অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের প্রতি অবশেষে ‘সদয়’ হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। দেশ দুটিকে মোটা অঙ্কের ঋণ দিতে রাজি হয়েছে সংস্থাটি।
শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ কোটি (২.৯০ বিলিয়ন) ডলার এবং পাকিস্তানকে ১১০ কোটি (১.১০ বিলিয়ন) ডলার ঋণ খুব শিগগিরই ছাড় করা হবে বলে জানিয়েছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃহস্পতিবার আইএমএফের সদর দপ্তরে ঋণদাতা সংস্থাটির বোর্ড সভায় শ্রীলঙ্কার বহুল প্রতীক্ষিত ঋণ অনুমোদন পায়। এর আগে মঙ্গলবার পাকিস্তানকে ঋণের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে বলে আইএমএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার ঋণ প্রসঙ্গে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘এই ঋণ কর্মসূচির উদ্দেশ্য শ্রীলঙ্কার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা।’
বর্ধিত ঋণ সুবিধার অধীনে আইএমএফ চার বছর মেয়াদে এই ঋণ দিচ্ছে।
এ জন্য শ্রীলঙ্কার সরকারি ঋণদাতাদের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি বেসরকারি ঋণদাতাদের সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে সংস্থাটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, আইএমএফের ঋণ পরিশোধ ও অর্থায়নের ব্যবধান দূর করতে শ্রীলঙ্কার ঋণদাতাদের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি ও বহুপক্ষীয় অংশীদারদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থায়নের নিশ্চয়তার প্রয়োজন পড়বে।
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে ভারত মহাসাগরের ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় জ্বালানি তেল, খাবার ও ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি।
নিত্যপণ্যের দাম সেখানে আকাশ ছুঁয়েছে; থমকে গেছে স্বাভাবিক জনজীবন। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে দেশটি আইএমএফের কাছ থেকে জরুরি ভিত্তিতে ৩০০ কোটি ডলারের বেশি জরুরি ঋণ চেয়েছে।
আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচির লক্ষ্য শ্রীলঙ্কাকে রাজস্ব পুনর্গঠনে সহায়তা, জ্বালানি ও বিদ্যুতের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ, সামাজিক ব্যয় বৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন জোরদার এবং দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ পুনর্গঠন করা।
কিস্তি দিতে না পারায় শ্রীলঙ্কার প্রায় ৩ হাজার কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠন করতে হবে। এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য ভারত ও চীনসহ অন্যান্য প্রধান ঋণদাতা দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে জাপান।
১ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশির ভাগ সার্বভৌম বন্ডের বিষয়েও আন্তর্জাতিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে, যেগুলো এখন খেলাপি শ্রেণিভুক্ত রয়েছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঘাটতিতে কয়েক মাস ধরে ধুঁকছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিকে জরুরি ঋণসহায়তা দেয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বুধবার কলম্বোতে ছিল।
তারা শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে। এদিন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও প্রতিনিধিদলের সদস্যরা একটি প্রাথমিক (স্টাফ লেভেল) চুক্তিতে উপনীত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।
আর্থিক সংকট কাটাতে পাকিস্তানকেও ১১৭ কোটি ডলার ঋণ দেবে আইএমএফ। ২০১৯-এর প্যাকেজের রূপায়ণ বন্ধ রেখেছিল তারা। শর্ত মানার পর পাকিস্তানকে অর্থ দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ।
পাকিস্তানও রয়েছে তীব্র বিপর্যয়ের মুখে। একদিকে তীব্র আর্থিক সংকট, অন্যদিকে ভয়ংকর বন্যায় বিপর্যস্ত দেশটি। এই অবস্থায় আইএমএফের কাছ থেকে সুখবর শুনল তারা।
২০১৯ সালে আর্থিক সংকট কাটানোর জন্য পাকিস্তানকে ঋণ দেবে বলে ঠিক করেছিল আইএমএফ। কিন্তু তৎকালীন ইমরান খান সরকার আইএমএফের শর্ত মেনে পেট্রল-ডিজেলের ওপর থেকে ভর্তুকি কমাতে রাজি হয়নি। ফলে আইএমএফও অর্থ দেয়নি।
পাকিস্তানের ঋণ প্রসঙ্গে আইএমএফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সম্প্রতি পেট্রল-ডিজেলের দাম অনেকটা বাড়িয়েছেন। বিদ্যুতের মাশুলও বেড়েছে। তিনি ইমরান খানের দেয়া ভর্তুকি বন্ধ করে দিয়েছেন। আইএমএফের চাহিদা মেনেই তিনি সরকারি খরচ কমিয়েছেন এবং রাজস্ব বৃদ্ধির রাস্তায় চলেছেন। আইএমএফও এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
আইএমএফের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আন্তোয়েনেট সায়েহ বলেন, ‘বিরূপ বৈদেশিক ঘটনাবলির প্রভাব পাকিস্তানের অর্থনীতির ওপর পড়েছে। দেশের ভিতরে তারা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, আর ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবও তাদের ওপর পড়ছে। এই অবস্থায় ঠিক নীতি নিয়ে চলা জরুরি।’