স্বর্ণের দাম আরও বেড়েছে। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে ভরিতে ১ হাজার ২৮৩ টাকা বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে দেশের বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকায় উঠেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই মূল্যবান এই ধাতুটির দাম এত উচ্চতায় ওঠেনি বলে জানিয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা।
অন্যান্য মানের স্বর্ণের দামও প্রায় একই হারে বেড়েছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৬ আগস্ট স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায় উঠেছিল। এতোদিন দেশের বাজারে সেটাই ছিল সর্বোচ্চ দর। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় গত ২১ আগস্ট স্বর্ণের দাম কমে ৮৩ হাজার ২৮১ টাকায় নেমে আসে।
শনিবার ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি - বাজুস। এর ফলেই সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকায় উঠেছে।
রোববার থেকে এই নতুন দর কার্যকর হবে।
বাজুসের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শনিবার বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণসংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী, রোববার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকায় বিক্রি হবে। গত তিন সপ্তাহ এই মানের স্বর্ণ ৮৩ হাজার ২৮১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসাবে দাম বেড়েছে ১ হাজার ২৮৩ টাকা।
২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ২২৫ টাকা বেড়ে ৮০ হাজার ৭১৫ টাকা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৬৯ হাজার ১৬৭ টাকা।
আর সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা বেড়ে হয়েছে ৫৭ হাজার ৩৮৭ টাকা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের সকল স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত বাজুসের বেঁধে দেয়া দামে স্বর্ণ বিক্রি করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
রুপার দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের দামেই বিক্রি হবে এই ধাতু।
এর আগে সবশেষ গত ২১ আগস্ট স্বর্ণের দাম প্রায় একই পরিমাণ বাড়ানো হয়েছিল।
১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাব করা হয়।
শনিবার পর্যন্ত ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি স্বর্ণ ৮৩ হাজার ২৮১ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ কিনতে লেগেছে ৭৯ হাজার ৪৯০ টাকা হয়েছে। ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ৬৭ হাজার ১২৬ টাকায়।
আর সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণ কিনতে লেগেছে ৫৫ হাজার ২৮৭ টাকা।
স্বর্ণের দামে ওঠানামা
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় গত মে মাসে স্বর্ণের ভরি বাড়তে বাড়তে ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায় উঠেছিল। এরপর বিশ্ববাজারে দাম কমায় তা ৭৫ হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছিল।
এর পর আন্তর্জাতিক বাজারে দরবৃদ্ধি এবং স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম বাড়ায় জুলাই ও আগস্ট মাসে টানা কয়েক দফা বেড়ে সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের ভরি ৮৪ হাজার ৩৩১ টাকায় উঠেছিল।
আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় টানা তিন দফা কমানোর পর গত ২৬ জুলাই প্রতি ভরি সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৩৪১ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। দুই দিনের ব্যবধানে ২৮ জুলাই আরও ২ হাজার ৭৪১ টাকা বাড়ানো হয়। ৩ আগস্ট ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়ানো হয়। ৭ আগস্ট বাড়ানো হয় ভরিতে ১ হাজার ৯৮৩ টাকা।
সবশেষ ২১ আগস্ট ভরিতে বাড়ানো হয় ১ হাজার ২২৫ টাকা। শনিবার আরও ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বাজুস। রোববার থেকে এই নতুন দরে বিক্রি হবে স্বর্ণ।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ৮ মার্চ দেশের বাজারে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৯ হাজার ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। তার চার দিন আগে ৪ মার্চ বাড়ানো হয়েছিল ভরিতে ৩ হাজার ২৬৫ টাকা।
এরপর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম কমতে শুরু করায় ১৫ মার্চ দেশের বাজারে ভরিতে ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয় বাজুস। ২১ মার্চ কমানো হয় ভরিতে আরও ১ হাজার ৫০ টাকা।
কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় ১১ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের স্বর্ণের দাম ভরিতে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে ৭৮ হাজার ৮৪৯ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস।
এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় ২৫ এপ্রিল প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়। ১০ মে একই পরিমাণ কমানো হয়েছিল।
দুই দফায় ভরিতে ২ হাজার ৩৩২ টাকা কমানোর পর ১৭ মে ১ হাজার ৭৫০ টাকা বাড়ানো হয়।
চার দিনের ব্যবধানে ২১ মে সেই স্বর্ণের দাম এক ধাক্কায় ভরিতে ৪ হাজার ১৯৯ টাকা বাড়িয়ে দেয় বাজুস। উঠে যায় ৮২ হাজার ৪৬৬ টাকায়।
বিশ্ববাজারে দাম কমায় ২৬ মে সেই স্বর্ণের দাম ভরিতে ২ হাজার ৯১৬ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৫৪৮ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। প্রায় দেড় মাস পর ৬ জুলাই আরও ১ হাজার ১৬৬ টাকা কমানো হয়।
আন্তর্জাতিক বাজার
এদিকে দেশের বাজারে সোনার দাম বাড়লেও আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা রয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ আগস্ট দেশে সোনার দাম বাড়ায় জুয়েলার্স সমিতি, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১.১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) সোনার দাম ছিল ১ হাজার ৭৩৫ ডলার। চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখে সেই দাম ১ হাজার ৭০০ ডলারের নিচে নামে। শুক্রবার দাম কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৭১৭ ডলার হয়।