বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যুদ্ধের ধাক্কায় প্রবৃদ্ধি ৬.১ শতাংশে নামবে: বিশ্বব্যাংক

  •    
  • ৬ অক্টোবর, ২০২২ ২৩:৩৪

বিশ্বব্যাংক বলছে, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ। ওই দুই দেশের মত বাংলাদেশের রিজার্ভ বিপদজনকভাবে তলানিতে নেমে যায়নি, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও চলছে না; মূল্যস্ফীতি এখনও ১০ শতাংশের নিচেই আছে।

দুই বছরের করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশ নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে (২০২৩ সালের জুন শেষে) বাংলাদেশের অর্থনীতি ৬ দশমিক ১ শতাংশ বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল সংস্থাটি।

তবে এই প্রবৃদ্ধি সংস্থাটির আগের দেয়া পূর্ভাভাসের চেয়ে দশমিক ৬ শতাংশ পয়েন্ট কম। গত জুন মাসে বিশ্ব্যাংক বলেছিল, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, এই প্রবৃদ্ধি মালদ্বীপ ও ভারত ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে ক্যালেন্ডার বছরকে আর্থিক বছর হিসাবে ধরা হয়। সে হিসাবে ২০২৩ সালে মালদ্বীপে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ নেগেটিভ প্রবৃদ্ধি হবে। ভারতে আর্থিক বছর হিসাব করা হয় এপ্রিল-মার্চ। সে হিসাবে ২০২৩-২৪ ভারতে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

বাংলাদেশসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর আর্থিক বছর হিসাব করা হয় জুন-জুলাই। সে হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে নেপালের প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া ভূটানে ৪ দশমিক ১ শতাংশ, পাকিস্তানে ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ওলোটপালট হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতির হালচাল নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। যেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে আশার কথা বলা হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত বিশ্বব্যাংক সদর দপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার পর যুদ্ধের ধাক্কা এবং শ্রীলঙ্কায় ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও পাকিস্তানের বন্যার কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে আসবে। জুনের পূর্বাভাসের চেয়ে যা ১ শতাংশ পয়েন্ট কম।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলা হয়, করোনা মহামারির ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন করেছিল দেশটি। কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো যুদ্ধের ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার মধ্যেও ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হয়। যুদ্ধের কারণে তা কমে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক ১ শতাংশ অর্জিত হবে। আর আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অর্জিত হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি নেগেটিভ থেকে পজিটিভে গিয়ে ১ শতাংশ হবে। পাকিস্তাতে বেড়ে ৩ দশমিক ২ শতাংশ হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল থাকবে এবং আগামী অর্থবছরেও তা অব্যাহত থাকবে।

বৈশ্বিক ধাক্কা ভালোভাবে সামলাচ্ছে বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাংক বলেছে, বৈশ্বিক অস্থিরতার ধাক্কা বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলক ভালোভাবে সামলাচ্ছে বাংলাদেশ। তানাহলে প্রবৃদ্ধি আরও কমে যেতো। মূলত বৈশ্বিক সংকটের বিস্তৃত পরিসর বিবেচনায় নিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে এই পরিবর্তন আনার কথা বলেছে আর্থিক খাতের এই বিশ্ব সংস্থাটি।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, আর্থিক সংকট দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে চাপে ফেললেও, কয়েকটি দেশ অন্য দেশগুলোর তুলনায় ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারছে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

প্রতিবেশী ভারতের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আগের হিসাবের চেয়ে পুরো এক শতাংশ পয়েন্ট কমিয়েছে সংস্থাটি। নতুন প্রাক্কলন বলছে, চলতি অর্থবছরে ভারত সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, কোভিড-১৯ মহামারির দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট, পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা, বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীর গতি এবং ইউক্রেন যুদ্ধ যোগ হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া একটি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক ধাক্কা খেয়েছে।

এ অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি কমে আসছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশগুলোর এখন উচিত অর্থনীতির ‘সহনশীলতা’আরও বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেওয়া।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ভারতে রপ্তানি ও সেবা খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর গতি গড় বৈশ্বিক ঘুরে দাঁড়ানোর হারের চেয়ে বেশি। সেদেশের বৈদেশিক মুদ্রার যথেষ্ট মজুতও অর্থনীতির জন্য একটি সুরক্ষা হিসেবে কাজ করেছে।

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে আসায় এবং ‘ব্যালেন্স অব পেমেন্টে’এর চাপ বাড়তে থাকায় দক্ষিণ এশিয়ায় শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পর, তৃতীয় দেশ হিসেবে জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আর্থিক সহায়তার আবেদন করে বাংলাদেশ।

শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের মতো ঝুঁকিতে নেই বাংলাদেশ

‘তবে অন্য দুই দেশের মত বাংলাদেশের রিজার্ভ বিপদজনকভাবে তলানিতে নেমে যায়নি, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতাও চলছে না, এবং মূল্যস্ফীতির হারও এখনও ১০ শতাংশের নিচেই আছে, যদিও তা সাম্প্রতিক হিসাবে ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছেছে,’ বলছে বিশ্ব ব্যাংক।

ডলারের সাম্প্রতিক চাঙাভাব, আর ডলারের বিপরীতে ইউরোর দরপতনে বাংলাদেশ থেকে আমদানি পণ্যে বেশি খরচ করতে হচ্ছে ইউরোপীয় ভোক্তাদের, কারণ দুই পক্ষের বাণিজ্যের লেনদেন ডলারে মীমাংসা হয়ে থাকে এবং স্বল্প মেয়াদে ডলারের দর যথেষ্ট চড়া অবস্থায় আছে।

এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকা দর হারালেও বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা এর সুবিধা পাচ্ছেন না।

বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক রাইজার বলেন, ‘মহামারি, বৈশ্বিক তারল্য ও পণ্যমূল্যে হঠাৎ পরিবর্তন, কিংবা আবহাওয়ার চরম বিপর্যয়কে এক সময় ঝুঁকির তালিকায় শেষ দিকে রাখা হত। কিন্তু গত দুই বছরের মহামারির ধাক্কার ঠিক পরপরই এই তিন বিপর্যয় দ্রুত দেখা দিয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনীতিকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘এসব ধাক্কা মোকাবেলার জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোকে মজবুত আর্থিক কাঠামো ও মুদ্রার মজুত গড়তে হবে এবং নিজেদের জনগণের সুরক্ষা বাড়াতে সীমিত সম্পদের পুনর্বিন্যাস করতে হবে।’

বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানি পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং বাণিজ্যে বিধিনিষেধ এই অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে দক্ষিণ এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়ছে এবং ধারণা করা হচ্ছে এ বছর তা ৯ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। তবে এরপর তা কমতে শুরু করবে।

‘বিশেষ করে এ অঞ্চলের দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর প্রকৃত আয় ব্যাপকভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে, যারা তাদের আয়ের সিংহভাগ খাবার কেনার পেছনে খরচ করতে বাধ্য হন।’

এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির সময় মানুষের চলাফেরায় বিধিনিষেধ থাকায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে যারা অনানুষ্ঠানিক পেশায় নিয়োজিত ছিলেন, তাদের অনেকেই দারুণ ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

অবশ্য মহামারির পরের দিককার পরিস্থিতি এটাও দেখিয়েছে যে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অভিবাসন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিশ্ব ব্যাংকের জরিপের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের শেষ ভাগ থেকে ২০২২ এর প্রথম ভাগ পর্যন্ত, যে অঞ্চলগুলো মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেসব অঞ্চলে অভিবাসীদের প্রবাহ, যেসব অঞ্চল তুলনামূলক কম ক্ষতির মুখে পড়েছে সেসব অঞ্চলের চেয়ে বেশি ছিল, যা কোভিড-১৯ পরবর্তী ধাক্কা সামলাতে শ্রমের চাহিদা ও যোগানের ক্ষেত্রে একটি সমতা প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।

বাংলাদেশ সরকার চলতি অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। আর গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশে আটকে রাখতে চেয়েছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় বাংলাদেশে। গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে উচ্চমূল্যস্ফীতি নতুন চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক ।

গত ২১ সেপ্টেম্বর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি তাদের হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

এ বিভাগের আরো খবর