বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য সহজীকরণে ঐকমত্যের মধ্য দিয়ে ঢাকায় শেষ হয়েছে দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বৈঠক।
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা পিটিএ বাস্তবায়ন জোরদার করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বৈঠকে বলা হয়, এর ফলে উভয় দেশের বাণিজ্য বাড়বে। এ ছাড়া বাণিজ্য ক্ষেত্রে শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূর করতে উভয় দেশ অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
দুই দিনের এ বৈঠক গত ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় শুরু হয়। এটি ছিল দুই দেশের সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠক। পরবর্তী বৈঠকটি ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে হবে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ নেতৃত্ব দেন। ভুটানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব দেব দাশো কর্মা শেরিন নিজ দেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
দুই বছর আগে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পিটিআই চুক্তি সই হয়, যা চলতি বছরের ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়।
এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ১০০টি পণ্য ভুটানের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। পক্ষান্তরে ভুটানের ৩৪টি পণ্য বাংলাদেশের বাজারে একই সুবিধা পাচ্ছে।
বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্য ভুটানের অনুকূলে। অর্থাৎ ভুটানে বাংলাদেশের রপ্তানি কম, ভুটান থেকে আমদানি বেশি। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। পিটিআই চুক্তির ফলে সরকার আশা করছে এই ঘাটতি কমে আসবে।
ভুটানে সরাসরি রপ্তানি করতে পারে না বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরে মোদি সরকার বাংলাদেশকে ট্রানজিটের প্রস্তাব দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানে সরাসরি পণ্য রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানা গেছে, সচিব পর্যায়ের বৈঠকে তৃতীয় দেশের মধ্য দিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নতি করতে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়।
এ ছাড়া বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও বিভিন্ন আঞ্চলিক ফোরামে পারস্পরিক সমর্থন, পর্যটনশিল্পের বিকাশে উভয় দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, কৃষি এবং শিল্প খাতে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাক্রমে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), ভুটান স্ট্যান্ডার্ড ব্যুরো, ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার এক্সটেনশন, ভুটান এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড রেগুলেটরি অথরিটির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সমঝোতা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে পাথর আমদানি করে ভুটান থেকে। ট্রানজিট প্রস্তাবে সরাসরি পাথর আমদানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। এতে করে বাংলাদেশের পাথর আমদানি সহজ হবে এবং খরচ কমবে।
বৈঠকে এ বিষয়টিসহ সোনাহাট শুল্ক বন্দরের মাধ্যমে ভুটানের পণ্য পরিবহন নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ভুটানের প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ
ভুটানের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব দেব দাশো কর্মা শেরিনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভুটান বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে উভয় দেশের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে।
তৃতীয় দেশের মধ্য দিয়ে ভুটানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ চালু হলে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হবে বলে মত দেন মন্ত্রী।
ভুটানকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করে টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভুটান প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, বাংলাদেশ তা সব সময় কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে।’
বাংলাদেশ ভুটানসহ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আঞ্চলিক বিমানবন্দর ঘোষণা করেছে এবং এর প্রয়োজনীয় উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হলে উভয় দেশের জন্য লাভজনক হবে বলে জানান তিনি।
টিপু মুনশি জানান, বাংলাদেশে চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্ট বিষয়ে পড়ালেখার সুযোগ নিতে পারে ভুটান। বাংলাদেশে এ বিষয়ে উন্নতমানের শিক্ষাব্যবস্থা রয়েছে।
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) নূর মো. মাহবুবুল হকসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।