বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উত্থান পর্বেও ‘অস্বাভাবিক আচরণে’ পুঁজিবাজারে হতাশা

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৪:৩১

গত ৩১ জুলাই থেকে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ৫৫০ পয়েন্টের আশপাশে। কিন্তু বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর মধ্যে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। বরং তারা ক্ষুব্ধ। এই সময়ে ওষুধ ও রসায়ন খাতের যে উত্থান দেখা গিয়েছে, তার কারণ গুটিকয়েক কোম্পানির দর বাড়ছে তো বাড়ছেই। অথচ শক্তিশালী বহু কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে বা কাছাকাছি অবস্থান করছে। প্রায় সব কটি মিউচুয়াল ফান্ডও ফ্লোর প্রাইসে।

সিংহভাগ শেয়ারের দরপতন, অথচ সূচকের উত্থান। টানা কয়েক দিন এমন ঘটনার পর এবার পুরো উল্টো চিত্র। বাড়ল বেশির ভাগ কোম্পানির দর, কিন্তু কমে গেল সূচক।

গত ৩১ জুলাই দরপতনের বৃত্ত ভেঙে পুঁজিবাজারে সূচকের উত্থান হতে থাকলেও সেটি হচ্ছে গুটিকয়েক কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধির কারণে।

এই দেড় মাসেরও কম সময়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক যোগ হয়েছে ৫৫০ পয়েন্টের আশেপাশে, অথচ বেশির ভাগ শেয়ারের দর পড়ে আছে বেঁধে দেয়া সর্বনিম্ন দর বা ফ্লোর প্রাইসের আশপাশে।

প্রতিদিনই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে শতাধিক কোম্পানির দর। আর সেই সংখ্যাটিও বাড়ছে দিনকে দিন।

চলতি মাসে পুঁজিবাজারে এক দিনে সূচকের সবচেয়ে বেশি উত্থান হয় গত ৭ সেপ্টেম্বর। সেদিন ডিএসইএক্স সূচকে যোগ হয় ৭৬ পয়েন্ট। কিন্তু সেদিন ১৩১ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে দর হারায় ১৫৫টি।

দুই দিন সংশোধন কাটিয়ে পুঁজিবাজারে উত্থানে ফেরে তার আগের দিন। সেদিন ৩৯ পয়েন্ট সূচক বাড়ার দিন দর বাড়ে ১২৭টির, কমে ১৪৬টির।

৮ সেপ্টেম্বর সূচকে যোগ হয় ১২ পয়েন্ট, কিন্তু সেদিন ৭২ কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে হারায় ১৮৮টির দর।

চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার বেশির ভাগ শেয়ারের দরপতনের দিন সূচকও কমে ২১ পয়েন্ট। তবে ৪৫টি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে ২১৯টির দরপতন বলে দেয়, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সূচকের আরও বড় পতন হতে পারত।

সেদিন ঢালাও দরপতন হলেও বেক্সিমকো গ্রুপের চারটি কোম্পানির প্রতিটির দর বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, চারটি কোম্পানি যেসব খাতে, সেসব খাতে একটি ছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানিগুলোর দরই বেড়েছে বেশি।

গত সপ্তাহের মতোই চলতি সপ্তাহেও প্রথম দুই দিন সূচকের পতন হলো। সোমবার সূচক কমেছে ৯ পয়েন্ট। কিন্তু এদিন ১১৫টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে বেড়েছে ১২৪টির দর।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

ফ্লোর প্রাইস আরোপ এবং শেয়ারের ক্রয়মূল্যে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বা এক্সপোজার লিমিট গণনার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ায়, উচ্ছ্বাস দেখা দেয় জুলাইয়ের শেষে। যে লেনদেন দিনে ৪০০ কোটি টাকার ঘরে নেমে এসেছিল, সেটি ধীরে ধীরে ছাড়িয়ে যায় ২ হাজার কোটির ঘর।

কিন্তু তাতেও পুঁজিবাজারে পুরোপুরি স্বস্তি ফেরেনি। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সিমেন্ট, মিউচুয়াল ফান্ডসহ নানা খাত একেবারেই ঘুমাচ্ছে।

এই সময়ে ওষুধ ও রসায়ন খাতের যে উত্থান দেখা গিয়েছে, তার কারণ গুটিকয়েক কোম্পানির দর বাড়ছে তো বাড়ছেই। বিশেষ করে ওরিয়ন গ্রুপের তিন কোম্পানি ওরিয়ন ইনফিউশন, ওরিয়ন ফার্মা ও বিকন ফার্মার দর ছুটছে পাগলা ঘোড়ার মতো।

জেএমআই হাসপাতাল, ইস্টার্ন হাউজিং আর বেক্সিমকো গ্রুপের তিন কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেড, বেক্সিমকো ফার্মা, শাইনপুকুর সিরামিকস ছাড়া স্বল্প মূলধনি কিছু কোম্পানির দর বেড়েছে।

সূচক ৫০০ পয়েন্ট বাড়লেও বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মার মতো শক্তিশালী কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে বা কাছাকাছি অবস্থান করছে।

প্রায় সব কটি মিউচুয়াল ফান্ডও ফ্লোর প্রাইসে।

এর মধ্যে কোনো দিন গত সপ্তাহ থেকে হয় বেক্সিমকো গ্রুপ, নয়তো ওরিয়ন গ্রুপ বা কোনো দিন দুই গ্রুপের সম্মিলিত উত্থান হচ্ছে। রোববার মোট লেনদেনের ৩৭ শতাংশের বেশি হয় এই দুই গ্রুপের সাতটি কোম্পানিতে।

এসব কারণে টানা সাড়ে ৫০০ পয়েন্ট সূচক বাড়ার পরও বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীর মধ্যে কোনো উচ্ছ্বাস নেই। বরং তারা ক্ষুব্ধ।

তবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও মনে করেন, বাজারের এই চিত্র অস্বাভাবিক নয়। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বড় কোম্পানির দরপতনে সূচক পড়তে পারে। পুঁজিবাজার প্রতিদিনের হিসাব করার বিষয় নয়, প্রতিদিনের হিসাব দিয়ে পুঁজিবাজারকে বিচার করাও ঠিক নয়। বাজার পড়বে, উঠবে- এটাই স্বাভাবিক ঘটনা।’

কোন খাতে কত লেনদেন

আগের দিন দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিবিধ খাত শীর্ষে উঠে এলেও লেনদেন কমেছে। হাতবদল হয়েছে ৩২০ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা গতকাল ছিল ৩৩৪ কোটি ১০ লাখ টাকা।

আটটি কোম্পানির দর বৃদ্ধির বিপরীতে তিনটির পতন ও দুটির লেনদেন হয়েছে আগের দরেই।

১৫০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন কমেছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা খাতটিতে লেনদেন হয়েছে ২৮৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

দর বৃদ্ধি হয়েছে সাতটি কোম্পানির। বিপরীতে দর কমেছে ১৮টির। ছয়টির লেনদেন হয়েছে আগের দরে।

আগের দিনের মতোই তৃতীয় স্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। এ খাতেও লেনদেন কমেছে। ১১৫ কোটি ২০ লাখ টাকা লেনদেনের দিনে ২১টি কোম্পানির দর বৃদ্ধি, আটটির দর অপরিবর্তিত ও ১৩টির দরপতন হয়েছে।

পরের অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতের লেনদেন শতকোটির নিচে নেমে গেছে। হাতবদল হয়েছে ৯৫ কোটি ১০ লাখ। ১৮টি কোম্পানির দরপতনের বিপরীতে ৯টির বেড়েছে। ৩২টির দর অপরিবর্তিত ছিল।

পঞ্চম অবস্থানে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। এ খাতে তিনটি কোম্পানির দর কমেছে, ১৩টির বেড়েছে ও ছয়টির অপরিবর্তিত ছিল।

সূচক কমাল যারা

সবচেয়ে বেশি ২৩ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট সূচক কমেছে বেক্সিমকো ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০ দশমিক ৩৫ পয়েন্ট কমেছে বেক্সিমকো লিমিটেডের কারণে। শেয়ারপ্রতি দাম কমেছে ১ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

ওরিয়ন ফার্মার দর ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে ১৪ দশমিক শূন্য ৮ পয়েন্ট।

এ ছাড়া ইউনাইটেড পাওয়ার, বিকন ফার্মা, আইসিবি, সামিট পাওয়ার, স্কয়ার ফার্মা, আইপিডিসি ও পাওয়ার গ্রিডের দরপতনে সূচক কমেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ১০৫ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট।

বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ১২ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে জেএমআই হসপিটাল। শেয়ারটির দর ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের দর ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১১ দশমিক ১১ পয়েন্ট।

ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স সূচকে যোগ করেছে ৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

এর বাইরে বসুন্ধরা পেপার, বার্জার পেইন্টস, সি পার্ল, ইউনিলিভার, ওয়ান ব্যাংক, এস আলম স্টিল ও আইএফআইসি ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ৬২ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট।

দর বৃদ্ধির শীর্ষ ১০

সবচেয়ে বেশি ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ দর বেড়েছে জেএমআই হসপিটালের। শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ১০৪ টাকা ৮০ পয়সায়। আগের দিনে লেনদেন হয়েছিল ৯৫ টাকা ৩০ পয়সায়।

এস আলম স্টিল রয়েছে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে। শেয়ারের দর ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেড়ে লেনদেন হয়েছে ৪০ টাকা ৯০ পয়সায়।

৯ দশমিক ৭০ শতাংশ দর বেড়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বিডি ওয়েল্ডিং। সর্বশেষ শেয়ারটি লেনদেন হয়েছে ২৯ টাকা ৪০ পয়সায়। আগের দিনে ক্লোজিং প্রাইস ছিল ২৬ টাকা ৮০ পয়সা।

এ ছাড়া দর বৃদ্ধির সেরা দশে জায়গা করে নিয়েছে- ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মনোস্পুল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, পেপার প্রসেসিং ও ফাস ফাইন্যান্স।

দরপতনের শীর্ষ ১০

এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সোনারগাঁও টেক্সটাইল। শেয়ারদর ৯ শতাংশ কমে সর্বশেষ ৫৪ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়।

পতনের তালিকায় পরের স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা। ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ দর কমে লেনদেন হয়েছে ১১৭ টাকা ৬০ পয়সায়।

তৃতীয় সর্বোচ্চ দর হারিয়েছে ইস্টার্ন হাউজিং। ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে শেয়ারটি সর্বশেষ ৮২ টাকা ৪০ পয়সায় হাতবদল হয়।

দর কমার শীর্ষ দশে থাকা অন্য কোম্পানিগুলো ছিল- শাইনপুকুর সিরামিকস, ইয়াকিন পলিমার, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স, শমতা লেদার, ফু-ওয়াং সিরামিক, ওয়াটা কেমিক্যাল ও বেক্সিমকো ফার্মা।

এ বিভাগের আরো খবর