কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নিজেদের লাভের জন্য পুঁজিবাজারের ক্ষতি করছে বলে জানিয়েছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার আব্দুল হালিম। বলেছেন, কিছু ব্রোকারেজ হাউজ বিনিয়োগকারীদের তো বটেই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ এমনকি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও মিথ্যা তথ্য দেয়।
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বা ডিএসই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সোমবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। আয়োজনের সহযোগী হিসেবে ছিল ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ বা ডিবিএ।
এ সময় হালিম জানান, কিছু কিছু ব্রোকারেজ হাউজে বড় ধরনের অনিয়ম পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোর নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
২০১০ সালের মহাধসের এক দশক পর ২০২০ সালে পুঁজিাজার ঘুরে দাঁড়িয়ে ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করলেও বছরের শেষ সময় থেকে সংশোধনে যাওয়ার পর অবস্থান ফিরে পায়নি।
এর মধ্যে মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য ভালো করার ইঙ্গিত দিয়েও পরে আবার ধপাস হয়েছে পুঁজিবাজার। এই যে উত্থান পর্ব দেখা যায়, তা হয় অল্প কিছু শেয়ারের অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধির কারণে। কিছু কোম্পানির দর বাড়তে থাকে তো বাড়তেই থাকে। আরও বাড়বে ভেবে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যেই শেয়ার কেনা শুরু করতে থাকেন, ওমনি পড়তে থাকে দাম।
এভাবে নানা সময় নানা কোম্পানিতে বিনিযোগ করে মানুষের বিপুল পরিমাণ টাকা আটকে যায়, যে কারণে বাজারে লেনদেনে দেখা দেয় ঘাটতি। আর এটিও পুঁজিবাজার গতিশীল না হওয়ার একটি কারণ।
পুঁজিবাজার উন্নয়নে একটি বাধার কথা উল্লেখ করে বিএসইসি কমিশনার হালিম বলেন, ‘কিছু কিছু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের কিছু লাভের জন্য বাজারের ক্ষতি করেন।’
তারা কারা সেই বিষয়টি প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ‘বিএসইসি ২০১৫ সালে একটি ব্রোকারেজে গিয়ে বেশ কিছু অনিয়ম দেখতে পায়। তখন তারা জানায় তারা আইন জানত না। আবার ২০১৭ সালে একই কাজ করে ধরা পরে সেই ব্রোকারেজ। এর পর সব মিলিয়ে ৫ বার ধরা পরার পরে তারা এখন ঠিক ভাবে কাজ করছে।’
হালিম বলেন, ‘কোনো কোনো ব্রোকারেজ এতটাই বেপরোয়া যে তারা শুধু বিনিয়োগকারীদের যে মিথ্যা তথ্য দেয়, তাই না। তারা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এমনকি বিএসইসিকেও মিথ্যা তথ্য দেয়। এগুলো বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার সঙ্গে যায় না।’
বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ পালনে ডিএসই ও ডিবিএর যৌথ আয়োজনে সেমিনারে বক্তারা
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সততা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি। বলেন, ‘আমরা যদি প্রযুক্তি ব্যবহার করি, তাহলে আমাদের স্বচ্ছতা বাড়বে। কিন্তু প্রযুক্তির পেছনে যারা কাজ করে তাদের ঠিক হতে হবে। তাদেরকে অসৎ অভিপ্রায় থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা ভালো ভালো কথা বলব, কিন্তু সঠিক কাজটা করব না, সেটা হলে তা হবে না। আমাদের অনিয়ম বন্ধ করতে হবে।’
বাংলাদেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে পুঁজিবাজার বড় করার বিকল্প নেই বলেও মনে করে আব্দুল হালিম। বলেন, ‘২০২৫ সালে আমাদের জিডিপি হবে ৬০০ বিলিয়ন ডলার। যদি সে সময় আমাদের পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন ৫০ শতাংশ বা ৩০০ বিলিয়ন ডলার করতে চাই, তাহলে আমাদের বর্তমানের তিন গুণ বড় করতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন ডিবিএ সভাপতি গ্লোবাল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিচার্ড ডি রোজারিও।
তিনি বলেন, ‘সামনের যে দিন গুলো আসছে সেখানে টিকে থাকতে হলে ব্রোকারেজ হাউজ গুলোকে প্রযুক্তিগতভাবে আরও উন্নতি করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘২০২২ সালের মধ্যে ডিএসইর আধুনিক ডাটা সেন্টারের কাজ শেষ হবে।’
আলোচনা অনুষ্ঠানের বিষয় ছিল ফিনটেক কিভাবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের ভবিষ্যত বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে পরে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘সামনের যুগ হচ্ছে ফিনটেক এর যুগ। সামনে সাধারণ ব্রোকারেজ ব্যবসা আর পয়সা দেবে না। ভারতে গত কয়েক বছরে ট্রেডিশনাল ব্রোকারেজ ব্যবসায়ীরা মার খেয়ে গেছে। মাত্র ৩ বছরের মধ্যে ভারতের ২০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার দখল করেছে একটি নতুন ব্রোকারেজ, যারা উন্নত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করেছিল।
‘জার্মানিতে ৩৬ শতাংশ বিনিয়োগকারী রোবো অ্যাডভাইজার ব্যবহার করে। বাংলাদেশের ব্রোকারেজ গুলোকেও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে টিকে থাকতে হলে।’