বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার দেনা নিয়েও বিমান লাভজনক?

  •    
  • ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৬:২৭

বেবিচকের কাছে ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৮৯৯ টাকা বকেয়া ফেলে রেখেছে বিমান। জ্বালানি তেলের জন্য বিপিসির কাছে দেনা ২ হাজার ১০৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবু বিমানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠান বলে দাবি করলেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি দেনা ঘাড়ে থাকা সত্ত্বেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে লাভজনক বলে দাবি করলেন বিমান প্রতিমন্ত্রী। বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে এবং জ্বালানি তেলের জন্য বিপিসির কাছে এ পরিমাণ দেনা পড়ে আছে বিমানের।

সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) সংলাপে বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এ দাবি করেন।

প্রতিমন্ত্রীর যুক্তি, ২০১৯ সালে বিমানে সংস্কার আনার পর থেকে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এ সংস্থাটি লোকসান করেনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে বিদেশে মানুষের একটি পারসেপশন যে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি বেতন পান। এ কারণে বিমানকে হয়তো সঠিকভাবে পরিচালনায় আমরা ব্যর্থ। শ্রদ্ধা রেখেই ক্লিয়ার করতে চাই। আমাদের মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয় থেকে স্বতন্ত্র। এই মন্ত্রণালয়ের সবগুলো অধিদপ্তরকেই নিজেদের আয়ে চলতে হয়। বিমান নিজে যদি উপার্জন করতে না পারে, তাহলে তারা বেতন পাবে না। এখানে সরকার থেকে কোনো বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় না।

‘এই কোভিডের মধ্যেও, সারা বিশ্বে যত বড় এয়ারলাইনস তত বড় ক্ষতি তাদের। পর্যটনেও একটি বড় বিপর্যয় হয়েছে। সেখানেও আমরা রাত-দিন কাজ করেছি। সেই সময়েও আমরা চেষ্টা করেছি, বিভিন্ন দূতাবাসে যোগাযোগ করে যাতে আমাদের বিমানগুলো কার্গো অপারেট করে হলেও এই দুঃসময়ে টিকে থাকতে পারে। সেই সময়েও আমাদের আয় অব্যাহত ছিল। বিমান সব সময়ই লাভের মধ্যে ছিল।’

বেবিচকের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন চার্জ ও ফি বাবদ বিমানের বকেয়ার পরিমাণ ৪ হাজার ৭৪৪ কোটি ৭৪ লাখ ৪ হাজার ৮৯৯ টাকা। এর মধ্যে মূল বকেয়া ৯৫৩ কোটি ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৮৪৯ টাকা। বাকি পাওনার মধ্যে ভ্যাট ৩৪১ কোটি ৮৫ লাখ ১১ হাজার ৮৬৩ টাকা, আয়কর ৩১ লাখ ৮০ হাজার ৫৭ টাকা এবং বকেয়ার ওপর সারচার্জ ৩ হাজার ৪৪৯ কোটি ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮ টাকা।

দীর্ঘদিন ধরে তাগাদা দেয়ার পরেও বিমান এ টাকা পরিশোধ করছে না বলে সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক এ সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

অন্যদিকে, উড়োজাহাজের জ্বালানি জেট ফুয়েল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা অয়েলের হিসেবে বিমানের কাছে ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়া বাবদ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পাওনা রয়েছে ২ হাজার ১০৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।

বকেয়া আদায়ে সর্বশেষ গত বছরের ১৮ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বিমান ২০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বকেয়া আদায়ের বিষয়ে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড (পিওসিএল) চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সংলাপে বলেন, ‘সরকার যে হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা বিমানকে দিয়েছিল, সেটাও লাভসহ তাদের পরিশোধ করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে একটি সমালোচনা আসে যে তেলের মূল্য বাবদ দুই বা আড়াই হাজার কোটি টাকা বাকি রেখে বিমান লাভ দেখায়।

‘আমি এটা ক্লিয়ারলি বলছি, আমরা ২০১৯ সালে কিছু সংস্কার এনেছিলাম। এর ফলে স্বল্প সময়েই বিমান লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সে সময় এপ্রিল, মে, জুন– এই তিন মাসেই আমরা প্রায় ২৭৩ কোটি টাকা লাভ করেছিলাম। এবং ওই বছরের সব দায় দেনা, পুরানোটা না, ওই বছরের সব দেনা আমি আসার পরেই নির্দেশনা দিয়েছি সিভিল এভিয়েশনের এবং অন্যান্যদের যে পাওনা সব যেন আপটুডেট করা হয়। এগুলো আপটুডেট করে আমরা এখন লাভের মধ্যে আছি।’

বেবিচকের সূত্র জানায়, বিমানের পক্ষ থেকে এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট (এওসি) নবায়নের জন্য বেবিচকের কাছে প্রস্তাব করা হলে তাদের পাওনা রাজস্ব পরিশোধের অনুরোধ করা হয়। এ অনুযায়ী বিমান গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর একটি পেমেন্ট প্ল্যান জমা দেয়। ওই প্ল্যান অনুযায়ী ২০২২ সালে ৩৪০ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে ৪৪০ কোটি টাকা, ২০২৪ সালে ৫৯০ কোটি টাকা, ২০২৫ সালে ৭৪০ কোটি টাকা এবং ২০২৬ সালে ২ হাজার ৩৩৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা মিলিয়ে মোট বকেয়া ৪ হাজার ৪৪৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় বিমান।

প্রতিশ্রুতি পর্যালোচনা করে নিরীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে প্রতি মাসে ২৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মূল বকেয়া ১২ কোটি ৫০ লাখ, ভ্যাট ট্যাক্স ৩ কোটি ৩৩ লাখ ও সারচার্জ ১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া পুঞ্জীভূত দেনা পরিশোধের পেমেন্ট প্ল্যানের সঙ্গে প্রতি মাসের চলতি বিলের অর্থ নিয়মিত পরিশোধের প্রতিশ্রুতিও দেয় বিমান। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের এওসি নবায়ন করা হয়।

নিরীক্ষায় বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই বিমান তাদের প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতি মাসে চলতি বিল বাবদ প্রায় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা পাওনা হয়। সে অনুযায়ী ২০২২ সালে প্রতি মাসে বকেয়া অর্থ থেকে ২৮ কোটি ৩৩ লাখ এবং চলতি বিল ১৫ কোটি টাকা মিলিয়ে ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা পরিশোধের কথা। কিন্তু জানুয়ারিতে বিমান পরিশোধ করেছে মাত্র ১৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা প্রতিশ্রুত অর্থের ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে ১২ কোটি ৭৫ লাখ ৪১ হাজার ১২৬ টাকা, মার্চে ২৯ কোটি ৮৩ লাখ ৪২ হাজার ১৬৭ টাকা, এপ্রিলে ১১ কোটি ৫ লাখ ১৪ হাজার ২২৩ টাকা এবং মে মাসে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকা বেবিচককে দিয়েছে বিমান। কোনো মাসেই পেমেন্ট প্ল্যান অনুযায়ী টাকা দিতে পারেনি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়াও গত বছরের ১৫ মার্চ জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস কোম্পানির মোট রাজস্বের ৫ শতাংশ রয়্যালটি বাবদ বেবিচককে পরিশোধ করার কথা বিমানের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ খাতে কোনো টাকাই বিমান বেবিচককে দেয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর