বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘অর্থনীতির নোবেলে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় হুঁশিয়ারির বার্তা’

  •    
  • ১১ অক্টোবর, ২০২২ ১৯:৪৮

প্রবীণ অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘ব্যাংকে টাকা আমানত রাখার তেমন কোনো বিকল্প নেই বলে ব্যাংকখাতের সমস্যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না; কিন্তু যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে তখন তার জন্য পুরো অর্থনীতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়। এবারের নোবেল পুরস্কার অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তা বহন করে এনেছে।’

সংকটকালীন অর্থনীতিতে ব্যাংকখাতের গুরুত্ব এবং ব্যাংকের পতন ঠেকানো কেন জরুরি তা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ গবেষণার জন্য অর্থনীতিতে নোবেল জয় করেছেন আমেরিকার অর্থনীতিবিদ বেন বারনাঙ্কে, ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডাইবভিগ।

নোবেল কমিটি বলেছে, এই তিন অর্থনীতিবিদের গবেষণা সমাজ কীভাবে আর্থিক সংকট মোকাবিলা করে তা বুঝতে সাহায্য করে। বিশেষ করে তারা সংকটের সময় অর্থনীতিতে ব্যাংকগুলোর ভূমিকা সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ার উল্লেখযোগ্য উন্নতি ঘটিয়েছেন৷ তাদের গবেষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, ব্যাংক ধস ঠেকানো কেন জরুরি সেটা তারা দেখিয়েছেন।

এই তিন অর্থনীতিবিদের নোবেল জয় অনেক তাৎপূর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন দেশের প্রবীণ অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলছেন, অর্থনীতিতে এবারের নোবেল পুরস্কারটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই পুরস্কার অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তাও বহন করছে।

২০২২ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তিনি লিখেছেন, ‘এ বছর আর্থিক খাতের বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য যে তিনজন অর্থনীতিবিদ নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন তারা সবাই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেছেন। তিনজনের বয়সই সত্তরের কাছাকাছি এবং এ বিষয়ে তাদের গবেষণার শুরু আশির দশকের প্রথম থেকে। শুধু উন্নত দেশের জন্যই নয়, স্বল্পোন্নত দেশের ব্যাংকিংখাতের ব্যবস্থাপনার নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও তাদের গবেষণা থেকে দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে।’

দিয়েছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ লিখেছেন, ‘এবারের নোবেল বিজয়ীদের কাজ আর্থিক খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে এবং তাদের বিশ্লেষণ অনেক বেশি বাস্তবমুখী, যা ব্যাংক ব্যবস্থার সম্ভাব্য ধস ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

‘তারা যে বিষয়গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন তার মধ্যে আছে ব্যাংক ব্যবস্থার প্রতি আমানতকারীদের আস্থার সংকট, ঋণ মঞ্জুর করার ব্যাপারে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব, ব্যাংকের তারল্য ও মূলধন ঘাটতির বিষয়ে সতর্কতা, সংকটাপন্ন ব্যাংকে বাঁচিয়ে রাখতে আমানতের উপর যথেষ্ট অঙ্কের বিমার ব্যবস্থা এবং যথা সময়ে সতর্ক না হওয়ার খেসারত হিসেবে পরবর্তীতে দেউলিয়া ব্যাংক বাঁচাতে সরকারের বড় অঙ্কের ব্যয়ের বোঝা বহন।’

বাংলাদেশের ব্যাংকখাতের জন্য সবগুলো বিষয়েই সতর্কতা জরুরি বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

তিনি লিখেছেন, ‘যতদূর মনে পড়ে আমাদের ব্যাংকগুলোতে গচ্ছিত আমানতপ্রতি মাত্র এক লাখ টাকা বিমাকৃত। ইতিমধ্যে ব্যাংকের দেউলিয়া হওয়া থেকে উদ্ধার করার ঘটনা দেখা গেছে, অনেক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দক্ষতার ঘাটতি নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে ও হচ্ছে, কিন্তু অবস্থার খুব উন্নতি হচ্ছে বলা যাবে না।

‘ব্যাংকে টাকা আমানত রাখার তেমন কোনো বিকল্প নেই বলে ব্যাংকখাতের সমস্যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না; কিন্তু যখন কোনো বিপর্যয় ঘটে তখন তার জন্য পুরো অর্থনীতিকে অনেক মূল্য দিতে হয়। এবারের নোবেল পুরস্কার অনেক দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জন্য হুঁশিয়ারি বার্তা বহন করে এনেছে।’

এবার আমেরিকান তিন অর্থনীতিবিদকে নোবেল দেয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনায় নোবেল কমিটি বলেছে, ‘আধুনিক ব্যাংকিং গবেষণা স্পষ্ট করেছে, কেন আমাদের ব্যাংক প্রয়োজন, সংকটের সময় কীভাবে এই খাতকে কম ঝুঁকিপূর্ণ রাখা যায় এবং কীভাবে ব্যাংকের পতন আর্থিক সংকটকে আরও ঘণীভূত করে। বেন বারনাঙ্কে, ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডাইবভিগ ১৯৮০-এর দশকে এই গবেষণার ভিত্তি দিয়েছিলেন। আর্থিক বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থিক সংকট মোকাবিলায় তাদের বিশ্লেষণগুলো বাস্তবতার বিচারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

‘অর্থনীতি সচল রাখতে হলে সঞ্চয়কে বিনিয়োগের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে একটি দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি বিদ্যমান। অপ্রত্যাশিত কোনো ব্যয়ের মুখোমুখি হলে সঞ্চয়কারীরা তাদের সঞ্চিত অর্থ তাৎক্ষণিক তুলতে চান, অন্যদিকে বাড়ির মালিক ও ব্যবসায়ীদের সামনে এই নিশ্চয়তা থাকা দরকার যে, তারা ঋণ নেয়ার পর নির্ধারিত সময়ের আগে পরিশোধ করতে বাধ্য হবেন না।’

বেন বারনাঙ্কে, ডগলাস ডায়মন্ড ও ফিলিপ ডাইবভিগ তাদের দেয়া তত্ত্বে দেখিয়েছেন, ব্যাংকগুলো কীভাবে এ সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান দেয়। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তারা অনেক সঞ্চয়কারীর কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করে, আমানতকারীরা যখন ইচ্ছা তাদের অর্থ তুলতে পারেন, পাশাপাশি ঋণগ্রহীতারা দীর্ঘমেয়াদে ঋণ পান।

নোবেল কমিটি বলেছে, ‘তাদের (৩ নোবেলজয়ী) বিশ্লেষণ এটাও দেখিয়েছে, দ্বান্দ্বিক দুটি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে ব্যাংকগুলো তাদের আসন্ন ধস সম্পর্কিত গুজবের মুখেও পড়তে পারে। বিপুলসংখ্যক সঞ্চয়কারী একযোগে তাদের আমানত তুলতে ছুটে গেলে গুজবটি পরিপূর্ণ মাত্রা পায় এবং এভাবে চালু একটি ব্যাংক ধসে পড়তে পারে। এমন বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে সরকার আমানত বিমা প্রদান এবং শেষ অবলম্বন হিসেবে ঋণদাতার ভূমিকা নিয়ে ব্যাংকের পতন ঠেকাতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর