিনসুলা চিটাগং, ইস্টার্ন ক্যাবলস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও বেক্সিমকো গ্রীণ সুকুক বন্ডের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ২৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট।
বিপরীতে ৭ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। এদিন শেয়ারটির দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের দর ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৪ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট।
জেএমআই সিরিঞ্জেস সূচকে যোগ করেছে ৩ দশমিক ১১ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ১০ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
এর বাইরে আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, ইসলামী ব্যাংক, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, সি-পার্ল, আল-আরব ব্যাংক, সোনালী পেপার ও প্রিমিয়ার ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৬১ পয়েন্ট।
কোন খাত কেমন
লেনদেনের শীর্ষে রয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। হাতবদল হয়েছে ২১১ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ২২.১২ শতাংশ। খাতটিতে ৮টি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে। ১০টি করে কোম্পানির লেনদেন হয়েছে দরপতন ও অপরিবর্তিত দরে।
প্রকৌশল খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৪৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। ৭টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ১৭টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে। দরপতন হয়েছে ১৮টির।
তৃতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাতে লেনদেন হয়েছে ১২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ৩টির দরবৃদ্ধি, ৬টির দরপতন ও আগের দরে লেনদেন হয়েছে ৪টি কোম্পানির।
আর কোনো খাতে ১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়নি।
চতুর্থ সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে। খাতের ১টি করে কোম্পানির দরবৃদ্ধি ও অপরিবর্তিত দরে লেনদেন হয়েছে। ৪টির লেনদেন হয়েছে দরপতনে। হাতবদল হয়েছে ৯৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনদেন করে তালিকার পঞ্চম স্থানে ছিল সেবা ও আবাসন খাত। ২টি করে কোম্পানির লেনদেন হয়েছে দরবৃদ্ধি ও দরপতনে।
খাদ্য খাতে ৫৩ কোটি ৫০ লাখ ও প্রযুক্তি খাতে ৫০ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। বাকি খাতের লেনদেন ছিল পঞ্চাশের নিচে।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
প্রথমবারের মতো ৩৬ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার পরের দিন ১০.৯৮ শতাংশ বা ৫০ টাকা ৬০ পয়সা দর বেড়েছে জেএমআই সিরিঞ্জেসের। শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ৫১১ টাকা ৩০ পয়সায়। আগের দিনের দর ছিল ৪৬০ টাকা ৭০ পয়সা।
১০ শতাংশ দর বা ২ টাকা ৪০ পয়সায় বেড়েছে নাভানা ফার্মার। প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা ৪০ পয়সায়।
আনোয়ার গ্যালভানাইজিংয়ের শেয়ারদর ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেড়ে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫২০ টাকা ৭০ পয়সায়।
এ ছাড়াও দরবৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে অ্যাপেক্স ফুডস, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিনি সি ফুড, অ্যারামিট, সোনালী আঁশ, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স ও মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ।
দর পতনের শীর্ষ ১০
পতনের তালিকার শীর্ষে রয়েছে পেনিনসুলা চিটাগং। ১৩ দশমিক ০৭ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ২৮ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। আগের দিনে লেনদেন হয় ৩২ টাকা ৯০ পয়সায়।
পতনের তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে বিডি কম। ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ দর কমে শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৩ টাকা ১০ পয়সায়। আগের দিনের ক্লোজিং প্রাইস ছিল ৫৮ টাকা ৯০ পয়সা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে নাভানা সিএনজি। ৯ শতাংশ কমে শেয়ারটি সর্বশেষ ২৯ টাকা ৩০ পয়সায় হাতবদল হয়। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৩২ টাকা ২০ পয়সায়।
দর কমার শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল পেপার প্রোসেসিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, মনোস্পুল পেপার, ইস্টার্ন ক্যাবলস, আফতাব অটোস, ফার কেমিক্যালস ও আজিজ পাইপস।