বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওয়াশিংটনের বৈঠকে বাংলাদেশের চোখ ঋণে

  •    
  • ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:২২

ওয়াশিংটন ডিসিতে ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে দরকষাকষির মাধ্যমে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাজেটে সহায়তা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ১০ থেকে ১৬ অক্টোবর বসছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল-আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সম্মেলন।

বহুজাতিক এই ঋণদানকারী দুই সংস্থা বছরে দুই দফা বৈঠকে বসে। একটি বসন্তকালীন সভা, যা এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়। আরেকটি হয় অক্টোবরে।

প্রতি বছর এ সভা হলেও কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এবারের বৈঠক অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ।

কোভিডের কারণে গত দুই বছর ভার্চুয়ালি সভার পর এবার সরাসরি বৈঠক হতে যাচ্ছে।

বিশ্বের ১৮৮টি দেশের অর্থমন্ত্রী ও গভর্নরদের অংশগ্রহণে শুরু হতে যাওয়া আসন্ন বৈঠকটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংকের কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

কেননা সম্মেলনের পাশাপাশি দরকষাকষির মাধ্যমে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। এ জন্য বেশ কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে সরকারকে।

ঋণের অঙ্ক সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা না হলেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আইএমএফের কাছে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ চাওয়া হবে।

এ ছাড়া বাজেটে সহায়তা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করবে সরকার।

আইএমএফ থেকে এই ঋণ পেলে বাংলাদেশের ব্যালান্স অফ পেমেন্ট নিয়ে সম্ভাব্য যে ঝুঁকি আছে, তা মোকাবিলা করা সহজ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আসন্ন সম্মেলনে যোগ দিচ্ছে।

দলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ছাড়াও অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম থাকবেন বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বৈঠকের আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। ২৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় এ‌ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

সূত্র জানায়, আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য শর্ত পূরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ। সম্মেলন চলাকালে এক বৈঠকে ঋণ পাওয়ার জন্য দেশের অর্থনীতির বর্তমান চিত্র বিশদভাবে তুলে ধরবেন অর্থমন্ত্রী। সম্মেলন শেষেই যেন ঋণ নিয়ে আলোচনা শুরু করতে তাদের একটি মিশন বাংলাদেশ সফরে আসে সে জন্য সংস্থাটিকে অনুরোধ জানানো হবে।

ওয়াশিংটনে আলোচনা সফল হলে অক্টোবরেই সংস্থাটির মিশন আসবে বাংলাদেশ সফরে। ওই সময় ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হবে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওয়াশিংটনের আসন্ন সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে আইএমএফের কাছে ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে।’ তবে ঋণের পরিমাণ সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আইএমএফের সব শর্ত মানতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তাদের সব শর্ত খারাপ নয়।’

বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় কর আহরণ খুবই কম। আইএমএফের পক্ষ থেকে এটি বাড়ানোর তাগিদ রয়েছে।

রাজস্ব আয় বাড়াতে দীর্ঘমেয়াদি একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। আগামী পাঁচ বছরে কর জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশ উন্নীত করতে চায় সরকার, যা এখন আছে ১০ শতাংশের একটু বেশি। ওয়াশিংটনের বৈঠকে এ বিষয়টি তুলে ধরবে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। বাজার ভিত্তিতে জ্বালানি পণ্যের দাম নির্ধারণেরও প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াতে বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশে বাজার ভিত্তিতে তেলের দাম নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে আইএমএফকে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে বিদ্যুতের দাম আরেক দফা বাড়ানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যে অর্থ সংগ্রহ করে, তা সরাসরি বাজেট থেকে আলাদা করার পক্ষে আইএমএফ। এটা করতে পারলে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে বেশিসংখ্যক গরিব মানুষকে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।

সরকার মনে করে, সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে সামাজিক সুরক্ষার বিদ্যমান নীতি ঠিকই আছে। সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার সংস্কার চায় আইএমএফ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।

আইএমএফ বেঁধে দেয়া ঋণের সুদহার (৯ শতাংশ) তুলে দেয়া এবং এই সময়ে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির পক্ষে। সংস্থাটি বলেছে, এতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে।

তবে সুদহারের সীমা আপাতত তুলবে না বলে আইএমএফকে জানিয়ে দিয়েছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সুদহার সহনীয় রাখায় কোভিডের পর দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া সুদহার বাড়ালে বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে মনে করে সরকার। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম ধীরে ধীরে কমে আসছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী এক থেকে দুই মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে আশা করা যায়।

ডলারের তুলনায় টাকার মান কমানোর সাম্প্রতিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আইএমএফ বলেছে, এতে ডলারের তারল্য পরিস্থিতি ভালো হবে।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমানো এবং সুশাসন নিশ্চিত করারও পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। এ ছাড়া বাজেটে ভর্তুকির চাপ কমাতে বলেছে সংস্থাটি।

সরকার মনে করছে, সার ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে ভর্তুকির চাপ কমবে। এতে সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে।

এ বিভাগের আরো খবর