দেশের পুঁজিবাজারে ওটিসি মার্কেটে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ার নিয়ে কারসাজি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইস) এই কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় পুঁজিবাজারে ইউনাইটেড এয়ার নিয়ে কারসাজি খতিয়ে দেখতে বিএসইসিকে অনুরোধ করেছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি এমন পদক্ষেপ নিয়েছে।
তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কী কারণে পুঁজিবাজারে ইউনাইটেড এয়ারের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। বোর্ড পুনর্গঠন কেন কিভাবে করা হয়েছিল এবং পরে কিভাবে তারা আবার কাজ শুরু করল তা-ও তদন্ত করে দেখবে। ইউনাইটেড এয়ার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির পর এর শেয়ারের লেনদেন নিয়ে কোনো কারসাজি হয়েছিল কিনা সে বিষয়টিও তদন্ত করা হবে।
তদন্ত কমিটিতে পাঁচজন সদস্য রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ওহিদুল ইসলাম, উপ-পরিচালক শাহারিয়ার পারভেজ ও মো. শাহনেওয়াজ। এর বাইরে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে একজন প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে থাকবেন।
ইউনাইটেড এয়ার পুঁজিবাজারের ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের অপেক্ষায় আছে।
তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি কোম্পানিটির আর্থিক অসঙ্গতি খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
কোম্পানিটির আগের পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আছে। কমিটি সে বিষয়টিও দেখবে। আগের পরিচালনা পর্ষদ ইউনাইটেড এয়ারওয়েজকে কারসাজি করে ইচ্ছাকৃতভাবে লোকসানি কোম্পানিতে পরিণত করেছে কিনা সেটাও দেখা হবে।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ২০০৭ সালে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে তারা দেশের অভ্যন্তরে সেবা দেয়া শুরু করে। পরে দেশের বাইরেও সেবা দিচ্ছিল। ২০১০ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় প্রতিষ্ঠানটি।
কোম্পানির পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো ইউনাইটেড এয়ায়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এর পর আবার চালু হলেও ২০১৬ সালে এর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালে ইউনাইটেড এয়ারকে বাংলাদেশের মূল পুঁজিবাজার থেকে ওটিসি মার্কেটে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বর্তমানে এই শেয়ারকে অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের জন্য রাখা হয়েছে।
গত বছর এয়ারলাইন্সটি পুনরুজ্জীবিত করতে বিএসইসি আটজন অভিজ্ঞ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়। গঠন করা হয় নতুন পরিচালনা পর্ষদ।
কোম্পানিটির মূল মালিক ক্যাপ্টেন তাসারুল আহমেদ চৌধুরী বিদেশে পলাতক রয়েছেন। নতুন পরিচালনা পর্ষদ ২০২১ সালের ৪ মার্চ দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই এয়ারলাইন্সটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেন।
ওটিসি মার্কেটের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ার ১ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। অথচ শেয়ারটির অভিহিত মূল্য ছিল ১০ টাকা।
পুঁজিবাজারে এই কোম্পানির ৮২ কোটি ৮০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৮০টি শেয়ার আছে। এর মধ্যে ২ দশমিক ৫০ শতাংশ আছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে আছে ১১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বাকি ৮৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
ইউনাইটেড এয়ারের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৮২৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাজার মূলধন আছে ১৬৬ কোটি টাকা। রিজার্ভের পরিমাণ ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।