অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি।
যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের মধ্যে আছে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার, দেশীয় খাদ্যপণ্য বাজারজাতকারী সিটি গ্রুপ ও এডিবল অয়েল।
ব্যক্তি হিসেবে আসামি হয়েছেন যারা তাদের মধ্যে আছেন সিটি গ্রুপ, প্যারাগন পোলট্রি ও কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চাল বাজারজাতকারী রশিদ অ্যাগ্রোর মালিক।
বৃহস্পতিবার এই মামলায় এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ সামনে আনা হয়।
কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাজারের সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার নিয়ম ভেঙে চাল, আটা, ডিম, ব্রয়লার মুরগি, সাবান, ডিটারজেন্টসহ অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য মামলা করা হয়েছে। আগামী সোমবার থেকে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে শুনানি শুরু হবে।’
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগ চালে ১৯টি, আটা-ময়দায় আটটি, ব্রয়লার মুরগি ও ডিমে ছয়টি, সাবান ও ডিটারজেন্টে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে তাদের শুনানিতে ডাকা হবে।
আসামি কারা, কী কারণে
চালের বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে রশিদ অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আব্দুর রশিদ ও নওগাঁর বেলকন গ্রুপের বেলকন প্রাইভেট লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী বেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে।
দুই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিটি গ্রুপ ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আটা-ময়দার সংকট তৈরির অভিযোগে।
বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তেলের বাজারে সংকট তৈরির অভিযোগে।
ডিমের সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে প্যারাগন পোলট্রি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিম ব্যবসায়ী-আড়তদার বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ্, কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
মুরগির বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগও আনা হযেছে প্যারাগন পোলট্রি ও কাজী ফার্মসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নামে। এ জন্য তাদের বিরুদ্ধে আলাদা মামলা হয়েছে।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে সাবান, সুগন্ধী সাবান ও গুঁড়া সাবানের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি বা কৃত্রিম সংকটের অভিযোগ এনে।
প্রতিষ্ঠানটির করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তা তৌহিদ আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা প্রতিযোগিতা কমিশন থেকে এখনও এ ধরনের কোনো নোটিশ পাইনি। এ ধরনের সংবাদ গণমাধ্যম থেকে দেখেছি।
শুনানি সোমবার থেকে
আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার দুপুর ১২টায় কাজী ফার্মস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডিম ও মুরগির বাজারে সংকট সৃষ্টির অভিযোগে শুনানিতে ডাকা হয়েছে।
পরদিন বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে শুনানি হবে।
প্রতিযোগিতা কমিশন আইনের ১৫ ও ১৬ ধারা অনুযায়ী এ মামলা হয়েছে। ধারা ১৫-তে বলা হয়েছে, বাজারে প্রভাব বিস্তার করে একপক্ষীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করলে তারা শাস্তির আওতায় আসবে।
ধারা ১৬-তে বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের বাজারজাত বা উৎপাদনে শীর্ষে থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পণ্যের দামে কারসাজি করলে সেই অপরাধও শাস্তিযোগ্য।