টানা ছয় দিন উত্থানের পর এক দিনের বিশ্রাম শেষে আবার পর পর তিন দিনের উত্থান দেখল পুঁজিবাজার।
গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ৭৪ পয়েন্টের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস রোববার এক পর্যায়ে সূচক এর চেয়ে বেশি বেড়ে গিয়েও পরে কমে ৪৬ পয়েন্ট। দ্বিতীয় কর্মদিবস সোমবার এক পর্যায়ে সূচক কিছুটা কমে গেলেও শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক প্রবণতায় শেষ হয় লেনদেন।
এই তিন দিনে বেড়েছে ১২ট পয়েন্ট। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাধারণ সূচকের অবস্থান একন ৬ হাজার ৪০৭ পয়েন্ট, যা গত ১৬ জুনের পর সর্বোচ্চ। সেদিন সূচক ছিল ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্ট।
দিন শেষে ৬ পয়েন্ট সূচক বাড়লেও লেনদেন অনেকটাই কমেছে।
আগের দিন চলতি বছর প্রথম বছরের মতো দুই হাজার কোটি টাকার বেশি শেয়ার হাতবদল হয়েছিল। লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১০৫ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
সেখোন থেকে লেনদেন আগের দিনের তুলনায় ৩৬০ কোটি টাকা কমেছে। হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ৭৪৪ কোটি ৮৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
গত ১৪ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত টানা ছয় কর্মদিবসে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ে ১৬৭ পয়েন্ট। ২৪ আগস্ট ৩৫ পয়েন্ট দরপতন যে একটি সাধারণ সংশোধন ছিল, সেটি বোঝা যায় তার পর দিনই। সেদিন ৭৪ পয়েন্ট উত্থানের পাশাপাশি চলতি বছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়।
রোববার সূচক এর চেয়ে কম বাড়লেও লেনদেন আরও উচ্চতায় পৌঁছে। গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দেখা যায় উচ্ছ্বাস। এতে স্পষ্ট হয়ে উঠে দীর্ঘ সংশোধন আর অর্থনীতি নিয়ে আতঙ্ক কাটিয়ে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠছেন।
সোমবার লেনদেন শুরু হয় সূচকের লাফ দিয়েই। শুরুতেই বেড়ে যায় ৩৫ পয়েন্ট। তবে এক পর্যায়ে ১৯ পয়েন্ট কমেও যায়। পরে সেখান থেকে আবার বেড়ে গিয়ে আগের দিনের চেয়ে ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে লেনদেন হতে থাকে বেলা ১১ টা ৪ মিনিটে।
শেষ দিকে সূচক কমে যায় কি না এমন পরিস্থিতি তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত ইতিবাচক থেকেই শেষ হয় লেনদেন।
সূচকে পয়েন্ট যোগ হলেও দরবৃদ্ধির চেয়ে দরপতনই বেশি হয়েছে। লেনদেন হওয়া সিকিউরিটিজের মধ্যে ১২৩টি দর বেড়েছে, কমেছে ১৮৮টির এবং ৭১টির লেনদেন হয়েছে আগের দরেই।
লেনদেনের বিষয়ে ট্রেজার সিকিউরিটিজের চিফ অপারেটিং অফিসার মোস্তফা মাহবুব উল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাইরে থেকে কিছু ফান্ড আসার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ মুভমেন্টের কারণে বাজারে একটা লিকিউডিটি তৈরি হয়েছে।
‘এখন দেখা যাচ্ছে, ফ্লোর প্রাইজ থেকে বেশ কিছুটা ওপরে রয়েছে শেয়ারের দাম। ফলে এখানে একটা প্রফিট হয়েছে। যার কারণে অনেকদিন থেকে যাদের ফান্ড আটকে ছিল সেটা রিলিজ হয়েছে। এতে করে যিনি ফার্মাসিউটিক্যালসে ছিলেন সেটা বিক্রি করে টেক্সটাইলে যাচ্ছেন। আবার যারা ৫, ৬ মাস বা একটু বেশি সময় চিন্তা করে বিনিয়োগ করছেন তারা হয়তো অনেকেই ব্যাংকের দিকে যাচ্ছেন। এভাবে বাজারে একটা মুভমেন্ট হচ্ছে। লেনদেনের পরিমাণ তা বলে দিচ্ছে।’
রাজা সেই বস্ত্র খাত
গত এক মাসের বেশি সময় ধরেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। মাঝে এক দুই দিন ছাড়া বেশিরভাগ দিনই বস্ত্র খাতেই বেশিরভাগ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
আগের দিন এই খাতে লেনদেন তিন শ কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। সেখান থেকে অবশ্য কিছুটা কমেছে। হাতবদল হয়েছে ২৯৪ কোটি ৬০ লাখর শেয়ার।
সবচেয়ে বেশি ২৮টি বা ৪৭ শতাংশের বেশি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। ১৭টির অপরিবর্তিত এবং ১৪টির লেনদেন হয়েছে দাম কমে।
তবে শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে জ্বালানি খাতে। এ খাতে ১২টি বা ৫২ শতাংশের বেশি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে।
২০০ কোটি ছুঁইছুঁই লেনদেন হয়েছে বিবিধ খাতে।
৮টির দর বেড়েছে এবং ৩টি করে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে অপরিবর্তিত ও কিছুটা কমে।
প্রকৌশল খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
দরবৃদ্ধির চেয়ে দরপতন বেশি খাতটিতে। ১৭টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২টির অপরিবর্তিত ও ২৩টির লেনদেন হয়েছে দর কমে।
দেড় শ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ওষুধ ও রসায়ন খাতে। ৯টি কোম্পানির দরবৃদ্ধির বিপরীতে কমেছে ৫টির এবং ১৭টির অপরিবর্তিত রয়েছে।
এ ছাড়া ১০০ কোটি টাকা লেনদেন ছাড়িয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, খাদ্য এবং জ্বালানি খাতে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ১টি ছাড়া বাকি ২১টি কোম্পানি দরপতন হয়েছে।
আর খাদ্যে ৪৭ ও জ্বালানি খাতে ৫২ শতাংশের বেশি কোম্পানির দরবৃদ্ধি হয়েছে।
সূচক বাড়াল যারা
সবচেয়ে বেশি ৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে গ্রামীণফোন। শেয়ারটির ১ দশমিক ৫২ শতাংশ দর বেড়েছে।
বিকন ফার্মার দর ১ দশমিক ৯১ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ১ দশমিক ২১ পয়েন্ট।
অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ সূচকে যোগ করেছে ১ দশমিক ১২ পয়েন্ট। কোম্পানির দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৫১ শতাংশ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, পূবালী ব্যাংক, পাওয়ার গ্রিড, বেক্সিমকো লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবলনও আইএফআইসি ব্যাংক সূচকে পয়েন্ট যোগ করেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক বাড়িয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৯৫ পয়েন্ট।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ০.৭৫ পয়েন্ট সূচক কমেছে লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশের কারণে। শেয়ারটির দরপতন হয়েছে ১.২২ শতাংশ।
এর পরেই ০.৭৫ পয়েন্ট সূচক কমেছে স্কয়ার ফার্মার দরপতনে। কোম্পানিটির দর কমেছে শূন্য দশমিক ৫২ শতাংশ।
আইসিবির দর ১.২৩ শতাংশ কমার কারণে সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৬৯ পয়েন্ট।
এছাড়া ওরিয়ন ফার্মা, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, আইডিএলসি, লঙ্কাবাংলা, তিতাস গ্যাস, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দরপতনে সূচক কমেছে।
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানি সূচক কমিয়েছে ৪ দশমিক ৯৩ পয়েন্ট।
দরবৃদ্ধির শীর্ষ ১০
দর বাড়ার শীর্ষে রয়েছে জিবিবি পাওয়ার লিমিটেড। শেয়ারটির দর ২ টাকা বা ৯.৭১ শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ ২২ টাকা ৬০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
২ হাজার ৪৪৯ বারে কোম্পানির ৫৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। আজ কোম্পানিটির দর বেড়েছে ২ টাকা বা ৯.৪৮ শতাংশ। শেয়ারটি সর্বশেষ ২৩ টাকা ১০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
অ্যাপেক্স ফুডস লিমিটেড তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে। কোম্পানিটির ৮.৭৪ শতাংশ বেড়েছে। ক্লোজিং প্রাইস দাঁড়িয়েছে ২৩৩ টাকা ৮০ পয়সা।
এ ছাড়া তালিকায় নাম লিখিয়েছে- আমান ফিড, ওরিয়ন ইনফিউশন, ন্যাশনাল টি, ইয়াকিন পলিমার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, শাহজিবাজার পাওয়ার কোম্পানি এবং গোল্ডেনসন।
দরপতনের শীর্ষ ১০
দরপতনের শীর্ষে রয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড। শেয়ারটির দর ৩ টাকা ৭০ পয়সা বা ৬.৩৭ শতাংশ কমেছে।
সোমবার কোম্পানিটি সর্বশেষ ৫৪ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। এদিন কোম্পানিটি ১ হাজার ১০৮ বারে ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৬২৫টি শেয়ার লেনদেন করেছে। যার বাজার মূল্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
উত্তরা ফাইন্যান্স এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দর ১ টাকা ৯০ পয়সা বা ৪.৮২ শতাংশ কমে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়।
তৃতীয় সর্বোচ্চ দরপতন হয়েছে গ্লোবাল হেভি কেমিক্যালসের। ৪.৪০ শতাংশ দর কমে দর দাঁড়িয়েছে ৩৬ টাকা ৯০ পয়সা।
এর পরেই ছিল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স। ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ৪.২৭ শতাংশ কমে শেয়ারটি ৫৮ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়।
তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে- হাক্কানি পাল্প, ওরিয়ন ফার্মা, ওয়াটা কেমিক্যাল, বে-লিজিং, প্রিমিয়ার লিজিং ও ফনিক্স ফাইন্যান্স।