ডিজেলের ওপর সমুদয় আগাম কর অব্যাহতি এবং আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করার পরদিন ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের দাম লিটারে কমানো হয়েছে ৫ টাকা করে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সোমবার রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- সোমবার রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতরে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯, অকটেন ১৩০ এবং পেট্রল ১২৫ টাকা লিটার দরে বিক্রি হবে।
সোমবার দুপুরে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে নতুন দর চূড়ান্ত করেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ।
এর আগে দুপুরে বিপিসি চেয়ারম্যান তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, জ্বালানির দাম সমন্বয়ের কথা ভাবছে সরকার। এর পরই তিনি সচিবালয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকের পর নসরুল হামিদ সাংবাদিকদের জানান, দু-এক দিনের মধ্যেই দর সমন্বয় করা হবে।
রাতে প্রজ্ঞাপন জারির পর প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছুটা কর কমানোয় জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে দেশে আবারও দর সমন্বয় করা হবে।
প্লাটস অনুসারে, বিশ্ববাজারে ২৬ আগস্ট ডিজেলের ব্যারেল প্রতি দাম ছিল ১৪৭ ডলার ৬২ সেন্ট। সে অনুযায়ী প্রতি লিটার ডিজেলের দাম পড়ে ১২৮ টাকা ৬১ পয়সা। অর্থাৎ ১০৯ টাকা দরে ডিজেল বিক্রি করলে প্রতি লিটারে বিপিসির লোকসান হবে ১৯ টাকা ৬১ পয়সা।
বিগত ছয় মাসে (২২ ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত) জ্বালানি তেল বিক্রিতে ৮ হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে বিপিসি।
গত ৫ আগস্ট বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে এবং জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমাতে সরকার সব ধরনের জ্বালানির দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সে সময় ডিজেল ও কেরোসিনে বাড়ানো হয় লিটারে ৩৪ টাকা। অকটেনে ৪৬ এবং পেট্রলে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়। এই হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন-পেট্রলে বাড়ে ৫১ শতাংশ।
এরপর বিশ্ববাজারে কমতে থাকে জ্বালানির দাম। তখন থেকে সরকার বলে আসছিল, বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশেও নতুন করে দর সমন্বয় করা হবে। অবশ্য এরই মধ্যে আবারও বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়।
রোববার জ্বালানি তেলে আগাম কর ৫ শতাংশ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। এর সুবাদে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিপিসি ও অন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হ্রাসকৃত শুল্ক হারে ডিজেল আমদানি করতে পারবে।
এতদিন ডিজেল আমদানিতে ৩৪ শতাংশ শুল্ক ছিল। তা এখন কমে ২৯ শতাংশ হয়েছে।
বিপিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে সাত বছরে সংস্থাটি শুল্ক, কর ও লভ্যাংশ বাবদ সরকারি কোষাগারে ৫৬ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। আর ২০২০ ও ২০২১ অর্থবছরে সরকারের কোষাগারে ৯ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বিপিসি।
অবশ্য বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ২০১৪ সাল থেকে সাত বছর মুনাফা করলেও তার আগের ১৪ বছর টানা লোকসান করেছে বিপিসি। মুনাফার টাকায় সেই বিপুল লোকসানের পুরোটা সমন্বয় করা যায়নি।