চট্টগ্রাম থেকে বগুড়ায় পরিবহনের সময় সাভারের হেমায়েতপুরে ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) সার বদলে ৯ ট্রাকে নকল সার তোলার ঘটনায় দেড় কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়েছে।
সার কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা মামলায় এই অর্থ দাবি করে চট্টগ্রাম টিএসপি সার কমপ্লেক্স লিমিটেড।
এর আগে ২ সেপ্টেম্বর আসল টিএসপি সার বদলে ভেজাল পরিবহন করার অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। মামলাটি করেন চট্টগ্রাম টিএসপি সার কমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মাজহারুল ইসলাম।
রোববার তিনি ক্ষতিপূরণ দাবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ওই মামলায় পরিবহন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক মোয়াজ্জেম হোসেনসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ভেজাল পাওয়া ৯ ট্রাকে মোট ১২৪ দশমিক ৮ টন টিএসপি সারের দাম ধরা হয়েছে ৮১ লাখ ১২ হাজার টাকা।
সার পরিবহনে প্রতারণার কারণে টিএসপি সার কমপ্লেক্স লিমিটেডের ভাবমুর্তি ক্ষুণ্ন এবং পরিবহন শর্ত লঙ্ঘনের জন্য দ্বিগুণ মূল্য ১ কোটি ৬২ লাখ ২৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। পরিবহন ঠিকাদার কার্যাদেশের ৩ (চ) নম্বর শর্ত অনুযায়ী এই দ্বিগুণ মূল্য নির্ধারণ করে সার কারখানার কর্তৃপক্ষ।
মামলার এজাহার সূত্রে এসব বিষয় জানা গেছে।
মাজহারুল ইসলাম বলেন, প্রথমে ৭ ট্রাকে টিএসপি সারে ভেজাল প্রমাণ হয়। পরে আমাদের ল্যাবে আরও দুই ট্রাকের সারে ভেজাল পাওয়া যায়। এ কারণে ১৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়।
তিনি বলেন, এই টিএসপি সার রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এর ক্ষতি করার জন্য মামলায় অভিযুক্তদের কাছে ৯ ট্রাক সারের দ্বিগুণ মূল্য এক কোটি ৬২ লাখ ২৪ হাজার টাকা আদায়ের দাবি করা হয়েছে।
- আরও পড়ুন: হেমায়েতপুরে বদলে যায় ৭ ট্রাক আসল টিএসপি
পুনরায় নিশ্চিত হওয়ার জন্য বাকি ৯ ট্রাকের টিএসপি সারের নমুনা আবার গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। এ কথা জানান বগুড়া বাফা গুদামের ইনচার্জ মোস্তফা কামাল।তিনি বলেন, ৯ ট্রাকের সার সঠিক আছে বলে জানা গেছে। তবু অধিক নিশ্চিত হওয়ার জন্য রাজশাহী মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে নমুনা পাঠানো হয়েছে। শনিবার রাতে এই নমুনা পাঠানো হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২৭ আগস্ট চট্টগামের টিএসপি সার কারখান থেকে ৭ ট্রাকে ৯৮ টন সার বগুড়ার বাফা গুদামে আসে। গুদামে ট্রাক থেকে এক দশমিক ২ টন সার নামানো হয়। এ সময় খেয়াল করা হয় আগের পাঠানো বস্তাগুলো থেকে এই চালানের বস্তায় সেলাইয়ে ভিন্নতা রয়েছে। এতে সন্দেহ হলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সার আনলোড বন্ধ রেখে চট্টগ্রামে জানানো হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রামের সার কারখানা কর্তৃপক্ষ তিন সদস্যের একটি কমিটি পাঠায়। এর মধ্যে ২৮ আগস্ট আরও ১১টি ট্রাক একই কারখানা থেকে টিএসপি নিয়ে বগুড়া বাফা গুদামে পৌঁছায়।
তদন্ত কমিটি ১৮ ট্রাক থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিজেদের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়। ১ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট ৭ ট্রাকের টিএসপি সার পরীক্ষার ফল দেয়। এতে সারগুলো ভেজাল বলে উল্লেখ করা হয়। চট্টগ্রাম সার কারখানার ল্যাবে আরও দুটি ট্রাকের টিএসপি সারে ভেজাল পাওয়া যায়।
প্রতারণা করে ভেজাল সার উৎপাদন, সংরক্ষণ ও পরিবহনের অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এর মধ্যে ঠিকাদার মোয়াজ্জেম হোসেন, পরিবহন প্রতিনিধি আবু তাহেরসহ ৯ ট্রাকের সার পরিবহনে যুক্ত ১৫ চালক ও সহকারীকে আসামি করা হয়।
মামলার তদন্ত করছেন বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক আব্দুল মোন্নাফ।