‘ব্যবসা-বিনিয়োগ ক্ষেত্রে গাইডলাইনের কথা অনেকেই বলেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা নিয়ে যেন আমরা বিপদে না পড়ে যাই। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বলে ঢালাও গ্রহণ করা যাবে না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই গাইডলাইন বানাতে হবে।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেছেন।
রাজধানীর এক হোটেলে বৃহস্পতিবার ‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২২’-এর সমাপনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শেখ শামসুদ্দিন।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) ও সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
১০ দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান উদ্বোধন হয় ৩ অক্টোবর। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শেষ হয় দশ দিনব্যাপী এই আয়োজন।
বিএসইসি আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সংঘের সদস্য। এই সংঘের নাম হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অফ সিকিউরিটিস কমিশনস বা আইওএসসিও।
আইওএসসিও’র সদস্য দেশগুলো তাদের দেশের বিনিয়োগকারীদের সচেতন করা ও বিনিয়োগ শিক্ষা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালন করে থাকে। বিএসইসি ২০১৭ সাল থেকে এই সপ্তাহ পালন করে আসছে।
‘বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২২’-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএসইসি কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। ছবি: নিউজবাংলা
বিএসইসি কমিশনার বলেন, ‘গাইডলাইনের কথা আমাদেরকে অনেকেই বলেছেন। এটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে একইসঙ্গে এটাও ভাবতে হবে, তা দিয়ে যেন আমরা বিপদে না পড়ে যাই। আমাদের একটা গাইডলাইন ছিল- ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস। এই একটা গাইডলাইন নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিগুলো ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল।
‘শুধু আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বলে সবকিছু গ্রহণ করা যাবে না। দেশের প্রেক্ষাপটে এই গাইডলাইন বানাতে হবে। নজর রাখতে হবে ইম্পোর্টাররা যেন এটার মধ্যে পড়ে আমাদের জনগণের নিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ রুদ্ধ করতে না পারে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগে গত ১০ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ১৫ গুণ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএসইসি কমিশনার বলেন, ‘এটাকে অ্যাড্রেস করার জন্যই বিশ্ব বিনিয়োগকারী দিবসে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সের কথা বলা হয়েছে। সেখানে এনভায়রনমেন্ট এবং আরও দুটি বিষয়ের ওপর ফোকাস করা হয়েছে।
‘এনভায়রনমেন্টের দিকে তাকাতে গেলে অনেক বিষয়ই মনে রাখতে হবে। যেমন ভোগ বেশি করলে উৎপাদন বাড়াতে হবে। আবার উৎপাদন বেশি হলে এমিশন বেশি হবে। কিছু পক্ষ বলছে এনভায়রনমেন্ট রক্ষা করতে হলে ভোগ কমাতে হবে। তাহলে আবার উৎপাদন কমাতে হবে। গার্মেন্ট সেক্টরে আমাদের ৫০ শতাংশ নারী আছেন। উৎপাদন কমানোর পথে হাঁটলে তাদের কার্যক্ষমতা, নিয়োগ, চাকরি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি এই আন্দোলন, ইচ্ছা বা প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে নই। এনভায়রনমেন্টাল ডিগ্রেশন করেছে উন্নত বিশ্ব। তাতে তাদের উন্নতি হয়েছে। তার মানে আমরা পরিবেশ নষ্ট করব তা নয়। কিন্তু সেটি করতে গিয়ে যদি আমার নিয়োগ কমে যায়, সেটায় আমি আগ্রহী নই।
‘যে কারণে কিছু দেশ যেমন চীন, ভারত এমনকি আমেরিকাও অনেক ধরনের অ্যাগ্রিমেন্টে সই করেনি। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রত্যেক সেক্টরেই গভর্ন্যান্স বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে ড. শামসুদ্দিন বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে অনেক কিছু দেখতে হবে। গভর্ন্যান্সকে আমরা সেভাবে অ্যাড্রেস করছি না। বড় বড় ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করলে হবে না। সার্বিক চিন্তা করে করতে হবে। সেজন্য রেগুলেটরি সংস্থাগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
টেকসই উন্নয়নে সকলের অংশগ্রহণের ওপর জোর দেন শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ। বলেন, ‘টেকসই অর্থায়ন হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক। একজনকে বাদ দিয়ে বা কাউকে বাদ দিয়ে বা কিছু মানুষকে বাদ দিয়ে কখনোই অর্থনীতি টেকসই হবে না।
‘আমাদের দেশের সব প্রান্তে এখন ইন্টারনেট আছে, বিদ্যুৎ আছে। এগুলোকে ব্যবহার করেই দেশের সর্বস্তরের মানুষকে এতে অন্তর্ভুক্ত করে আমাদেরকে টেকসই অর্থনীতির কথা চিন্তা করতে হবে। এগুলো ব্যবহার করে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যেন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি, সেই প্রচেষ্টা থাকতে হবে।’
সিডিবিএলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সিসিবিএলের পরিচালক এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।
ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘বিনিয়োগকারী সপ্তাহের কার্যক্রম থেকে আমাদের শিক্ষার বিষয় আছে।
‘ডিএসইর বয়স ৬৫ বছর। এর মধ্যে প্রথম ৪০ বছর খুব বেশি কাজ হয়নি। ৯০ সালের দিকে কিছু কাজ হয়েছে। এর মধ্যে দুটি ধাক্কা খেয়েছি। এরপর বর্তমান কমিশন ও তার আগের কমিশনের সময়ে প্রচুর আইন-কানুন করেছি। এখন লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অত্যন্ত স্ট্রং। আইন-কানুন হয়ে গেছে। বিএসইসি এসব এস্টাবলিশ করার জন্য কাজ করছে। আশা করি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেয়ারবাজার এগিয়ে যাবে।’
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘যত সমালোচনায় হোক না কেন, আমাদের বাজার উন্নতি করছে তা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হব। হ্যাঁ, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও ধীরে ধীরে সেগুলো কাটিয়ে শেয়ারবাজার সত্যিকার অর্থেই দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের উৎস হয়ে উঠবে।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল বলেন, ‘সিডিবিএল ও সিসিবিএলসহ কেয়ারিং রেগুলেটর হিসেবে বিএসইসিতে কিছু ব্রিলিয়ান্ট মানুষ কাজ করছেন। তাদের নেতৃত্বে এই মার্কেটটা সাসটেইনেবল হবে, মানুষের মাঝে প্রভাব বিস্তার করবে এমনটা আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’