বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শুরু

  •    
  • ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২৩:০৪

অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০০ কোটি ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এই ঘাটতি ছিল ১৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

আমদানি কমার পরও বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অফ পেমেন্ট) ঘাটতি নিয়ে শুরু হলো ২০২২-২৩ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচকে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

অথচ গত বছরের প্রথম জুলাইয়ে এই সূচকে ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। পরের মাসগুলোতে অবশ্য সেই উদ্বৃত্ত আর ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় প্রতি মাসেই বাড়তে থাকে ঘাটতি। শেষ পর্যন্ত অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ১৮ দশমিক ৭০ বিলিয়ন (১ হাজার ৮৭০ কোটি) ডলারের বিশাল নিয়ে শেষ হয় ২০২১-২২ অর্থবছর।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কোনো অর্থবছরে ব্যালান্স অফ পেমেন্টে এত বড় ঘাটতি দেখা যায়নি। আমদানির উল্লম্ফনে এই বেহাল দশা হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষকরা। মহামারি করোনা ভাইরাসের ধাক্কা কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ওলটপালট হয়ে যাওয়া বিশ্ব অর্থনীতিতে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্য, জাহাজ ভাড়াসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। আর সে কারণেই বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে বিশাল ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয় জানিয়েছেন তারা।

আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে এই সূচকে ৪ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন (৪৫৭ কোটি ৫০ লাখ) ডলার ঘাটতি ছিল।

১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের দুই মাস (জুলাই-আগস্ট) শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার জুলাই মাসের ব্যালান্স অফ পেমেন্টের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, জুলাই মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৩২ কোটি ১০ লাখ ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই মাসে এই সূচকে কোনো ঘাটতি ছিল না; উল্টো ২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত বছরের আগস্ট মাস থেকে আমদানি ব্যয় বাড়তে শুরু শুরু করে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ব্যালান্স অফ পেমেন্টে ঘাটতি। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩১ কোটি ৪০ লাখ (২.৩১ বিলিয়ন) ডলার। চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭৭ কোটি ডলার। এভাবে প্রতি মাসেই বেড়েছে ব্যালান্স অফ পেমেন্টের ঘাটতি।

‘ওই ঘাটতি দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল’ মন্তব্য করে অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানি কমতে শুরু করেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় ভালো আসছে। আরও দু-এক মাস গেলে বোঝা যাবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘অস্বাভাবিক আমদানি বৃদ্ধির কারণেই গত অর্থবছরে বৈদেশিক লেনদেনে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ কথা ঠিক যে, আমদানি বাড়ার একটা ভালো দিকও আছে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ে; কর্মসংস্থান হয়। অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়। তবে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি সত্যিই উদ্বেগের ছিল। ওই ঘাটতির কারণেই বৈদেশিক মুদ্রাবাজার তথা ডলারের বাজারে অস্থিরতা বা সংকট দেখা দিয়েছিল। এখনও সেটা আছে।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, খাদ্যপণ্যসহ সব ধরনের জিনিসের ঊর্ধ্বমূল্য আমদানি খরচ বাড়ার একটি কারণ। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও আমদানি ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা গেছে। এখন দেখা যাক কী হয়?’

বেশ কয়েক বছর পর ২০২০-২১ অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ। প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে শেষ হয়েছিল ওই বছর।

তার আগে ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উদ্বৃত্ত ছিল ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২ শতাংশ

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ২১ দশমিক শূন্য তিন বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা ছিল আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ কম।

তবে এবার এই সূচকে উল্লম্ফন নিয়ে অর্থবছর শুরু হয়েছে। প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ২১০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি।

২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স।

সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি ১ বিলিয়ন ডলার

সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যেও (ওভারঅল ব্যালেন্স) ঘাটতি নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। জুলাইয়ে এই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১০৮ কোটি ২০ লাখ (১.০৮ বিলিয়ন) ডলার।

গত অর্থবছরের জুলাইয়ে ৩১ কোটি ৬০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। তবে অর্থবছর শেষ হয়েছিল গত ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের ঘাটতি নিয়ে।

২০২০-২১ অর্থবছরে ওভারঅল ব্যালেন্সে ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল।

আর্থিক হিসাবেও ঘাটতি

জুলাই মাসে আর্থিক হিসাবে (ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি। গত বছরের জুলাইয়ে অবশ্য এই সূচকে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

১৩ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষ হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরের ১৪ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল।

করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ অন্য দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ঋণসহায়তা পাওয়ায় গত আর্থিক হিসাবে বড় উদ্বৃত্ত ছিল বলে জানান আহসান মনসুর।

নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাব উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।

বাণিজ্য ঘাটতি ২ বিলিয়ন ডলার

জুলাই মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯৮ কোটি ১০ লাখ (প্রায় ২ বিলিয়ন) ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এই ঘাটতি ছিল ১৩৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এর পর থেকেই আমদানিতে জোয়ার বইতে শুরু করে। আর তাতে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ব্যবধানও চূড়ায় উঠতে থাকে।

শেষ পর্যন্ত পণ্য বাণিজ্যে ৩৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়।

এর আগে কখনই এত বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়েনি দেশ।

২০২০-২১ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাইয়ে ৫৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। এই অঙ্ক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ২৩ দশমিক ২৩ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৩৬ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে গত জুলাই মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৩৪০ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকরা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি।

এ হিসাবেই জুলাইয়ে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার।

সেবা বাণিজ্যেও ঘাটতি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই মাসে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাইয়ে এই ঘাটতি ছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার।

মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর