চাল আমদানিতে শুল্ক কমানোর ১০ দিনের মাথায় সরু চালের বড় মোকাম কুষ্টিয়ার বাজারে দাম কমতে শুরু করেছে। খুচরা পর্যায়ে মিনিকেট চাল ১ টাকা, মাঝারি মোটা চাল ২ টাকা ও মোটা চালের দাম কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, আমদানির পাশাপাশি ওএমএসের মাধ্যমে সরকার কম দামে চাল বিক্রির উদ্যোগ নেয়ার প্রভাব পড়েছে চালের দামে। মিলমালিকরা বলছেন, আমদানি অব্যাহত থাকলে দেশের বাজারে চালের দাম আরও কমে আসবে।
কুষ্টিয়া পৌর বাজারে খুচরা পর্যায়ে বৃহস্পতিবার সরু চাল মিনিকেট কেজিতে ১ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। আর কাজললতা ২ টাকা কমে ৫৯ টাকায় নেমে এসেছে। কেজিতে ৪ টাকা করে কমেছে আটাশ চাল, বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মোটা চালের দামও ৪ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকায়। তবে যে হারে দাম বেড়েছিল সে তুলনায় কমার গতি ধীর।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি করা চাল চলে আসায় এবং সরকার কম দামে চাল বিক্রির উদ্যোগ নেয়ায় কমছে চালের দাম। তবে কমার গতি আরও কয়েক দিন চলবে।
মিলমালিকরা বলছেন, চাল আমদানি বন্ধ না হলে বাজার আর অস্থিতিশীল হবে না। তারা চান চাল আমদানির এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক।
এদিকে চালের দাম কমতে শুরু করলেও বর্তমান বাজারদর নিয়ে খুশি হতে পারছেন না ভোক্তারা। তারা বলছেন, চালের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। অথচ দাম কমছে খুঁড়িয়ে। এর ফলে চালের দাম এখনও অনেক বেশি। চালের বাজার সাধারণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে মিল, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সরকারি মনিটরিং জোরদার করার কথা বলছেন তারা।
পৌর বাজারে চাল কিনতে আসা খোকন শেখ বলেন, ‘চালের দাম এখনও অতিরিক্ত বেশি। আমার মতো নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে এত দাম দিয়ে চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না। চালের দাম কেজিতে বাড়ল ৬ থেকে ৭ টাকা আর কমল ১ টাকা। এটা কোনো কথা হলো!’
সেলিনা খাতুন বলেন, ‘সব জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। চালের দাম চূড়ায় উঠে আছে। সেখানে কেজিতে ১/২ টাকা দাম কমিয়ে তো আর আমাদের কোনো লাভ হবে না। চালের দাম আরও বড় অঙ্কে কমা দরকার। আর সে জন্য খুচরা পর্যায়ে সরকারি মনিটরিং জোরদার করতে হবে। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো চালের দাম বাড়াতে পারবে না।’
পৌর বাজারের চাল বিক্রেতা সরোয়ার মোল্লা বলেন, ‘দাম বাড়ার সময় দ্রুতই বাড়ে। কিন্তু কমার সময় যেন নামতেই চায় না। মিলমালিকরা বলছেন যে ধানের দাম বেশি বলে চালের দাম বেশি। তারা চিকন চালের দাম কমাচ্ছেন না। মোটা চালের দামও যেটুকু কমেছে তাকে ঠিক কমা বলা যায় না।’
চালকল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি- চাল আমদানি যাতে বন্ধ না হয় এ বিষয়ে দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ নিন। আমরা মিলমালিকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তেমন পরামর্শই দিয়ে আসছি।’
কুষ্টিয়ার খাজানগরে দেশের বৃহত্তম সরু চালের মোকাম। এখানে ৫২টি অটোমেটিক রাইস মিলসহ মোট সাড়ে ৪০০ মিল রয়েছে। এখান থেকে সারা দেশের সরু চালের চাহিদার বড় অংশ সরবরাহ হয়। অন্যদিকে এখানকার ব্যবসায়ীরা সরু চালের বাজারও নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।