মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে অনেক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নীতিসুদহার বাড়িয়েই চলছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকও এক মাসের কিছুটা বেশি সময়ের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার সুদহার বাড়াল ৫০ বেসিস পয়েন্ট।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগে সুদহার হবে এসওএফআর রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে।
গত ১৬ আগস্ট তা থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে লাইবরের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ সুদহার নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
এক মাস ১০ দিনের ব্যবধানে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সুদহার ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর মানে হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এসওএফআর (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট-এসওএফআর, পূর্বে যা ছিল লাইবর) রেটের সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে ঋণ দিতে পারবে ব্যবসায়ীদের।
বুধবার এ বিষয়ে সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘বৈশ্বিক সুদহারের ধারাবাহিকতায় সুদহার পুনর্নির্ধারণ করা হলো।’
সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, বৈদেশিক মুদ্রায় বিনিয়োগে সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার সুদহার বা এসওএফআর এর সঙ্গে সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। আর লাইবরের রেট যতোদিন কার্যকর রয়েছে, ততদিন তা অনুসরণ করতে পারবে ডলারে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে।
এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার সুদহারকে ‘বেঞ্চমার্ক রেট’ হিসেবে ধরা হবে বলে জনিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, স্বল্প মেয়াদে ট্রেড ফাইন্যান্সের বেলায় ডলারের ক্ষেত্রে লাইবর রেট (ইংল্যান্ডের আন্তব্যাংকের ৩ মাসের গড় সুদহার) অনুসরণ করা যাবে।
বুধবার ছয় মাস মেয়াদের জন্য এসওএফআর সুদহার ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এর সঙ্গে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ যোগ করলে বিদেশি মুদ্রায় বিনিয়োগে বিপরীতে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বার্ষিক সুদহার যোগ করতে পারবে যেকোনো ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ঠিক একইভাবে ইউরো মুদ্রায় বিনিয়োগে ইউরো, পাউন্ডের বেলায় সোনিয়া (স্টারলিং ওভারনাইট ইনডেক্স এভারেজ) এর সুদহারকে রেফারেন্স রেট হিসেবে নিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।
এর আগে বিদেশি মুদ্রায় আমানত আনতেও সংশ্লিষ্ট দেশের মুদ্রার সুদহারকে বেঞ্চমার্ক ধরা হতো। গত মাস থেকে ঋণ প্রদানের বেলায়ও তা অনুসরণ করা শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মূল্যস্ফীতি সামাল দিতে গত জুলাইয়ে চতুর্থবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অফ নিউইয়র্ক যা ফেড নামে পরিচিত, তারাও সুদহার বাড়িয়েছে।
১৯৮১ সালের পরে গত জুলাইয়ে ফেড সর্বোচ্চ সুদহার বাড়ায়। যা যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশের ব্যাংকের আমানত সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। ২০১৯ সালের পর সর্বোচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।
এর চাপ পড়েছে এশিয়ার দেশগুলোর উপরও। যদিও মূল্যস্পীতির চাপ সামলাতে দেশের অর্থনীতিবিদরাও ঋণ সুদহার সীমা ৯ শতাংশ থেকে তুলে দিতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবরই বেঁধে দেয়া ঋণসুদ হার সীমা তুলে দেয়ার বিপক্ষে থাকার কথা জানিয়ে আসছে।
দেশিয় মুদ্রায় ঋণ সুদহার সীমা তুলে না দিলেও বিদেশি মুদ্রায় স্বল্প মেয়াদের ঋণ সুদহার বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক।