বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রবৃদ্ধি নামবে ৬ শতাংশে, মূল্যস্ফীতি ৯ ছাড়াবে: আইএমএফ

  •    
  • ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০১:০০

‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির চাপ এবং চীনের অর্থনীতিতে ধীর গতি- এই তিনটি মূল চ্যালেঞ্জের মুখে এখন বিশ্ব অর্থনীতি। চীনের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ধীরগতি থাকবে।’

সরকার মূল্যস্ফীতি কমার আশার কথা শুনালেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বলেছে আশঙ্কার কথা। ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক খাতের এই উন্নয়ন সংস্থাটি বলেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ১ শতাংশে উঠবে। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমে ৬ শতাংশে নেমে আসবে।

মঙ্গলবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত আইএমএফের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। আইএমএফের এবারের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু ‘জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট সামাল দেওয়া’। আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা শুরুর দিনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলো। সভাটি শেষ হবে ১৬ অক্টোবর।

কিন্তু আইএমএফ মনে করছে, দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় জ্বালানি তেলসহ বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়াবে ৯ দশমিক ১ শতাংশে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাবে বাংলাদেশে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অবশ্য আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুই মাসেই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি বা মাসভিত্তিক) মূল্যস্ফীতির পারদ ৯ শতাংশের ওপরে ওঠেছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে উঠেছিল; সেপ্টেম্বরে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে নেমেছে। জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি হচ্ছে আগের বছরের নির্দিষ্ট কোনো মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের তুলনায় পরের বছর একই মাসে ওই সূচক যতটুকু বাড়ে তার শতকরা হার। অন্যদিকে ১২ মাসের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির গড় করে গত এক বছরের গড় পরিসংখ্যান বের করা হয়।

আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড অতিমারির প্রভাব এবং চীনে অব্যাহত লকডাউনসহ অন্যান্য কারণে এ বছর এবং আগামী বছর বিশ্বব্যাপী আর্থিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে আমেরিকান ডলার আরও শক্তিশালী হতে পারে। মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়ে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যেতে পারে।

‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির চাপ এবং চীনের অর্থনীতিতে ধীর গতি- এই তিনটি মূল চ্যালেঞ্জের মুখে এখন বিশ্ব অর্থনীতি। চীনের মতো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ধীরগতি থাকবে।’

‘এ সব কারণে এ বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। আগামী বছর তা আরও কমে ২ দশমিক ৭ শতাংশে নামবে। ২০০১ সালের পর যা সর্বনিম্ন,’ বলেছে আইএমএফ।

প্রতিবেদনে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি নিয়ে আরও বলঅ হয়েছে, ‘মূল্যস্ফীতির চাপই সবচেয়ে নিকটবর্তী হুমকি, যা মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দেবে। ২০২২ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৮ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। পরের বছর তা কমে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ হতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে এ জন্য সদা সতর্ক থাকতে হবে।’

গত ৬ অক্টোবর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ দশমিক ১ শতাংশ নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

আর গত ২১ সেপ্টেম্বর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি তাদের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় বাংলাদেশে। গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে উচ্চমূল্যস্ফীতি নতুন চ্যালেঞ্জ বলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে সব করা হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আশার কথা শুনিয়ে বলেছেন, মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে যত ধরনের পদ্ধতি আছে, সব ব্যবহার করা হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মূল্যস্ফীতির আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসের তথ্য একসঙ্গে প্রকাশ করার সময় মন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। তবে এখন মূল্যস্ফীতি কমতির দিকে। সামনে তা আরও কমবে।’

পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে নজরদারি আরও কঠোর করার জন্য। এটা নির্বাহীভাবে করা যায়। পলিসিগতভাবে করা যায়। নানাভাবে করা যায়। ভ্যাট সরিয়ে দিলাম। ইমপোর্ট ডিউটি কমালাম। কাউকে রেয়াত দিলাম। কিছু আছে প্রাচীনকালের পদ্ধতি। যদিও এগুলো বর্তমানের সঙ্গে মেলে না। কোথাও কোনো মজুত থাকলে, সেখানে অভিযান চালানো। যদিও বাজার অর্থনীতির সঙ্গে এটা যায় না। কিন্তু দরকার হলে মাঝে মাঝে আমরা সেটাও করব। আমরা চাইব পলিসিগতভাবে বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে। মোদ্দা কথা, জিনিসপত্রের দাম সহনীয় রাখতে যা যা করার আছে, সব করা হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর