বিশ্বব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বন্ড ছাড়বে, কিন্তু কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে কর অব্যাহতি দিতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রা অদলবদল বা কারেন্সি সোয়াপের সুবিধা দিতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বন্ড ছাড়ে, সেটা দেশের বন্ড বাজার গড়ে উঠতে সাহায্য করবে, তবে একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ কতটা যুক্তিযুক্ত হবে তা ভেবে দেখা দরকার।
বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইএফসি সরকারি ও বেসরকারি খাতে ঋণ দিয়ে থাকে; প্রযুক্তিগত সহায়তাও করে থাকে।
গত বছরের অক্টোবরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কাছ থেকে বাংলাদেশে বন্ড ছেড়ে টাকা তোলার অনুমতি পায় আইএফসি। তারা বাংলাদেশ থেকে টাকা তুলে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেবে, কিন্তু এই বন্ড ছাড়ার আগে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে তারা। আর এ নিয়ে বৈঠক করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদকে চিঠি দিয়েছেন আইএফসির বাংলাদেশপ্রধান।
সেখানে তিনি বলেন, তাদের কর অব্যাহতি দিতে হবে। পাশাপাশি মুদ্রা অদলবদল বা কারেন্সি সোয়াপ এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের ঝুঁকি প্রশমনের সুযোগ দিতে হবে।
এ বিষয়গুলো কেন দরকার, তা বৈঠকে তুলে ধরা হবে। চলতি মাসের তিন তারিখে পাঠানো এই চিঠির জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক কী বলেছে, সেটা জানা যায়নি।
আইএফসি কোনো ধরনের সুযোগ চাইছে, কেন চাইছে
বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়হারের ঝুঁকি প্রশমনের বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, ‘যদি কেউ একটি মুদ্রায় বিনিয়োগ করে থাকে, সেই মুদ্রার মান ওঠানামা করলে তো বিনিয়োগের ভ্যালু বা মূল্য ওঠানামা করবে। সেটার বিপরীত একটি অবস্থান যদি নেয়া যায়। যেমন একটি মুদ্রায় ঋণ দিলাম, আবার সেই মুদ্রায় ঋণ নিলাম। তাহলে দুই দিকে ইফেক্ট ক্যানসেল হয়ে যায়। সম্পদের মূল্য কমলে, দায়ের মূল্য কমে যাবে। ফলে মুদ্রার বিনিময় হার কমা বা বাড়ার ফলে যে ঝুঁকি, সেটা আর থাকবে না।’
কারেন্সি সোয়াপ কী
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘সোয়াপ হচ্ছে একটি ব্যাংক আরেকটি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে পারে যে, একজন আরেকজনকে টাকা দিবে, তার বদলে আরেকজন দরকার হলে ডলার দেবে। যেমন: বাংলাদেশ যখন শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছে, তখন সেখানে একটি ক্লজ ছিল শ্রীলঙ্কা যদি ডলার না দিতে পারে, তাহলে শ্রীলঙ্কান রুপি দিলেই হবে। যদিও আমরা রাজি হইনি। এটাকে মুদ্রার অদলবদল বলা যায়।
‘এ ধরনের সুযোগ থাকলে অনেক অপশন বাড়ে। আন্তর্জাতিক বাজারে ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু করতে গেলে, একটা টাকায় করলেন, একটা ডলারে করলেন। সেখানে যদি একটি মুদ্রার সঙ্গে আরেকটি মুদ্রার বিনিময়ের একটি সুবিধা থাকে, তাহলে বিনিয়োগকারীর কনফিডেন্সটা বাড়ে। তখন বিনিয়োগকারী মনে করে যে আমার রাস্তা খোলা আছে। আমার টাকাগুলো পানিতে পড়বে না।’
আইএফসি বন্ড ইস্যু করলে কী লাভ
জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আইএফসির যে ক্রেডিট রেটিং আছে আন্তর্জাতিক বাজারে, প্রতিষ্ঠানটি যদি বন্ড ইস্যু করে, সে ক্ষেত্রে বন্ড কিনতে মানুষ যতটা ভরসা পাবে অন্য প্রতিষ্ঠান যার এ রকম ক্রেডিট রেটিং নাই, তাদের বন্ড কিনতে মানুষ ভরসা পাবে না। আইএফসির মতো প্রতিষ্ঠান এসে যদি এই চর্চা শুরু করে, সেটার অনুকরণে অন্যরাও তখন আস্তে আস্তে আসবে এবং বিনিয়োগকারীদের ভরসাও বাড়বে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে আইএফসি বন্ড এলে আমাদের বন্ড মার্কেট উন্নয়ন হবে।’
আইএফসি যে সুবিধাগুলো চাচ্ছে সেগুলো বাংলাদেশের আইনে বাধা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা কতটা দেয়া সম্ভব, এটা জটিল হয়ে যায়। তখন প্রশ্ন উঠবে শুধু আইএফসি কেন, আইন তো সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। এখন আইএফসিকে একটি সুবিধা দেয়া, যেটা অন্যরা পাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে বাজারে আইএফসির একটি একচেটিয়া মনোপলি হবে। রেগুলেটরকে চিন্তা করতে হবে বিষয়টি নিয়ে।’