চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আয়ে উলম্ফন হলেও সেপ্টেম্বরে তা কমে গেছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ছন্দপতন ঘটেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তারপরও প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।
জানা যায়, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশ। সে তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ে ভাটার টান লক্ষ করা যাচ্ছে।
এনবিআর এর কারণ সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরে আমদানি কমে আসায় রাজস্ব আহরণে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এ ছাড়া বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট আহরণে তার প্রভাব পড়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণে ছন্দপতন ঘটেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাজস্ব আয়ে এবার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জন করতে হলে আদায় বাড়াতে হবে কমপক্ষে ৩১ শতাংশ। যদিও এই লক্ষ্যমাত্রা অত্যন্ত ‘উচ্চাভিলাষী’ বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এনবিআরের মাধ্যমে মোট রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
সাময়িক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আলোচ্য অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আদায় হয় ৬৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের একই সময়ে আদায় হয়েছিল ৫৮ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রাজস্ব আয় বেড়েছে বা প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এনবিআরের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজস্ব আয়ের চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে।’
সরকার বাজেট বাস্তবায়নে যে অর্থায়ন করে তার ৮৫ থেকে ৮৬ শতাংশ জোগান দেয় এনবিআর। আর রাজস্ব আয় ভালো হলে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ সহনীয় থাকে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির যে আকার তার সঙ্গে রাজস্ব আয় সংগতিপূর্ণ নয়। তাই রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে হবে।’
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আয়ে প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে উৎপাদন ও কেনাবেচা কমে গেছে। অর্থনীতিতে চাহিদা কমেছে। এটা শুভ নয়। কারণ এতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমবে।’
রাজস্ব বাড়াতে বিশেষ তৎপরতা চালানোর জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করেন তিনি।
আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর- এই তিন উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবদান ভ্যাটের। মোট রাজস্ব আদায়ের ৩৯ শতাংশ আসে ভ্যাট থেকে। আয়কর থেকে আসে ৩৭ শতাংশ। বাকি রাজস্ব আসে আমদানি শুল্ক থেকে।
রাজস্ব বোর্ডের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি শুল্ক খাতে আদায় হয়েছে ২২ হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এই সময়ে তা ছিল ১৯ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অভ্যন্তরীণ রাজস্বের অন্যতম উৎস ভ্যাট আদায় হয় ২৩ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই সময়ে আদায় হয় ২১ হাজার ১৫ কোটি টাকা। ভ্যাটে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ।
অপরদিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদের আরেকটি উৎস আয়কর খাতে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই খাতে আদায় হয় ১৮ হাজার ৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে আয়করে জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় সাড়ে ১১ শতাংশ।
সব মিলে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আহরণ হয় ৬৫ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা, যা পুরো বছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮ শতাংশ।
গত অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায় করে ২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা।