ডলারের বিনিময়মূল্য আরও ১ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক মাস টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৫ টাকা। সোমবার ১ টাকা বাড়িয়ে ৯৬ টাকা করা হয়েছে।
অর্থাৎ আমেরিকার মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার মান আরও এক টাকা কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে ৯৬ টাকায় ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতি ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এটাকে আন্তব্যাংক রেট বা ব্যাংক রেট বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতিদিন অল্প যে ডলার বিক্রি করে থাকে, তা এই রেটে বিক্রি করা হয়।
আগের দিন রোববার আন্তব্যাংক রেট ছিল ৯৫ টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সোমবার রিজার্ভ থেকে ৯৬ টাকায় ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, এক বছরের ব্যবধানে আন্তব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ১২ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
এক বছর আগে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৫ টাকা ২০ পয়সা।
খোলাবাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে আরও চড়া দামে। সোমবার ১১৪ টাকা ২০ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
রোববার বাফেদা ও এবিবির বৈঠকে সব ব্যাংকে একক দর নির্ধারণ করা হয়। আর এর একদিন পরেই ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।
চলতি বছর ১০ আগস্ট ডলারের বিপরীতে টাকার মান অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল ৩০ পয়সা, সে সময় ডলারের দাম দাঁড়ায় ৯৫ টাকা। ফলে ৩৫ দিন পর আবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমলো।
চলতি বছর এপ্রিল মাসেও ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা ৪৬ পয়সা। এরপর মে মাসে টাকার অবমূল্যায়ন হয় ৪ বার। এরপর জুন মাসে অবমূল্যায়ন হয় ৬ বার।
ডলার সঙ্কট কমাতে সময়ে সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অনেক ব্যবস্থা নিয়েও কোনোভাবেই বাগে আনা যাচ্ছে না ডলারের সংকট। বিশ্ব বাণিজ্যের প্রধান এ মুদ্রার সংকট কাটাতে না পারায় দিন দিন কমছে টাকার মান।
আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত বছরের আগস্ট থেকে দেশে ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়। বাড়তে থাকে ডলারের দাম; কমতে থাকে টাকার মান।
গত বছরের আগস্টে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। দেড় বছরের বেশি সময় ওই একই জায়গায় স্থির ছিল ডলারের দর।
রোববার এক বৈঠকে বসে প্রবাসী আয়, আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে নতুন দাম ঠিক করেন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা। সংগঠন দুটির নেতারা মিলে প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা, আমদানি দায় নিষ্পত্তিতে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করেন ৯৯ টাকা। সোমবার থেকে সব ব্যাংক এই একই দরে ডলার কেনাবেচা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে।
কিন্তু তা কার্যকর করেনি কোনো ব্যাংক। মঙ্গলবার থেকে ডলারের নতুন দর কার্যকর করা হবে বলে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আন্তব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের দাম এক টাকা বাড়িয়ে দেয়। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ৯৬ টাকা দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। সরকারি আমদানি বিল মেটাতে ব্যাংকগুলোর কাছে এ ডলার বিক্রি করা হয়।