বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৬ টাকা বেশি চিনির দাম

  •    
  • ১ অক্টোবর, ২০২২ ১৮:০৫

‘আমরা তো লস দিয়ে ব্যবসা করছি। ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের ধরে। গোড়ায় হাত দিতে পারে না। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। কয়েকদিন তাই বেচাও বন্ধ রেখেছিলাম।’

সরকার নির্ধারিত দামে নয়, তার চেয়ে কেজিতে ৬ টাকা বেশিতে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে চিনি। তবে বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে কম মূল্যে পাওয়া যাচ্ছে পাম তেল।

বিক্রেতারা জানান, চিনি নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশিতে কিনতে হচ্ছে বলেই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ আরও কয়েকটি বাজার ঘুরে শনিবার দেখা গেছে, প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। আর পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ৯৫ টাকায়। অথচ সরকারিভাবে দাম বেঁধে দেয়া হয়েছে ৮৪ ও ৮৯ টাকা।

সেই হিসাবে, খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির কেজিতে ৬ টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২২ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে পাম সুপার খোলা, পরিশোধিত চিনি খোলা ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ খুচরা দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, পাম সুপার খোলা তেল প্রতি লিটার সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৩ টাকা, প্রতি কেজি পরিশোধিত খোলা চিনি ৮৪ টাকা ও পরিশোধিত প্যাকেটজাত খোলা চিনির দাম ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

২৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই মূল্য কার্যকর করার কথা উল্লেখ করা হয়। ওই সময় থেকে আরও ৫ দিন পেরোলেও বাজারে চিনির দর কার্যকর হয়নি।

এর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা বলছেন, প্রতি কেজি চিনি কিনতে হচ্ছে ৮৭ টাকায়। খুচরা বিক্রি করতে কেজিতে প্রায় ১০ গ্রাম করে ঘাটতি যায়। এতে করে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় ৪ টাকার মতো বেশি দামে চিনি কিনতে হচ্ছে। ফলে কেজিতে ২ টাকার মতো মুনাফা নিয়ে ৯০ টাকায় চিনি বিক্রি করছেন তারা।

কারওয়ান বাজারের শাহ মিরান জেনারেল স্টোরের শাহজাহান মনা বলেন, ‘আজকে এক বস্তা চিনি দাম চার হাজার ৩৫০ টাকা। এক বস্তাতে থাকে ৫০ কেজি। এক কেজি করে মেপে চিনি বিক্রি করতে ১০ গ্রাম করে ঘাটতি যায়। বস্তা প্রতি লেবার খরচ ১০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনিতে খরচ পড়ছে ৮৭ টাকার বেশি। আমরা বেচি ৯০ টাকায়।’

তিনি বলেন, ‘প্যাকেটজাত চিনির এক বস্তায় থাকে ২০ কেজি। দাম নিচ্ছে এক হাজার ৮৪০ টাকা। ৯২ টাকা কেনাই পড়ছে। সেখানে আমরা দুই, তিন টাকা লাভে বিক্রি করছি। প্রতি কেজির দাম নিচ্ছি ৯৫ টাকা।’

জাহিদ জেনারেল স্টোরের জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘এক বস্তা চিনির কেনা দাম চার হাজার ৫০০ টাকা। তাহলে কয় টাকায় বেচতে হবে, বলেন?’

তিনি বলেন, ‘পাইকারদের জিজ্ঞেস করেন, দাম বেশি কেন? আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে, তাই বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। তার ওপর দাম নিয়ে ভেজাল হওয়ায় চিনি সেভাবে উঠাইনি, বিক্রিও করছি না।’

পাইকারি বিক্রেতা আবুল কাশেম দিলেন একই তথ্য। সোনালী ট্রেডার্সের এই স্বত্বাধিকারী ফ্রেশ চিনির ডিলার। তিনি বলেন, ‘প্রতি বস্তা চার হাজার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছি।’

৮৪ টাকায় চিনি বিক্রির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই দামে কিনতেও পাই না, বেচতেও পারি না।’

কোম্পানির কাছে জানতে চান কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ নিয়ে তো কথাই বলা যায় না। কোম্পানি কোনো কথা বলতে চায় না।’

নাম প্রকাশ করার অনুরোধ জানিয়ে আরেকজন ডিলার বলেন, ‘এমনও হয় যে, মাল কেনার সময় কোম্পানি রশিদ দেবে সরকার নির্ধারিত দামে, কিন্তু টাকা নেবে বেশি দামে।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা তো লস দিয়ে ব্যবসা করছি। ম্যাজিস্ট্রেট এসে আমাদের ধরে। গোড়ায় হাত দিতে পারে না। কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না। কয়েক দিন তাই বেচাও বন্ধ রেখেছিলাম।’

চিনির আরেক ডিলার জামাল ট্রেডার্সের জামাল হোসেন বলেন, ‘কোম্পানি দাম কমায়নি। আমি আলাপ করেছি, দাম কমাবে। কমালে আমাদেরকে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। আমাদের যে প্যাকেটজাত মাল (চিনি) আছে, বেশি দরে কেনা। সেটাই বিক্রি করছি।’

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দরের চেয়ে ১৬ থেকে ১৮ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে পাম তেল। প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায়।

বিক্রেতা মামা-ভাগিনা স্টোরের আবু বক্কর বলেন, ‘প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি করছি ১১৫ টাকায়। আর কেজির হিসাব ধরলে ১২৫ টাকার মতো পড়বে।’

পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা সেকান্দার এন্টারপ্রাইজের মো. সেকান্দার বলেন, ‘আমরা প্রতি লিটার পাম তেল বিক্রি করছি ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায়। আর কেজি হিসাবে নিলে ১২৫ টাকায় বিক্রি। সরকার দাম বেঁধে দিয়েছে ১৩৩ টাকা। তাদের হিসাবে বিক্রি করতে গেলে ১৪০ থেকে ১৪২ টাকায় বিক্রি করা লাগবে।’

সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কমে কীভাবে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যে দামে কিনি, তার চেয়ে দুই-এক টাকা লাভে বিক্রি করি। এর বেশি কিছু জানি না।’

এ বিভাগের আরো খবর