অর্থবছরের শুরুতে সরকারি আয়ে এলো সুখবর। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আদায়ে হয়েছে বড় উলম্ফন। এ বছরের জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আয়ে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে, ২১ শতাংশের বেশি। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ তথা রাজস্ব বৃদ্ধির এই হার এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
গত অর্থবছরে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ।
পরিসংখ্যান বলে, গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আয় বেড়েছে গড়ে ১২ শতাংশ। সে হিসাবে এখন যে প্রবৃদ্ধি হলো এটা অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
এনবিআর সূত্র জানায়, প্রধানত পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণেই রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
সাধারণত আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে বেশি শুল্ক আদায় হয়। এ ছাড়া অম্ভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যের দাম বাড়লে মূল্য সংযোজন কর আদায়ে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
আবার উন্নয়ন কাজের গতি বাড়লে আয়কর বাড়ে। এসব কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্বের পালে হাওয়া লেগেছে বলে জানান এনবিআর কর্মকর্তারা।
এনবিআরের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রাজস্ব আয়ের চলমান ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে।’
এ বছর এনবিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা।
সরকার বাজেট বাস্তবায়নে যে অর্থায়ন করে তার ৮৫ থেকে ৮৬ শতাংশ জোগান দেয় এনবিআর। যে কারণে রাজস্ব আয় ভালো হলে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ সহনীয় থাকে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, আমাদের অর্থনীতির যে আকার তার সঙ্গে রাজস্ব আয় সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তাই আরও বেশি আদায় বাড়াতে হবে বলে মত দিয়েছেন তিনি।
রাজস্ব বোর্ডের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট মাসে কাস্টমস, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং আয়কর মিলে আদায় হয় ৪০ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের এই সময়ে আদায় হয়েছিল ৩৩ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব আয় বেড়েছে ২১ দশমিক ১৩ শতাংশ।
আমদানি, ভ্যাট ও আয়কর- এই তিন উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ করে এনবিআর। এর মধ্যে সবচেয় বেশি অবদান ভ্যাটে। মোট আদায়ের ৩৯ শতাংশ আসে ভ্যাট থেকে। আয়কর থেকে আয় হয় ৩৭ শতাংশ। বাকি রাজস্ব আসে আমদানি শুল্ক থেকে।
পরিসংখ্যান বলে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সবচেয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে আমদানি শুল্ক খাতে। এই সময়ে শুল্ক আদায় হয় ১৪ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরের এই সময়ে আদায় হয়েছিল ১১ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। ফলে এই খাতে প্রবৃদ্ধি হয় ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এনবিআর সূত্র বলেছে, বিশ্ব বাজারে আমদানি করা পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণেই বাড়তি শুল্ক আদায় হয়।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে অভ্যন্তরীণ রাজস্বের অন্যতম উৎস ভ্যাট আদায় হয় ১৫ হাজার ৩৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে এই সময়ে আদায় হয় ১২ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। ভ্যাটে এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয় ১৬ শতাংশ।
অপরদিকে, অভ্যন্তরীণ সম্পদের আরেকটি উৎস আয়করে আদায় হয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় আদায় হয় ৮ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। ফলে আয়করে জুলাই-আগস্টে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১৯ শতাংশ।
সব মিলে চলতি অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে আহরণ হয় ৪০ হাজার ২৭০ কোটি টাকা, যা পুরো বছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ১১ শতাংশ।
গত অর্থবছরে এনবিআর রাজস্ব আদায় করে ২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা।