কারসাজি হয় সন্দেহে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর আগে যে প্রি ওপেনিং সেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, সেটি আবার ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, তবে স্টক এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং ইঞ্জিনের চাপ কমানো।
রোববার থেকেই ফিরছে এই ব্যবস্থা, এবার প্রি-ওপেনিং সেশনের সময় রাখা হয়েছে ৫ মিনিট।
অর্থাৎ সকাল সাড়ে ৯ টায় লেনদেন শুরুর ৫ মিনিট আগে থেকেই শেয়ার কেনাবেচার অর্ডার দিয়ে রাখা যাবে ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে।
বৃহস্পতিবার এই সংক্রান্ত একটি আদেশ দুই স্টক এক্সচেঞ্জে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সকাল ৯ টা ২৫ মিনিট থেকে ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময়ে শেয়ার কেনা-বেচার প্রিঅর্ডার দিতে পারবেন বিনিয়োগকারীরা। মূল লেনদেন হবে বেলা ১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত। আর পোস্ট ক্লোজিং সেশনের সময় ১টা ৫০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত।
কারসাজি বন্ধে প্রি-ওপেনিং বন্ধ করার পরে আবার কেন চালু করা হলো জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘প্রি-ওপেনিং সেশন বন্ধ করার সময় এও বলা হয়েছিল যে, আমাদের এক্সচেঞ্জের ট্রেডিং মেশিনের সক্ষমতা বেড়েছে, সেটারও পরীক্ষার জন্য বন্ধ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিন থেকে ভলিউম বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত চাপ হচ্ছিল। ডিএসইতে ট্রেডিং মেশিনে ঝামেল হচ্ছে, যার কারণে ডিএসইর আইটি থেকে আমাদের বারবার অনুরোধ করা হচ্ছিল। যার প্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, ‘প্রি-ওপেনিং সেশনের সময় রাখা হয়েছে ৫মিনিট। ফলে কারসাজি করা সম্ভব হবে না।’
২০২০ সালের অক্টোবরে পুঁজিবাজারে প্রি-ওপেনিং সেশন এবং পোস্ট-ওপেনিং সেশনের চালু করা হয়। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক দরপতনের মধ্যে গত ২২ মে প্রি ওপেনিং সেশন বন্ধ করে দেয়া হয়।
সে সময় এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে কারসাজির বিষয়টি উঠে আসে। লেনদেন শুরুর আগেই শেয়ারের সার্কিট ব্রেকারের সর্বনিম্ন দরে বিপুল সংখ্যক শেয়ার বসিয়ে রাখা হয়। যদিও পরবর্তী সময়ে এসব কার্যাদেশ বাতিল কিংবা পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু লেনদেনের শুরুতেই শেয়ারবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আতঙ্কে বাজারে দরপতন হতে থাকে।
তবে কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ট্রেডিং ইঞ্জিনের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তাই সক্ষমতা বাড়ার বিষয়টি যাচাই করে দেখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটা অন্যভাবে নেয়া গেলও আমি বলব যে প্রি-অর্ডারে সেশন না থাকলে অর্ডার প্লেস করা কঠিন হয়ে যায়। কারণ এটা না থাকার কারণে লেনদেন চালুর পরে সবাই এক সঙ্গে অর্ডার দিতে চায়। এতে সার্ভার ভারী হয়ে যায়। তখন কাজ কঠিন হয়ে যায়।
‘তাছাড়া আমাদের যে ভেন্ডর বা যারা সফটওয়্যার দিয়েছে তারাই বলেছে অল্প হলেও প্রি-ওপেনিং সেশন রাখতে। যখন লেনদেন ৩০০ থেকে ৪০০ কোটির মধ্যে থাকে তখন খুব বেশি সমস্যা না হলেও লেনদেন দেড় হাজর কোটি অতিক্রম করলে ট্রেডিং মেশিনে চাপ পড়ে যায়। আমি নিজেও এ সমস্যা ফিল করেছি। আমি মনে করি প্রি-ওপেনিং সেশন থাকা দরকার।’
গত ৩১ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে ধীরে ধীরে প্রাণ ফিরতে শুরু করার পর লেনদেন পাঁচ শ কোটির ঘর থেকে বাড়তে বাড়তে এখন নিয়মিত দেড় হাজার কোটির ঘরে হচ্ছে। মঙ্গলবার গত এক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ২ হাজার ৮৩২ কোটি টাকার বেশি।