২০২৬ সালের পর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে যাবে বাংলাদেশ। উত্তরণ-পরবর্তী অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে নানামুখী সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বাংলাদেশের। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আয়কর আইন ও শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সহজ করে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শনিবার অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকরণ সংক্রান্ত সাব-কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত জাতীয় কর্মশালায় এ সুপারিশ করা হয়।
কর্মশালায় বলা হয়, আদায় বাড়াতে হলে রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি কর অব্যাহতির সুযোগ সীমিত করতে হবে।
উত্তরণ-পরবর্তীতে বাংলাদেশকে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে তার প্রস্তুতি, পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তবায়ন ও মনিটরিং বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটির কাজে সহায়তার জন্য গঠিত বিষয়ভিত্তিক সাতটি সাব-কমিটির মধ্যে একটি হচ্ছে ‘অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আহরণ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক সাব-কমিটি।
এই সাব কমিটি শনিবার কর্মশালায় তাদের প্রতিবেদন দেয়। এর উপর বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন।
অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অংশীজনদের পক্ষে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, বিজিএমই সভাপতি ফারুক হাসান বক্তব্য রাখেন।এছাড়া বিআইডিএস এর মহাপরিচালক ড. বিনায়েক সেন ও পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার বক্তব্য রাখেন।
প্যানেল আলোচক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বক্তব্য রাখেন।
কর্মশালায় ‘আয়কর সংক্রান্ত বিধিবিধান এবং পদ্ধতি সংস্কার’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপ তাদের প্রতিবেদনে অব্যাহতির অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্র তুলে ধরে এবং রাজস্ব প্রশাসনে অটোমেশন ও ডিজিটাইজেশনের ওপর গুরুত্ব দেয়।
অপরদিকে,‘ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ’ বিষয়ক স্টাডি গ্রুপের প্রতিবেদনে আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার কমানোর সুপারিশ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত শুল্ক মুক্ত সুবিধা হারাবে। ফলে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবে দেশের রপ্তানিখাত।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, রপ্তানি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি অথবা, প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে।
তবে এরূপ বাণিজ্য চুক্তির ফলে রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ জন্য অম্ভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ তথা রাজস্ব আয়ে বেশি নজর দিতে হবে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পথ মসৃণ করার জন্য রপ্তানিকারক, আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত জরুরি বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।