মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশে কোনো রকম কর চায় না পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। তারা মনে করে, এই উদ্যোগ এই খাতের বিকাশে সমস্যা তৈরি করবে। এ জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরকে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, তারা মনে করছেন এনবিআর যে পরিকল্পনা করছে, সেটি তাদের বিধানের সঙ্গেই সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক চিঠি দেব আমরা। এটা নিয়ে কাজ করছি আমরা। …চিঠি লিখে জানাব, এটা এনবিআরের এসআরও বা বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
সংবিধিবদ্ধ নিয়ম এবং নির্দেশনা (স্ট্যাচুটোরি রুলস অ্যান্ড অর্ডার-এসআরও) অনুযায়ী, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আয় করমুক্ত। ফান্ডের লভ্যাংশের ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কোনো কর দিতে হয় না।
তবে একটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্মের পরামর্শে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর কর্তনের (ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স-টিডিএস) পরিকল্পনা করছে এনবিআর।
তবে বিএসইসি কমিশনার মিজানুর বলেছেন, ‘২০১১ সাল থেকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশ করমুক্ত। এখন আবার কর আরোপ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানি যখন ডিভিডেন্ড দেবে, তখন ট্যাক্স ডিডাক্ট করবে। ট্যাক্স ডিডাক্ট করা মানেই তো ট্যাক্স হয়ে গেল। মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ট্যাক্স এক্সেম্পট হওয়ায় আবার যদি টিডিএস করে তাহলে এই এটাকে আবার রিফান্ড করতে হবে। তাহলে এই জটিলতায় যাওয়ার মানে কী?’
বিএসইসির কোনো খাতে বিনিয়োগের পরামর্শ দেয়ার কথা না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সংস্থাটির চেয়ারম্যান শিবলী-রুবাইয়াত-উল ইসলাম মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে ক্রমাগত বিনিয়োগকারীদের উৎসাহী করে আসছেন এ কারণে যে, এই ফান্ডগুলো যারা পরিচালনা করে, তাদের মধ্যে বিনিয়োগ শিক্ষা ভালো। ফলে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি কম হয়।
ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী, যাদের মধ্যে পর্যাপ্ত শিক্ষা নেই, তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে ভুল করে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি।
গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের হিসাব পর্যালোচনা করে ঘোষণা করা মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লভ্যাংশের বিষয়টি বিবেচনায় নিলেই এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়।
২০২১ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত এক বছরে পুঁজিবাজার ছিল টালমাটাল। এই এক বছরে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ২.৫২ শতাংশ। কিন্তু মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো মুনাফা করেছে এর চেয়ে অনেক বেশি। আর ফান্ডগুলোর ইউনিট দরের তুলনায় লভ্যাংশের হার যেকোনো সঞ্চয়ী হিসেবে মুনাফার হারের তুলনায় অনেক বেশি।
তবে এসব ফান্ডে বিনিয়োগকারীর অনাগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট। সম্পদ মূল্যের তুলনায় অর্ধেক বা তার চেয়ে কমমূল্যে একেকটি ইউনিট লেনদেন হচ্ছে পুঁজিবাজারে।
বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান মনে করেন এনবিআর করারোপ করলে এই খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা এগুলোকে ইম্প্রুভ করতে চাই। ট্যাক্স এক্সেম্পট স্ট্যাটাসটা ইমপর্টেন্ট।’
তিনি বলেন, ‘এখন ভালো ভালো মিউচ্যুয়াল ফান্ড রয়েছে। যেগুলো বিনিয়োগকারীদের যথেষ্ট স্ট্যাবিলিটি দিচ্ছে। মানে ভালো রিটার্ন দিচ্ছে এবং ক্যাপিটাল মেইনটেন্যান্স করছে। ২০২০ সালের আগে থেকে কিছু খারাপ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছিল, সেগুলো রিকভার করছে।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমানও এই খাতে কোনো ধরনের কর চান না।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিউচ্যুয়াল ফান্ড ট্যাক্স এক্সেম্পট রয়েছে, সেটার একটি পজিটিভ দিক। যদি টিডিএস করা হয় তাহলে নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট পড়বে, যা দেশে এই ইন্ডাস্ট্রির বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
‘এনবিআরের এসআরও অনুযায়ী মিউচ্যুয়াল ফান্ড করমুক্ত হলে আইন পরিবর্তন না করে সেটা করা সমীচীন নয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ এ মোমেন কিছু জানাতে পারেননি। তার পরামর্শে সংস্থাটির ট্যাক্স পলিসি বিভাগের সদস্য (আয়কর নীতি) শামসুদ্দিন আহমদও কিছু বলেননি।
বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপিতে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের অবদান কেবল ০.৫৩ শতাংশ, যা উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম।
জিডিপির অনুপাতে ভারতে এই হার ১১ শতাংশ, মালয়েশিয়া ৩২ শতাংশ, পাকিস্তানে ১ দশমিক ৫১ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ৭৩ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ১১৮ শতাংশ।