বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে চীনা মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার এক সার্কুলারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, চীনের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানিতে দেশটির মুদ্রা ইউয়ান নামে পরিচিত সিএনআই দিয়ে লেনদেন করতে এডি ব্যাংকগুলো অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবে।
সার্কুলারটি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালের আগস্টে এক নির্দেশনায় চীনের সঙ্গে লেনদেন সহজ করতে ইউয়ান দিয়ে সরাসরি আমদানি ও রপ্তানি দায় নিষ্পত্তির জন্য ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
নতুন নির্দেশনার ফলে ইউএস ডলার, ইউরো, জাপানি ইয়েন, যুক্তরাজ্যের পাউন্ড ও কানাডিয়ান ডলারের মতো বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে লেনদেন করতে চীনের মুদ্রা ইউয়ান কিনতে ব্যাংকগুলোর অথরাইজ ডিলার (এডি) শাখাগুলোকে অনুমোদন দেয়া হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এডি শাখাগুলো চীনের ব্যাংকের সঙ্গে ইউয়ান মুদ্রায় ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় ইউয়ান কিনতে পারবে দেশি ব্যাংকগুলো।
চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্য বাড়াতে ২০১৮ সালে ইউয়ানে লেনদেন করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এডি ব্যাংকগুলোকে দায় নিষ্পত্তির জন্য অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ দেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে ডলার সংকট তীব্র হলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের আলোচনা জোরালো হয়ে ওঠে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তে চীনের সঙ্গে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে দেশি ব্যাংকগুলোর ইউয়ান দিয়ে লেনদেন করা আরও সহজ হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ পলিসি ডিপার্টমেন্টের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতেই ব্যাংকগুলোকে চীনা মুদ্রা ইউয়ানে বৈদেশিক বাণিজ্যে চীনা মুদ্রার ব্যবহার বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে ডলারের ওপর চাপ কমবে। বাজারে ডলারের যে সংকট চলছে, তা কেটে যাবে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্দেশনার ফলে ব্যবসায়ীরা চাইনিজ মুদ্রায় লেনদেন করতে পারতেন। ব্যাংকগুলোও সিএনআই মুদ্রায় হিসাব পরিচালনা করতে পারত। তবে অনেক ব্যাংক এখনও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা বৈদেশিক লেনদেনে ইউয়ান ব্যবহার করছে না। আগের সার্কুলারের সুযোগকে আরও বড় পরিসরে করতে নতুন সার্কুলারটি দেওয়া হয়েছে।’
‘এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো যেন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ (বৃহস্পতিবার) আবার সার্কুলার জারি করেছে।’
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, 'বাণিজ্য ও ব্যাংক উভয় ক্ষেত্রেই ভিন্ন মুদ্রা ব্যবহারে এগিয়ে এলে বৈদেশিক বাণিজ্যে বৈচিত্র্য আসবে। এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খোলা ও নিষ্পত্তি করতে একক বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমে আসবে।’
আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে বুধবারের মতো বৃহস্পতিবারও ১০৬ টাকা ৯০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছে। এক বছর আগে গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ছিল ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর বেড়েছে ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। খোলঅবাজার বা কার্ব মারেএকটে বেড়ে ৩০ শতাংশের বেশি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশে দেশে মুদ্রার দরপতনের যে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। যুদ্ধের ধাক্কায় মুদ্রাবাজার চরম অস্থির হয়েে উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশ বা এবিবি ও বৈদেশিক মুদ্রার ডিলার ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন বা বাফেদা ঠিক করে আন্তঃব্যাংকে ডলারের বিনিময় হার হবে ১০৬ টাকা ১৫ পয়সা। সেই দরকেই আন্তব্যাংক দর হিসেবে বেছে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত দুই দিনে বেড়ে ১০৬ টাকা ৯০ পয়সা হয়েছে।