শুল্ক কমানোর পর জ্বালানি তেলের দাম দ্রুত সমন্বয়ের আভাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। দু-এক দিনের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে তিনি এটাও বলে দিয়েছেন, সমন্বয় মানেই যে দাম কমছে, এমনটি নয়। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, দাম বাড়ানোর সময় বিশ্ববাজারে যে দর ছিল, এখন তার চেয়ে ব্যারেলপ্রতি ২০ ডলার বেড়ে গেছে।
প্রতিমন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী সে সময় ডিজেল আমদানি করা হতো ১৩০ ডলার হিসাবে। এখন তা ১৫০, যেটিকে অপ্রত্যাশিত বলছেন তিনি।
ডিজেলের আগাম কর ৫ শতাংশ প্রত্যাহার এবং আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ নির্ধারণের পরদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি তেল আমদানিতে করের ব্যাপারে আমাদের কিছু সুবিধা দেয়া হয়েছে। সেই সুবিধার কারণে আমরা হয়তো চিন্তা করছি যে তেলের দাম হয়তো আমরা সমন্বয় করতে পারব। সেটার হিসাবটা এখনও যাচাই-বাছাই চলছে।
‘আমরা আশা করছি, এখানে হয়তো একটা পরিবর্তন আসবে। সরকার যেহেতু শুল্ক ছাড় দিয়েছে, সেটা হয়তো কিছুটা সমন্বয় হবে।’
সমন্বয় বলতে কি দাম কমবে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো কখনই কমবেশির কথা বলি না। আমি সমন্বয় করতে বলেছি। আমরা চাচ্ছি, ট্যাক্স যে ৫ শতাংশ কমল, সেটার কতটুকু প্রভাব পড়বে। এটা আমদানির ক্ষেত্রে কমল কিন্তু খুচরা পর্যায়ে এটা কতটা প্রভাব ফেলবে সেটা তো আমাকে দেখতে হবে।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ছবি: নিউজবাংলা
‘আমরা তো চাই সমন্বয়টা যাতে বড় আকারে করতে পারি। গিয়ে দেখলাম ওরকমভাবে হলো না, তখনও তো হিসাবের একটা বিষয় আছে। এদিকে তেলের দামও প্রচণ্ডভাবে বেড়ে গেছে, এটা আমরা আশাই করিনি। আমরা মনে করেছিলাম ট্রেন্ডটা হয়তো নিচের দিকে নামবে। এখন ১৫০-এর ঊর্ধ্বে চলে গেছে, যেটা আগে ১৩০ ছিল। এখনও ভয় পাচ্ছি আরও নাকি বেড়ে যায়। এগুলোর বিষয় আছে।
‘এই অবস্থায় আমরা দাম কতটুকু সমন্বয় করতে পারব… কারণ, এখানে ভর্তুকির বড় একটা অংশ আবার যোগ হবে।
‘যখন ডিজেল ১১৪ টাকা ছিল, তখন ৮ টাকার ওপরে ভর্তুকি ছিল, এখন হয়তো সেই জায়গাটা আরও বাড়বে। তারপরও এটা কমাতে কতটুকু সমন্বয় হবে- এখনও আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। হয়তো আজকালকের মধ্যে আমরা একটা সিদ্ধান্তে যাব। এই এতটুকুই বলতে পারি।’
বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির দায় কমাতে গত ৫ আগস্ট ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা এবং অকটেন ও পেট্রলের দাম যথাক্রমে ৪৪ ও ৪৬ টাকা বাড়ানোর পর যে সমালোচনা ওঠে, তখন এই খাতে উচ্চ করহারের বিষয়টি প্রকাশ পায়।
ফার্নেস অয়েল, জেট ফুয়েল, ডিজেল ও অকটেনের আমদানির ওপর কাস্টমস শুল্ক ও অন্যান্য কর বাবদ রাজস্ব কর্তৃপক্ষটি প্রায় ৩৪ শতাংশ কর আদায় করে।
এর মধ্যে কাস্টমস শুল্ক হলো ১০ শতাংশ, ভ্যাট বা মূসক ১৫ শতাংশ, অগ্রিম কর ২ শতাংশ এবং অগ্রিম আয়কর ২ শতাংশ। এখন ১১৪ টাকার প্রতি লিটার ডিজেল থেকে ৩৬ টাকা কর আদায় করছে সরকার।
এই সিদ্ধান্তের পরের সপ্তাহেই জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম কমানোর প্রস্তাবনা তৈরি করতে এরই মধ্যে বিপিসি ও পেট্রোবাংলাকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জ্বালানি বিভাগের দেয়া এই নির্দেশনায় আমদানি খাতে ভ্যাট ও ট্যাক্স কতটা কমিয়ে কীভাবে তা জনগণের সহ্যসীমায় রাখা যায়, তার বিস্তারিত তুলে ধরতে বলা হয়েছে।’
রোববার রাতে এনবিআর জ্বালানি তেলের শুল্ক কমানোর আদেশ জারি করে।
যে দাম সমন্বয়ের কথা বলছেন, সেটি কবে নাগাদ হবে- জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো আশা করি কাল-পরশুর মধ্যে… এটা কতটুকু যেতে পারি সেটার একটা ব্যবস্থা নেব আরকি। মাঠ পর্যায়ে সমন্বয়ের সুফল পৌঁছাতে আরেকটু সময় লাগবে বলে আমার মনে হয়।’