সারা দেশে বৃহস্পতিবার শুরু হতে যাওয়া সরকারের ওএমএস কার্যক্রমের মাধ্যমে মাসে দুই বারে সর্বোচ্চ ১০ কেজি চাল কিনতে পারবেন টিসিবি কার্ডধারীরা। সম্প্রতি জারি করা, মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওএমএস ও টিসিবির কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি চলবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেনের সই করা ওই পরিপত্রে জানানো হয়েছে।
ওএমএস কর্মসূচির মাধ্যমে প্রতি কেজি চাল বিক্রি হবে ৩০ টাকায় আর টিসিবি কার্ডধারীরা এ চাল সংগ্রহ করতে পারবেন ১৫ টাকায়।
পরিপত্রে বলা হয়, পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমের (পিএফডিএস) আওতায় খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রি একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি।
খাদ্যশস্যের বাজার মূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ করে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে মূল্য সহায়তা দেয়া এবং বাজার দর স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
কর্মসূচির জন্য বেশ কয়েকটি নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে পরিপত্রে। এগুলো হলো, টিসিবি'র কার্ডধারীরা পাক্ষিক ৫ কেজি করে মাসে ২ বার মোট ১০ কেজি চাল ক্রয় করতে পারবেন।
টিসিবির কার্ডধারীদেরকে চাল দেয়ার পর ওএমএস ডিলাররা টিসিবি'র কার্ডের পেছনে নমুনা সিল বা পাঞ্চিং মেশিন দিয়ে কার্ডের ওপরে প্রতিবারের জন্য ১টি ছিদ্র করে দেবেন।
ওএমএস কার্যক্রমে চাল বিক্রয় করার জন্য ক্রেতাদের দুটি আলাদা লাইন করতে হবে। একটি লাইনে সাধারণ ক্রেতা এবং অপর লাইনে টিসিবি কার্ডধারীরা দাঁড়াবেন।
টিসিবি'র কার্ডধারীদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাল দিতে হবে। ডিলারের কাছে সংশ্লিষ্ট দিনের চালের বরাদ্দ শেষ হয়ে গেলে পরবর্তীতে আসার অনুরোধ জানাতে হবে।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন থেকে ডিলারের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক তদারকি কর্মকর্তা বা ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করতে হবে। তদারকি কর্মকর্তা বা ট্যাগ অফিসার বিক্রয় স্থলে দিনের বিক্রয়যোগ্য খাদ্যশস্যের বস্তা ও পরিমাণ সম্পর্কে সন্তুষ্ট হয়ে বিক্রয় আদেশ দেবেন।
জনপ্রতি নির্ধারিত পরিমাণ চাল বা আটা বিক্রয় ও বিক্রিত খাদশস্যের মাস্টার রোল ডিলাররা তৈরি করে সংরক্ষণ করবেন।
ওএমএস বিক্রয় কেন্দ্র সহজে চিহ্নিতকরণের জন্য দোকান বা ট্রাকে প্যানাফক্স (লাল রং) ব্যানার (৬ ফুট- ৩ ফুট) ঝুলাতে হবে এবং প্যানাফ্লেক্স (লাল রং) ব্যানারে মাথাপিছু সর্বোচ্চ কতকেজি চাল বা আটা দেয়া হবে এবং প্রতিকেজির মূল্য কত টাকা তা উল্লেখ থাকতে হবে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা ও এমএস কমিটির সভা আয়োজনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং সভা আয়োজনের পর লোকাল ক্যাবল টেলিভিশনের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কর্মসূচির শুরুর প্রথম দিন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা এক বা একাধিক কেন্দ্রে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবেন।
প্রথম পর্যায়ে প্রচারের জন্য বিক্রয় কেন্দ্রের কমান্ড এরিয়াতে ঢোল শহরত ও মাইকিং এর ব্যবস্থা করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ জানতে পারে। আঞ্চলিক বা জেলা বা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।
প্রতিদিন বিকাল ৫টার মধ্যে সকল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকরা ই-মেইলের মাধ্যমে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় সম্পর্কিত তথ্য খাদ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ এবং খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরের দিন সকাল ১০টার মধ্যে সকল তথ্য সমন্বিত করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে আবশ্যিকভাবে প্রেরণ নিশ্চিত করবেন। খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় (ওএমএস) নীতিমালা, ২০১৫ এর সকল নির্দেশাবলি নিয়ামাবলি যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।
সচিবালয়ে গত ১৪ আগস্ট খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংবাদিকদের ১ সেপ্টেম্বর থেকে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু করার কথা জানান। তিনি আশা করছেন, এর ফলে বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে আসবে।
৫ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং পেট্রলের দাম ৪৪ ও অকটেনের দাম ৪৬ টাকা বাড়ায় সরকার।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় ডিজেলে লিটারে ৪২ টাকার বেশি লোকসান হতো। দাম বাড়ানোর পর এখনও ৮ টাকার বেশি লোকসান হবে।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। সেইসঙ্গে অস্থির চালের বাজার। তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়াকে অজুহাত হিসেবে দাড় করাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।