বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অজুহাতের শেষ নেই, ঘোষণার পরও কমছে না দাম

  •    
  • ৭ অক্টোবর, ২০২২ ০৯:৪৪

গত সোমবার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা আর খোলা তেলের দাম লিটারে কমবে ১৭ টাকা। বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়, নতুন দাম কার্যকর হবে পরদিন থেকে। তবে এই ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে আরও তিনটি দিন। এখনও আগের বর্ধিত দরেই তেল কিনতে হচ্ছে দেশবাসীকে। ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে নতুন দামের তেল দোকানে তুলছে না। একই কাজ করছে সুপারশপগুলোও।

বোতলজাত যে সয়াবিন তেল ১৭৮ টাকা লিটারে কেনার কথা ক্রেতাদের, তা এখনও কিনতে হচ্ছে ১৯২ টাকা করে।

দাম বাড়ানোর ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গেই বাড়তি দামের তেলের বোতল বাজারে চলে এলেও দাম কমানোর ঘোষণা দেয়ার তিন দিন পরও নতুন বোতলের দেখা নেই বাজারে।

কাঁচাবাজারের সাধারণ মুদির দোকান তো বটেই, এমনকি চেইন সুপার শপগুলোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোও সয়াবিন তেল বিক্রি করছে আগের দরে ১৯২ টাকা লিটার হিসাবে। যুক্তি হিসেবে সবাই বলছে, হ্রাসকৃত দামের বোতল এখনও পৌঁছেনি তাদের হাতে।

গত সোমবার ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে কোম্পানি মালিকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৪ টাকা আর খোলা তেলের দাম লিটারে কমবে ১৭ টাকা।

বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই জানিয়ে দেয়া হয়, নতুন দাম কার্যকর হবে পরদিন থেকে।

তবে এই ঘোষণার পর পেরিয়ে গেছে আরও তিনটি দিন। এখনও আগের বর্ধিত দরেই তেল কিনতে হচ্ছে দেশবাসীকে।

সুপারশপগুলোতে আগের পুরাতন দামের বোতল দিয়েই তেলের কর্নার ভরা।

এই বিষয়টি এর আগেও বারবার দেখা গেছে। সবশেষ গত ২৩ আগস্ট যখন লিটার প্রতি দাম ৭ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা আসে, তখন পরের দিন সকাল থেকেই বাড়তি দরে তেল কিনতে হয় মানুষকে। আর নতুন দাম উল্লেখ করে তেলের বোতল ছেয়ে যায় বাজারে।

নতুন তেল তুলছে না কেউক্রেতাদেরকে পুরোনো তেলের বোতল কিনতে বাধ্য করতে একজোট একটি প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে খোলাবাজার, সুপারশপ-সব জায়গায়।

আগের বোতল স্টকে থেকে যাওয়ায় হ্রাসকৃত দামের তেল কিনতে আগ্রহী নন খুচরা বিক্রেতা এমনকি সুপারশপগুলো। তারা বলছেন, পুরাতনগুলো শেষ হলে পরে নতুন তেল আনা হবে।

এ ক্ষেত্রে দুর্গাপূজার ছুটিকে অজুহাত হিসেবেও দাঁড় করিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, যদিও এই পূজায় বাজারের কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকেনি।

রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংক রোডে স্বপ্ন, উত্তর বাড্ডায় ডেইলি শপ, টিকাটুলির ইউনিমার্টের বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে আগের পুরাতন দামের বোতল দিয়েই তেলের কর্নার ভরা। এক লিটার, দুই লিটার এবং পাঁচ লিটারের সবগুলো বোতলই আগের দামের সিলযুক্ত। নতুন দামের কোনো বোতল পাওয়া যায়নি একটি সুপার শপেও।

কর্মকর্তারা বলছেন, খুচরা বাজারে চেয়ে সুপার শপে তাড়াতাড়ি নতুন দামের তেল পাওয়া যাবে। ভোক্তারা নতুন দামের পণ্যটা যেন খোলাবাজারের চেয়ে অন্তত একদিন আগে হলেও পান, সে চেষ্টা চলছে বলেও উল্লেখ করেন একজন।

মীনা বাজারের সরবরাহ ব্যবস্থার প্রধান আবু রাইহান ভূঁইয়া আলবেরুনী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সব সময় নতুন দামে তেল আমরা দুইতিন দিনের মধ্যেই পেয়ে যাই। এরপর নতুন দামেরটাও থাকে পুরাতন দামেরটাও থাকে সেখান থেকে ক্রেতারা যেটা পছন্দ করে সেটাই নেয়। তবে যদি নতুন দাম আর পুরাতন দামের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি থাকে তাহলে কোম্পানিগুলো দামটা সমন্বয় করে দেয়। তখন আমরা বিভিন্ন ছাড় দিয়ে সেটা বিক্রি করে ফেলি। এবারও নতুন চালান চলে আসবে খুব শিগগিরই। পূজার বন্ধের কারণে হয়ত একটু দেরি হচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহের শুরুতেই চলে আসবে আশা করি।’

এসিআই লজিস্টিকসের সুপার শপ স্বপ্নের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান মিলু বলেন, ‘আমরা নতুন তেল অর্ডার দিয়েছি। অপেক্ষায় আছি কোম্পানিগুলো কবে আমাদের তা সরবরাহ করবে। আমাদের গ্রাহকরা নতুন দামের পণ্য চাচ্ছে। তাদের চাহিদা মেটাতে আশা করছি খুব দ্রুতই নতুন দামে তেল বিক্রি করা সম্ভব হবে।’

ইউনাইটেড গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনিমার্টের ক্রয় ব্যবস্থাপক নাজমুল হুদা বলেন, ‘যেদিন থেকে দাম নির্ধারণ হয়েছে সেদিন থেকেই আমরা নতুন দামে পেতে অর্ডার করেছি। এখনও আমাদের কাছে নতুন দামের তেল এসে পৌঁছায়নি। যেহেতু আমরা অনেক বড় একটা পরিমাণ অর্ডার করে থাকি সেহেতু এর প্রক্রিয়াটাও একটু দেরি হয়।’

এখন এক সপ্তাহ সময় চায় কোম্পানিভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সমিতি বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম মোল্লা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দাম নির্ধারণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তো মার্কেটে মাল যায় না। মার্কেটে নতুন মাল যেতে কমপক্ষে সময় লাগে এক সপ্তাহ।

‘সবেমাত্র সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন ব্যাংক থেকে পে অর্ডার আনবে, তা জমা দেবে তারপর স্লিপ নেবে। আপনি ব্যাংকে গিয়ে দেখেন কয় শ গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। এদের সবাইকে দিতেই তো এক সপ্তাহ সময় লাগবে।’

দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে যায় আর কমলে তা কার্যকর হতে অনেক সময় লাগে এমন প্রশ্নের জবাবে এ নির্বাহী বলেন, ‘আমি নিজেও একজন ভোক্তা, আমিও এর শিকার। দাম বাড়লে তা তাৎক্ষণিক বেড়ে যায় আর কমলে তা কমতে লাগে সপ্তাহের বেশি। আমরা জিম্মি হয়ে গেছি, এখানে কিছুই করার নেই। আমি নিজেও বাকি সবার মতোই একজন ভোক্তা।’

সুপারশপগুলোতে আগের পুরাতন দামের বোতল দিয়েই তেলের কর্নার ভরা।

সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘দাম কার্যকর হওয়ার পর থেকেই আমরা উৎপাদন শুরু করে দিয়েছি। উৎপাদনের পর মালটা পৌঁছাতে তো দুয়েকদিন সময় লাগে। যেসব ব্যবসায়ী পুরাতন দামে মাল কিনেছে তারা তো লসে মাল বিক্রি করবে না। আশা করি এক সপ্তাহের মধ্যেই সবার কাছে নতুন দামের তেল পৌঁছে যাবে।’

টিকে গ্রুপের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড অপারেশনসের উপ-ব্যবস্থপনা পরিচালক (ডিজিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা ৩ তারিখ থেকেই নতুন দামে মাল প্রস্তুত শুরু করেছি। এখন সাপ্লাই চেইনে কোনো ঝামেলা না হলে খুব দ্রুতই নতুন দামের মাল পৌঁছে যাবে। এখানে গ্যাপটা শুধু সাপ্লাই চেইনের।’

নতুন মূল্যে পণ্য পেতে হলে অর্ডার করা প্রয়োজন উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা দাম পরিবর্তন করার পর দেখা গেল কোনো সুপার শপে তেলের ডেলিভারি নেই, তখন তো আর তাদের জোর করে মাল দেয়া যাবে না। নতুন দামে মাল পেতে হলে তাদের নতুন করে অর্ডার করতে হবে। তাই সুপার শপগুলোর নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে সমন্বয় করে নতুন দামে মাল অর্ডার করা। আমরা নতুন দাম অনুযায়ী সমন্বয় করে দিয়ে থাকি। এটা বলা যায় যার যার নৈতিকতার ওপর নির্ভর।’

মেঘনা গ্রপ অব ইন্ডাস্টির ব্রান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) আবুল হাসনাত শাকিল বলেন, ‘বাজারে যেসব পুরাতন মূল্যের মাল থাকে সেগুলো তো আর সরিয়ে আনা সম্ভব না। নতুন দাম যেদিন থেকে কার্যকর তারমানে সেদিন ফ্যাক্টরি থেকে যে প্রোডাকশন হবে তা নতুন দামে হবে। এর জন্য তিন থেকে চার দিন আর সারা বাংলাদেশে কমপক্ষে সাত দিন সময় লাগে।’

এ বিভাগের আরো খবর