বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওরিয়ন ইনফিউশন: ৩ মাসে ৪৭২ শতাংশ দর বৃদ্ধি, চুপ সবাই

  •    
  • ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:২৬

ওরিয়ন ইনফিউশনের পরিশোধিত মূলধন এখন ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে সেই কোম্পানিটি এখন ৮৭৫ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। গত ১৬ জুন শেয়ারদর ছিল ৮১ টাকা ৬০ পয়সা, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৪৬৭ টাকা ৪০ পয়সা। ৬০ কর্মদিবসে বেড়েছে ৩৮৫ টাকা ৮০ পয়সা।

ইস্যুমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে নেমে যাওয়া বসুন্ধরা পেপার মিলসের শেয়ারদর ৩০ শতাংশের মতো, ওটিসি ফেরত পেপার প্রসেসিংয়ের শেয়ারদর ৫৫ শতাংশ বাড়ার পর বিষয়টিকে অস্বাভাবিক ভেবে তদন্তের নির্দেশ এসেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে। কিন্তু গত তিন মাসে যে কোম্পানির শেয়ারদর প্রায় ৫০০ শতাংশ বেড়েছে, সেটির পেছনে কোনো অস্বাভাবিক কিছু আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে নেই কোনো উদ্যোগ।

কেবল বিএসইসি নয়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিটিরও বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। তারা কোম্পানির কাছে দুবার নোটিশ দিয়ে জানতে চেয়েছে তাদের কোনো বিশেষ মূল্য সংবেদনশীল তথ্য আছে কি না। কোম্পানিটির জবাব এসেছে ‘নেই’।

এটি হলো ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন, যার দর গত ১৬ জুন ছিল ৮১ টাকা ৬০ পয়সা। আর তিন মাস পর ১৫ আগস্ট দাঁড়িয়েছে ৪৬৭ টাকা ৪০ পয়সা বা ৪৭২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

এর মধ্যে গত এক মাসে শেয়ারদর বেড়েছে ৩২৬ টাকা ১০ পয়সা। গত ১৬ আগস্ট দর ছিল ১৪১ টাকা ৩০ পয়সা।

অর্থাৎ ৬০ কর্মদিবসে শেয়ারটির দাম হয়ে গেছে ৫৭২ দশমিক ৩০ শতাংশ, টাকায় বেড়েছে ৩৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। সাম্প্রতিক ইতিহাসে কোনো কোম্পানির দর এতটা বাড়েনি।

গত তিন মাসে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ারের দর বৃদ্ধির চিত্র

সম্প্রতি দুটি কোম্পানির শেয়ারদর অনেকটা বাড়ার পর বিএসইসি তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে বসুন্ধরা পেপারের দর সাত দিনে ৫১ টাকা থেকে ৬৬ টাকা বা ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, আর ১০ দিনে পেপার প্রসেসিংয়ের দর ১৭৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৭২ টাকা হয়েছে, বেড়েছে ৫৫ শতাংশ।

এর মধ্যে বসুন্ধরা পেপারের দর এখনও ইস্যুমূল্যের নিচে। ২০১৮ সালে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ৭২ টাকায় আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন ৮০ টাকায়।

২০ কোটির কোম্পানি এখন পৌনে ৯০০ কোটির

ওরিয়ন ইনফিউশন রোগীর গায়ে পুশ করার আইভি স্যালাইন প্রস্তুত করে। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় পাঁচ বছর পর ১৯৯৪ সালে।

এর পরিশোধিত মূলধন এখন ২০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। এর শেয়ারসংখ্যা ২ কোটি ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৬০।

শেয়ারদর অস্বাভাবিক হারে বাড়ার কারণে সেই কোম্পানিটি এখন ৮৭৫ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকার কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে।

কেবল এই কোম্পানিটি নয়, ওরিয়ন গ্রুপের আরও দুটি কোম্পানির শেয়ারদরেও ব্যাপক উত্থান দেখা যাচ্ছে।

এর মধ্যে বিকন ফার্মার দর গত ২৮ জুলাই ছিল ২৪০ টাকা ৬০ পয়সা, সেটি এখন বেড়ে হয়েছে ৩২১ টাকা ৬০ পয়সা। মাঝে ৩৪৫ টাকাতেও উঠেছিল।

অন্যদিকে ওরিয়ন ফার্মার দর গত ২৮ জুলাই ছিল ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা, সেটি এখন ১১৬ টাকা ২০ পয়সা, মাঝে হয়েছিল ১৩১ টাকা ৬০ পয়সা।

বিএসইসি কী বলছে

প্রশ্ন উঠেছে, বসুন্ধরার এই দর ফিরে পাওয়াকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছে, ওরিয়ন ইনফিউশনের পাগলা ঘোড়ার মতো ছোটাকে কেন অস্বাভাবিক মনে করছে না বিএসইসি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো সিকিউরিটিজের প্রাইস বাড়লেও ম্যানুপুলেশন বলা যাবে না, যদি না কোনো ম্যাল প্র্যাকটিস থাকে, ইনসাইডারের ট্রেডিং ইনভল্ভমেন্ট না থাকে।’

তিনি বলেন, ‘অ্যাগ্রেসিভ বাই, ইনভেস্টর কত বেশি বা এমফ্যাসিস দিয়েছে কি না, ম্যাল প্র্যাকটিস, ইনসাইডার ট্রেডিং ইনভল্ভমেন্ট- এ রকম আরও কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করেই কমিশন সিদ্ধান্ত নেয়। এগুলোর একটি হলো- প্রাইস কত শতাংশ বাড়ল।’

তিনি যোগ করেন, ‘আমরা ওরিয়ন ইনফিউশন অনেক দিন থেকে নজরে রেখেছি। তথ্য কালেক্ট করছি, কোনো ইনসাইডার ইনভল্ভমেন্ট আছে কি না। কোনো প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশন আছে কি না। কারণ এটা না আসা পর্যন্ত ইনসাইডার ট্রেড তো করতেই পারে। এখন কোনো ইনফরমেশনের ভিত্তিতে করছে, সেগুলো না জানলে তো আর বলা যায় না।

গত এক মাসে ওরিয়ন ইনফিউশনের দর বৃদ্ধির চিত্র

‘এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে কোনটা কমিশন নিজে তদন্ত করবে, কোনটা এক্সচেঞ্জ করবে, কোনটা পর্যবেক্ষণে রাখবে। অনেক ক্ষেত্রে এসব ডিসক্লোজ করা যায়, কনফিডেনশিয়াল একটা বিষয় আছে। সময় এলে দেখা যাবে, কমিশন কী করছে।’

এর মধ্যে গত ৩ ও ২৫ আগস্ট ওরিয়ন ইনফিউশনের পক্ষ থেকে দুটি বার্তা দেয়া হয় ঢাকা ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে। দুবারই স্টক এক্সচেঞ্জের জিজ্ঞাসায় তারা বলেছে, অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তারা কিছু জানে না। তবে অপ্রকাশিত কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

‘এভাবে কোনো কোম্পানির দর বৃদ্ধি স্বাভাবিক নয়’

ওরিয়ন ইনফিউশনের বিস্ময়কর দর বৃদ্ধির বিষয়ে মাসুম জামান নামে এক বিনিয়োগকারী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই মাসে কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম কীভাবে ৩০০, ৪০০ টাকা বাড়ে? কীভাবে সম্ভব? এটা মোটেও স্বাভাবিক না।’

তিনি বলেন, ‘দেখলাম যে পেপার প্রসেসিং আর বসুন্ধরার দর বৃদ্ধির বিষয়ে তদন্ত করবে বিএসইসি। কিন্তু ওরিয়ন ইনফিউশনের দর যে এই কয়দিনে বেড়ে গেল, সেটার ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেই, এটা কেমন হলো, তাহলে?’

ট্রেজার সিকিউরিটিজের শীর্ষ কর্মকর্তা মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই শেয়ারটায় ব্যাপক মানি ফ্লো দেখা গেছে। দ্রুত সময়ে এত ক্যাশ ফ্লো দেখা গেলে অনুমান করা যায় যে, এটা সাধারণ দর বৃদ্ধি না। অর্গানাইজড হয়ে এই মানি ফ্লো এসেছে। আর তাছাড়া কোনো প্রাইস সেনসিটিভ ইনফরমেশন আছে। এ ছাড়া এত দর বৃদ্ধির কোনো কারণ থাকার কথা নয়।’

অভিন্ন মত দেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও। তিনি বলেন, ‘৮০ টাকার শেয়ার কীভাবে এত অল্প সময় ৪০০ টাকা ছাড়াতে পারে? এর কোনো যৌক্তিকতা আছে? এর পেছনে কী আছে খতিয়ে দেখা উচিত।’

এ বিভাগের আরো খবর