বাংলাদেশে নিবন্ধন নেয়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন সেবাদানকারী আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট পরিশোধ করেছে ফেসবুক। প্রতিষ্ঠানটি গত এক বছরে সরকারকে ভ্যাট দিয়েছে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সার্চ ইঞ্জিন গুগল। একই সময়ে গুগল ভ্যাট দিয়েছে ২২ কোটি টাকা।
এনবিআর সূত্র বলেছে, বাংলাদেশে অনিবাসী হিসেবে নিবন্ধন নেয়ার পর এসব প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় বাড়ছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর ভ্যাট আদায়ের পাশাপাশি নিয়মিত রিটার্ন দাখিলও করছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বহু বিজ্ঞাপন বিল ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে পরিশোধ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ফেসবুক, গুগল, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স, মাইক্রোসফট নিবন্ধন নেয়ার পর নিয়মিত রিটার্ন দিচ্ছে। ফলে ভ্যাট আহরণ বাড়ছে।
তিনি আরও জানান, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে ভ্যাট পরিশোধ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ভ্যাট ফাঁকি হচ্ছে। বিষয়টি এনবিআরের নজরে এসেছে এবং এ বিষয়ে কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, অনিবাসী হিসেবে নিবন্ধন নেয়ার ক্ষেত্রে নতুন ভ্যাট আইনে জটিলতা তৈরি হয়। ফলে প্রথম অবস্থায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে পারেনি এনবিআর। এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও আগে ভ্যাট নেয়া সম্ভব হয়নি।
দুই বছর চেষ্টার পর এদের ভ্যাটের আওতায় আনা হয়। প্রথমে নিবন্ধন দেয়া হয় বিশ্বের অন্যতম টেক জায়ান্ট গুগলকে। এরপর ফেসবুকসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাট নিবন্ধন নেয়। প্রতিষ্ঠানগুলো বিজ্ঞাপন বাবদ বাংলাদেশে যে পরিমাণ ব্যবসা করছে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেয় সরকারকে।
অনিবাসী হিসেবে এ পর্যন্ত ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। এনবিআরের অধীনে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট থেকে এসব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেয়া হয়। এর মধ্যে গুগল গত বছরের মে মাসে মাসিক ভ্যাট রিটার্ন ও ভ্যাট পরিশোধ করে।
আর ফেসবুক একই বছরের জুন থেকে ভ্যাট পরিশোধ ও রিটার্ন জমা দিয়ে আসছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বহুজাতিক বিনোদনধর্মী প্রতিষ্ঠান নেটফ্লিক্স এবং সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে অ্যামাজন ডটকম ভ্যাট রিটার্ন জমা দেয়।
এনবিআরের তথ্যমতে, নিবন্ধন নেয়ার পর গত এক বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট দিয়েছে ফেসবুক। এ সময় ফেসবুক ব্যবসা করেছে প্রায় ২১৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রযোজ্য হারে ভ্যাট আসে ৩৩ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আয় করেছে গুগল। এই সময়ে গুগল ১৪৭ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে ভ্যাট পরিশোধ করেছে ২২ কোটি টাকা।
মাইক্রোসফট ৩১ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে ভ্যাট দিয়েছে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৩০ কোটি ৩৩ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছে অ্যামাজন। এ ছাড়া নেটফ্লিক্স ১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে ভ্যাট দিয়েছে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকা।
এদিকে জনপ্রিয় ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ইউটিউবকে এখনও নিবন্ধনের আওতায় আনা যাচ্ছে না বলে এনবিআরের একটি সূত্র জানিয়েছে। ইউটিউবে বিপুল বিজ্ঞাপন দেয় বাংলাদেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ রয়েছে, ইউটিউবে দেয়া বিজ্ঞাপনের বিল পরিশোধিত হয় হুন্ডিতে। যার ফলে ভ্যাট পায় না সরকার। ইউটিউবকে নিবন্ধনের আওতায় আনা গেলে বিপুল পরিমাণ ভ্যাট পাওয়া যাবে বলে জানান এনিবআরের কর্মকর্তারা।