বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওষুধ রপ্তানিতে ধাক্কা

  •    
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:৪৮

ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, ‘করোনার ওষুধ রপ্তানি করে গত অর্থবছরে ভালো আয় করেছিলাম আমরা। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে না। তাই আয় কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। অন্য কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন দেশে আমাদের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। করোনার ওষুধ রপ্তানি না হলেও আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। দুই মাসের তথ্য দিয়ে সার্বিক অবস্থা বোঝা যাবে না। অর্থবছর শেষে ঠিকই রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হবে।’

২০১০-১১ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি করে মাত্র ৪ কোটি ৪২ লাখ ডলার আয় করেছিল বাংলাদেশ। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে ১০ বছরের ব্যবধানে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে সেই আয় পাঁচ গুণের বেশি বেড়ে ২৩ কোটি ডলারে ওঠে।

কিন্তু সেই ইতিবাচক ধারায় হোঁচট খেয়েছে। তৈরি পোশাকসহ সব খাতের রপ্তানিতে উল্লম্ফন দেখা দিলেও ওষুধ রপ্তানি বেশ কমেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় করোনাভাইরাস নিরোধক ওষুধ রপ্তানি না হওয়ায় সম্ভাবনাময় এ খাতের রপ্তানি নিম্নমুখী হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) জীবন রক্ষাকারী ওষুধপণ্য রপ্তানি থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম এসেছে ১৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এই দুই মাসে এ খাত থেকে ৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরেছিল সরকার। গত অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে আয় হয়েছিল ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের পুরো সময়ে (২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুন) ওষুধ রপ্তানি থেকে ২৩ কোটি ডলার বিদেশি মুদ্রা আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।

হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার ওষুধ রপ্তানি করে গত অর্থবছরে ভালো আয় করেছিলাম আমরা। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এ ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে না। তাই আয় কিছুটা নিম্নমুখী হয়েছে। অন্য কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন দেশে আমাদের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। করোনার ওষুধ রপ্তানি না হলেও আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘দুই মাসের তথ্য দিয়ে সার্বিক অবস্থা বোঝা যাবে না। অর্থবছর শেষে ঠিকই আমাদের ওষুধ রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হবে।’

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতি বছরই ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় বেড়েছে। তবে ২০১৫ সালে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় (মেধাস্বত্ব অধিকার-ট্রিপস) দেয়ার পর থেকে এ খাতের রপ্তানির পালে বাড়তি হাওয়া লাগে। এরপর করোনা চিকিৎসার ওষুধ রপ্তানি করে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে ওষুধ খাত।

করোনাভাইরাস মহামারিতে দেশের বিভিন্ন শিল্প খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও ওষুধশিল্পে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। উল্টো করোনা এ খাতে আশীর্বাদই বয়ে এনেছিল বলা যায়। অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়ছিল সমানতালে। রপ্তানি পণ্যের তালিকায় কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের অন্তর্ভুক্তি, গুণগত মানের উন্নয়ন ও সরকারের নীতিসহায়তার কারণে সুবাতাস বইছিল এ খাতে।

ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২০-২১ অর্থবছরে কেবল কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ রপ্তানি থেকেই আয় হয়েছিল প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরে তা আরও বেড়ে ৫০০ কোটি টাকার মতো দাঁড়ায়।

বাংলাদেশ মূলত ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, ক্যানসার, কুষ্ঠরোগ, অ্যান্টি-হেপাটিক, পেনিসিলিন, স্ট্রেপটোমাইসিন, কিডনি ডায়ালাইসিস, হোমিওপ্যাথিক, বায়োকেমিক্যাল, আয়ুর্বেদিক ও হাইড্রোসিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে এ তালিকায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ যুক্ত হয়, ফলে এ শিল্পে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়। গত ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি স্বাভাবিক হয়ে আসায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ওষুধ আর এখন রপ্তানি হচ্ছে না।

সে কারণেই এ খাত থেকে রপ্তানি আয় কম আসছে বলে জানান হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান। তবে এতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওষুধশিল্পের অগ্রগতি এখন গর্ব করার মতো। বাংলাদেশ শুধু নিজেদের ওষুধ নিজেরাই উৎপাদন করে না বরং বিশ্বের শতাধিক দেশে ওষুধ রপ্তানি করে। অথচ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমরা ৭০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতাম। এখন দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ মানসম্মত ওষুধ রপ্তানি করছে।’

শফিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প অল্প সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাস নিরোধক ওষুধের জেনেরিক সংস্করণ উৎপাদন করে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের রপ্তানি বেড়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টি-ভাইরাল ড্রাগ রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভির রপ্তানি বাড়াতে অবদান রেখেছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এখন এ ওষুধ থেকে রপ্তানি আয় কম আসছে। তবে এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে আমাদের ভাবমূর্তি বেড়েছে। এর ফলে ভবিষ্যতে আমাদের রপ্তানি আরও বাড়বে।’

সরকারের নীতিসহায়তার প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চপর্যায়ের নিয়ন্ত্রিত বাজারে তিন মাসের মধ্যে প্রবেশ করতে পেরেছে, যেখানে প্রবেশ করতে স্বাভাবিক অবস্থায় অন্তত দুই বছর সময় লাগত।’

ওষুধশিল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে রেমডেসিভির ও ফ্যাভিপিরাভিরের জেনেরিক সংস্করণটি আমদানি করছে।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট চাহিদার ৯৭ শতাংশের বেশি ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ৪৩টি কোম্পানির বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ ও ওষুধের কাঁচামাল যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১৫৩টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।

ইপিবির তথ্যে দেখা যায়, আগের বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরেও ওষুধ রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। ওই অর্থবছরে এ খাত থেকে ১৮ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ধরা ছিল। আয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার।

এ হিসাবে লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছিল প্রায় ৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশি এসেছিল ১১ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ১৬ কোটি ৯০ লাখ ২০ হাজার ডলার।

ঔষধ শিল্প সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ওষুধ রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশই দখল করে আছে বেক্সিমকো। দ্বিতীয় অবস্থানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। এ ছাড়া স্কয়ার, এসকেএফ, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস, একমি ল্যাবরেটরিজসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ওষুধ রপ্তানি করে থাকে।

এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী রপ্তানিতে কী প্রভাব পড়বে?

ওষুধ খাতে রপ্তানি আয় বেড়ে চললেও ২০২৬ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বের হলে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বে ছাড় পাওয়ার সুবিধা আর থাকার কথা নয়। বর্তমান ট্রিপস সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ওষুধের মেধাস্বত্বের জন্য কোনো ব্যয় না করেই ওষুধ তৈরি ও কেনাবেচা করার সুযোগ পাওয়ার কথা রয়েছে।

এলডিসি থেকে বের হলেও বাংলাদেশ যাতে এই সুবিধা পায়, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য জোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুই বছরের কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় ওলটপালট হয়ে যাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করছি, এই সুবিধাটা আমরা ২০৩৩ সাল পর্যন্ত পাব। ডব্লিউটিও ইতিবাচক সাড়া দেবে।’

একই আশা করছেন শফিউজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও বিশ্বাস একটা ভালো সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে ডব্লিউটিও। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের ওষুধশিল্প ও রপ্তানিতে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।’

তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে যেভাবে রপ্তানি বাড়ছিল, সেভাবেই বাড়বে। মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত কার্যক্রম চালিয়েছে। দেশ-বিদেশের বাজারে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করেছে। ভবিষ্যতে এই শিল্পের রপ্তানি আরও বাড়বে।’

‘ওষুধ খাতের রপ্তানি বাজার খুবই উজ্জ্বল বলে আমি মনে করি। ট্রিপস নিয়ে আমরা মোটেই চিন্তিত নই। সরকার যেভাবে সিরিয়াসলি কাজ করছে, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টি নিয়ে যতটা আন্তরিক, তাতে আমরা বুঝতে পেরেছি ২০৩৩ সাল অবধি আমরা এ সুবিধা পেয়ে যাব।

‘আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের এই খাত এখন এমন শক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে, বিশ্বের বড় বড় কোম্পানি আমাদের এখানে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে আসবে। সে কারণে ট্রিপস সুবিধা উঠে গেলেও বাংলাদেশের ওষুধশিল্পের কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না।’

এ বিভাগের আরো খবর