বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদে ফিরতে চান তারিক, সুযোগ নেই: ডিএসই

  •    
  • ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:৫৪

গত বছরের ২৫ জুলাই তিন বছরের জন্য দায়িত্ব নেয়া তারিক আমিন ভুঁইয়া হঠাৎ করেই পদত্যাগ করে বসেন গত ২৩ আগস্ট। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ গত ২৭ আগস্ট এই পদত্যাগপত্র গ্রহণও করে। তবে এখন পদে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করে ডিএসই ও বিএসইসিকে চিঠি দেন তারিক।

কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে পদত্যাগ করা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তারিক আমিন ভূঁইয়া আবার পদে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার লক্ষ্যে তিনি দায়িত্বে ফিরতে চান বলে জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে এটাও বলেছেন যে, এমডির যে ক্ষমতা সেটি যেন তিনি প্রয়োগ করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে।

তারিক সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা- বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম, কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ ও ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমানের কাছে চিঠি লিখেছেন।

অবশ্য ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেছেন, পদত্যাগপত্র গ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর এটি ফিরিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএসইসির একজন কমিশনার বলেছেন, যেহেতু স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, তাই তাদের কিছু করার নেই।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ভবন। ছবি:নিউজবাংলা

ওই চিঠিতে তিনি বলেন, ডিএসইর কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং পদত্যাগের বিষয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ না দিয়েই পরিচালনা পর্ষদ পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছে। এমনকি তিনি ৯ সপ্তাহের নোটিসে পদত্যাগ করলেও পর্ষদ মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে তা কার্যকরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

একে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ উল্লেখ করে তারিক আমিন বলেন, “আমি ডিএসইর সঙ্গে কাজ করতে অত্যন্ত আগ্রহী। স্বল্প সময় দায়িত্ব পালনকালে স্টক এক্সচেঞ্জকে দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘ফিন্যান্সিয়াল হাব’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে চাই।”

গত বছরের ২৫ জুলাই তিন বছরের জন্য দায়িত্ব নেয়া তারিক হঠাৎ করেই পদত্যাগ করে বসেন গত ২৩ আগস্ট। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালনা পর্ষদ গত ২৭ আগস্ট এই পদত্যাগপত্র গ্রহণও করে।

বিএসইসিতে দেয়া চিঠিতে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের বিষয়ে আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেয়া হোক। দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে কাজ করতে পারলে আমি খুশি হব।’

যে ঘটনায় তারিকের পদত্যাগ

সম্প্রতি ডিএসইর ৯৫ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেন এমডি তারিক আমিন। সেটি গত ২৪ আগস্ট জরুরি বৈঠক করে আটকে দেয় পরিচালনা পর্ষদ। কিন্তু পর্ষদের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে পরের দিন মঙ্গলবার সকালে পদোন্নতির ঘোষণা দেন তারিক। এরপর রাতেই ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বরাবর ই-মেইলে পাঠান পদত্যাগপত্র।

কর্মকর্তাদের পদোন্নতির এই সিদ্ধান্ত ছিল এমডির। তার এখতিয়ারেও ছিল এই সিদ্ধান্ত। সম্প্রতি এত বেশি কর্মকর্তার একসঙ্গে পদোন্নতির ঘটনা আর ঘটেনি, তবে এর মধ্যে আরও অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হননি।

গত ৩১ মে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

তারা মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি ডিএসইর বোর্ডও এই সিদ্ধান্ত ভালোভাবে নেয়নি। তারা এমডিকে যে ভাষায় কথা বলেছে, সেটি পছন্দ হয়নি তারিকের। পরে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন।

ডিএসইতে পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটা দূরত্ব সব সময়ই চলে আসছে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের পরও ব্যবস্থাপনার চেয়ে বেশি ক্ষমতা চর্চার প্রবণতা রয়েছে বোর্ডের মধ্যে। কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা এবং স্ব-অধিকারে দায়িত্ব পালন করতে না পারারও অভিযোগ রয়েছে এমডিদের।

অন্যদিকে তারিক আমিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বোর্ডের সিদ্ধান্ত এবং আইন উপেক্ষা করে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছেন, বিভিন্ন বিভাগ ও পদ সৃষ্টি করেছেন।

তারিক আমিন ভূঁইয়া তার ব্যাখ্যায় জানিয়েছেন, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইনের বলেই তিনি সব কাজ করেছেন।

পদোন্নতি নিয়ে যা যা বলেছেন তারিক আমিন

নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দেয়া চিঠিতে তারিক আমিন বলেছেন, ২৫ জুলাই দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি ডিএসইর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেছেন। শীর্ষস্থানীয়দের সঙ্গে একা ও সম্মিলিতভাবে বসেছেন। তিনি লক্ষ করেছেন যে কিছু ভালো এবং সক্ষম কর্মী থাকা সত্ত্বেও ডিএসই ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমে নির্ধারিত উদ্দেশ্য পূরণ বা বিকাশ সাধন হয়নি।

তিনি জানান, ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা হিসেবে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্টক এক্সচেঞ্জের বিকাশের জন্য কিছু মডেল ডিজাইন করেন। ‘ফাইভ-পি’ভিত্তিক ডিএসইর ‘ডিজিটাল রূপান্তর’ শীর্ষক পরিকল্পনাটি ডিএসই বোর্ডে উপস্থাপন করেন। যা ৭ সেপ্টেম্বর বোর্ডের সভায় অনুমোদন করা হয়।

তারিক লেখেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, ডিএসইতে খুব সম্ভাবনাময় কর্মী রয়েছেন যারা স্টক এক্সচেঞ্জের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব দিতে পারেন। তারপরেও তাদের পদোন্নতি, পারিশ্রমিক এবং কর্মচারীদের সুবিধার বিষয়গুলো দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষা করা হচ্ছিল।

তিনি বলেন, ‘আমি আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে একটি উদীয়মান বাজারে পরিণত হতে এবং শেয়ারহোল্ডারদের ভ্যালু বাড়াতে আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল কর্মীদের স্বীকৃতি দিতে হবে।’

তারিক লেখেন, সমস্যাটি বিবেচনা করে তিনি ডিএসইর (বোর্ড এবং প্রশাসন) রেগুলেশন, ২০১৩ বিশ্লেষণ করে দেখেন যে ডিমিউচুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জের এমডি এবং একজন পরিচালক হিসেবে যেকোনো স্তরে অফিসারদের পদোন্নতি দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সেই অনুযায়ী তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব বরাদ্দ শুরু করেন।

তারিক ডিএসই (বোর্ড এবং প্রশাসন) রেগুলেশন, ২০১৩-এর নানা বিধান তুলে ধরে বলেন, পদোন্নতি দেয়া তার এখতিয়ারে। এই পদোন্নতি ও পারিশ্রমিকসংক্রান্ত বিষয়গুলো ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে অমীমাংসিত ছিল। এটি ডিএসইর কর্মচারীদের জন্য অত্যন্ত বঞ্চনার বিষয়। এসব নিয়ে তারা তার সঙ্গে একক ও সম্মিলিতভাবে আলোচনা করেছে।

ফেরানো ‘সম্ভব নয়’

তারিক চিঠি দিলেও তার পদত্যাগপত্র ফিরিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এটার কি এখন আর স্কোপ আছে? নাই। উনি নিজে নিজে পদত্যাগ করেছেন। বোর্ড সেটা অ্যাকসেপ্ট করেছে। এখন উনি চিঠি দিলেই কি হবে? আমাদের বোর্ড থেকে এটা আর বিবেচনা করার সুযোগ নাই। এখন কমিশন থেকে যদি কিছু করে সেটা তাদের মতো করে চিন্তা করবে। ’

বিএসইসির একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘তাকে তো কেউ রিজাইন দিতে বলেনি। তিনি নিজেই রিজাইন দিয়েছেন। বোর্ড থেকে তাকে বের করে দেয়া হলে তখন ইন্টারফেয়ার করা যেত। কিংবা তিনি কোনো অন্যায় করলে বলা যেত যে আপনি এটা করেছেন, এটার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে যেতে দেয়া হবে না। কিন্তু তিনি তো একজন ভালো মানুষ। এটা বলার জায়গা তো নেই। তাহলে তাকে কীভাবে আটকে রাখি?’

এ বিভাগের আরো খবর