বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় জরুরি সমন্বিত নীতি

  •    
  • ৮ অক্টোবর, ২০২২ ২০:৪৯

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে বহু অংশীজন ও খাত সম্পৃক্ত। তাই নীতি প্রণয়নের আগে গবেষণা করে সব বেসরকারি ও সরকারি খাতের অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’

দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত নীতি প্রণয়ন জরুরি। আর এটি নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।

রাজধানীর একটি হোটেলে শনিবার ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ও ইউনিলিভারের এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নিশ্চিত করতে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়াটি লাভজনক করা গেলে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হবেন।’

এ ক্ষেত্রে সার্কুলার বা চক্রাকার প্রক্রিয়া অনুসরণ করাকে কার্যকর সমাধান হিসেবে মনে করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী।

সার্কুলার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ভ্যালু চেইনের অংশীদারদের ক্ষমতায়ন ও অনানুষ্ঠানিক খাতকে সামগ্রিক সহযোগিতা করার ব্যাপারে গুরুত্ব দেন তিনি।

ভ্যালু চেইনে অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ভাঙ্গারি ও বর্জ্য সংগ্রাহকরা রয়েছেন। এই খাতটি অনানুষ্ঠানিক হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত উল্লেখ করে সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

তাজুল ইসলাম মনে করেন কার্যকর প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি ও বেসরকারি খাতগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।

সঠিক পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে টেকসই প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বিত নীতি প্রণয়ন জরুরি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি জটিল প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে বহু অংশীজন ও খাত সম্পৃক্ত। তাই নীতি প্রণয়নের আগে গবেষণা করে সব বেসরকারি ও সরকারি খাতের অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’

এ নিয়ম মেনে নীতি করলে তার সুফল মিলবে বলে মনে করেন পরিবেশমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, ভিশন ২০৪১-এ টেকসই নগরায়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হতে হলে প্লাস্টিক বর্জ্যকে টেকসই উপায়ে পুনঃব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এফবিসিসিআই ও ইউনিলিভারের এক সেমিনারে অতিথিরা।

স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব এই খাতে মূল চ্যালেঞ্জ। এক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে উন্নত দেশের মতো বর্জ্যের উৎসে এগুলোকে আলাদা করার সংস্কৃতি তৈরি করা প্রয়োজন।’

কেননা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার টেকসই মডেল বাস্তবায়নে উৎসে পৃথকীকরণ সবচেয়ে জরুরি বিষয়। উৎসেই বিভিন্ন বর্জ্য পৃথক করা হলে পুরো সংগ্রহ ও পুনঃপ্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তুলবে বলে মত দেন তিনি।

ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও ও এমডি জাভেদ আখতার বলেন, ‘আমরা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিটি কর্পোরেশনগুলোর সঙ্গে বেশকিছু পাইলট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এ খাতে সহযোগিতা না পেলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই ধরনের উদ্যোগ নিতে উৎসাহিত হবে না।’

তিনি বলেন, ‘একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠান এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এজন্য পুরো ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে।

সবার সম্মিলিত উদ্যোগে ভ্যালু চেইনে মূল্য সংযোজন করে সামগ্রিক পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ও এফবিসিসিআই-এর প্যানেল বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. ইজাজ হোসাইন।

তিনি বলেন, ‘সরকার নীতি পর্যায়ে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভাগুলোর কারিগরি ও আর্থিক সক্ষমতার অভাব মূল স্যমস্যা। এ কারণে সঠিক প্রক্রিয়ায় বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ ও উৎসে বর্জ্য পৃথক করা যাচ্ছে না। যা রিসাইকেলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে।’

স্বল্পমেয়াদে ম্যাটেরিয়াল রিকভারি ফ্যাসিলিটি (এমআরএফ) স্থাপন করে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে সহজে এবং কম খরচে বিকল্প জ্বালানি তেল (আরডিএফ) উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান ইজাজ।

দীর্ঘমেয়াদে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন দেশের সফল মডেলগুলোকে লোকালাইজেশন বা দেশের জন্য উপযোগী করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিপিজিএমইএ-এর সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, ‘প্লাস্টিক খাত দেশের সব শিল্পের সহযোগী চালিকা শক্তি।

প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকারি সংস্থার আরও বিনিয়োগ, অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানো, বেসরকারি খাতের উদ্যোগে প্রণোদনা ও কর সুবিধা দেয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

সেমিনারের প্যানেল আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ইউ জু এলিসন এল বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শক্তিশালী করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়িক খাতেও কাজ করতে প্রস্তুত। এজন্য কার্যক্রম প্রণয়ন ও বিনিয়োগে আমরা সাহায্য করতে চাই।’

প্লাস্টিকের বিকল্প উদ্ভাবন এবং এর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে একটা বৃত্তাকার অর্থনীতি তৈরির জন্য সিটি কর্পোরেশন ও উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআই-এর উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম সচিব ইকবাল হাবিব, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মইনুল ইসলাম এবং বাংলাদেশ পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও খাদেম মাহমুদ ইউসুফ।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন আলমগীর, মো. আমিন হেলালী, হাবীব উল্ল্যাহ ডন, পরিচালকবৃন্দ ও এফবিসিসিআই মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউনিলিভার বাংলাদেশের পরিচালক, কর্পোরেট কমিউনিকেশন ও পার্টনারশিপ প্রধান শামীমা আক্তার।

এ বিভাগের আরো খবর