দেশের ৯৬ শতাংশ শ্রমিক প্রশিক্ষিত নন বলে উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের শ্রমবাজার সমীক্ষায়।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে রোববার সমীক্ষা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এতে বলা হয়, শ্রমিকরা প্রশিক্ষিত নন বলে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের উৎপাদনশীলতা সবচেয়ে কম।
পাট, ওষুধ, প্লাস্টিকসহ ১৫টি শিল্প খাতের ওপর সমীক্ষাটি চালায় বিআইডিএস।
অনুষ্ঠানে সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘আগামী ১০ বছরে ওইসব খাতে কী পরিমাণ শ্রমিক দরকার হবে এবং সে অনুযায়ী সরকারকে কী ধরনের নীতি-সহায়তা নিতে হবে, সেই উদ্দেশ্যে সমীক্ষা করা হয়।’
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সরকারি, বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। এ উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো ড. কাজী ইকবালের নেতৃত্বে একদল তরুণ গবেষক সমীক্ষাটি চালান। অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন কাজী ইকবাল।
আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে দক্ষতার নামে যেসব কার্যক্রম নেয়া হয়, তা অনেকটাই মরুভূমিতে পানি দেয়ার মতো। এতে কোনো ফল পাওয়া যায় না।
তাদের ভাষ্য, প্রশিক্ষণের অবশ্যই দরকার আছে, তবে তার আগে কাজের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এর সুফল মিলবে না। মানসম্মত শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সুশাসন দরকার আছে, তবে আগে দরকার হচ্ছে উন্নয়ন। গ্রামের মানুষ পানি চায়, বিদ্যুৎ চায়, সার চায়। সুশাসন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই; ধারণাও নেই, তবে তারা নিরাপত্তা চায়।
‘আমাদের দুটোরই প্রয়োজন আছে, তবে সরকারের অগ্রাধিকার হচ্ছে উন্নয়ন।’
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ওজমা চৌধুরী জানান, তাদের গ্রুপের অধীনে প্রায় দেড় লাখ লোক সরাসরি কাজ করে।
তিনি বলেন, ‘তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। তা না হলে তাদের সম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা যাবে না।’
ওয়ালটন গ্রুপের তাপস কুমার মজুমদার বলেন, ‘বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই।’
দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষার গুণগত মানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা।
বেসরকারি খাতের আরেক প্রতিনিধি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আগে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। পরে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। বাংলাদেশকে একই প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
নিজস্ব ভাষার পাশাপাশি অন্য একটি ভাষা শিক্ষার পরামর্শ দেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান নাসরিন আফরোজ জানান, শিগগিরই জাতীয় উন্নয়ন নীতি-২০২২-এর গেজেট প্রকাশ করা হবে। এ বিষয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
বিআইডিসের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্মাণ খাতে সবচেয়ে অদক্ষ শ্রমিক রয়েছে। এ খাতে অদক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা ৯৮ শতাংশ।
লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বা হালকা প্রকৌশল খাতে ৭২ শতাংশ শ্রমিকের কোনো শিক্ষা নেই।
কৃষি প্রক্রিয়া শিল্পে যোগ্য শ্রমিকের যথেষ্ট অভাব আছে বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়।
পেশাজীবী, মেশিন অপারেটর ও আইটি খাতে দক্ষ শ্রমিকের সবচেয়ে বেশি চাহিদা। এ ছাড়া নার্সিংয়ের চাহিদা বাড়ছে বলে সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়।
বিদেশগামী ৪৭ শতাংশ শ্রমিকই অদক্ষ বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিলেও ছোট এবং অতি ক্ষুদ্র শিল্পগুলোতে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা নেই। অথচ এসব খাতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে।
প্রবৃদ্ধির উচ্চধারা বজায় রাখতে ছোট ও অতি ক্ষুদ্র শিল্পে প্রশিক্ষণ দেয়া জরুরি বলে মত দেন তিনি।